খুলনা | মঙ্গলবার | ১৮ নভেম্বর ২০২৫ | ৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

গাজার জন্য ত্রাণবাহী ফ্লোটিলায় ইসরাইলি পদক্ষেপ

বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া ও স্পেনসহ বিশ্বজুড়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

খবর ডেস্ক |
০১:১৮ এ.এম | ০৩ অক্টোবর ২০২৫


গাজামুখী সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরাইলি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। আরও নিন্দা জানিয়েছে বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, তুরস্ক, ব্রাজিল, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা সহ বিভিন্ন দেশ। বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন ধরনের ছিল, কেউ সরাসরি নিন্দা জানিয়েছেন; আবার কেউ আটক নাগরিকদের জন্য কনস্যুলার পরিষেবা নিশ্চিত করার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন।
গাজা অভিমুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলাকে বাধা ও অধিকারকর্মীদের ইসরায়েলের আটকের ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছে আল-জাজিরা।
বৃটিশ : দেশটির সরকার জানিয়েছে, ইসরাইলের ফ্লোটিলা আটকানো নিয়ে তারা ‘অত্যন্ত উদ্বিগ্ন’। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ইসরাইলি কর্তৃপক্ষকে স্পষ্ট করেছে যে, পরিস্থিতির নিরাপদ সমাধান করতে হবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা সুমুদ ফ্লোটিলার পরিস্থিতি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। আমরা এতে জড়িত একাধিক বৃটিশ নাগরিকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। ফ্লোটিলায় বহন করা ত্রাণ অবশ্যই মানবিক সংস্থাগুলোর হাতে তুলে দিতে হবে, যাতে নিরাপদে তা গাজায় পৌঁছানো যায়। গাজায় ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট সমাধানের দায়িত্ব ইসরাইলি সরকারের। তারা আরও জানায়, এর মানে হলো অবিলম্বে ও শর্তহীনভাবে ত্রাণ সহায়তার ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়া, যাতে জাতিসংঘ ও এনজিওগুলো খাদ্য, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করতে পারে।
অস্ট্রেলিয়া : গাজাগামী ফ্লোটিলায় ইসরাইলি সেনাদের হাতে কর্মী আটক হওয়ার খবর তারা জানে এবং প্রয়োজনে তাদের নাগরিকদের জন্য কনস্যুলার সহায়তা দিতে প্রস্তুত। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়া সব পক্ষকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে, এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও মানবিক আচরণ নিশ্চিত করতে আহŸান জানাচ্ছে।
স্পেন : গাজাগামী ফ্লোটিলা আটকানোর ঘটনায় মাদ্রিদে ইসরাইলের সর্বোচ্চ কূটনৈতিক প্রতিনিধিকে তলব করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে মানুয়েল আলবারেস বলেন, আমি এখানকার ইসরাইলি চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্সকে তলব করেছি। তিনি জানান, ফ্লোটিলায় ৬৫ জন স্পেনীয় নাগরিক আছেন। উলে­খ্য, গত বছর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার পর ইসরাইল মাদ্রিদ থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত সরিয়ে নিয়েছিল।
তুরস্ক : দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের এই হস্তক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করেছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে ‘গণহত্যা চালানো নেতানিয়াহু সরকারের ফ্যাসিবাদী ও সামরিকতাবাদী নীতি, যা গাজাকে দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দিয়েছে, যা শুধু ফিলিস্তিনিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়’।
ব্রাজিল : গাজাগামী ত্রাণবহনকারী ফ্লোটিলা আটকানোর ঘটনায় তারা গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করছে দেশটি। ফ্লোটিলায় কয়েকজন ব্রাজিলীয় নাগরিক আছেন। তার মধ্যে সংসদ সদস্য লুইজিয়ানে লিন্সও আছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইলি সরকারের সামরিক পদক্ষেপ মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের শারীরিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তারা আরও জানায়, আটক ব্যক্তিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব এখন ইসরাইলের।
পাকিস্তান : দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ইসরাইলের পদক্ষেপকে ‘নৃশংস আক্রমণ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, আমরা আশা করি বেআইনিভাবে আটক সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়া হবে। তাদের একমাত্র অপরাধ হলো নির্যাতিত ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য ত্রাণ বহন করা।
দক্ষিণ আফ্রিকা : দেশটির অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি ম্যান্ডলা ম্যান্ডেলা এক ভিডিও বার্তায় বলেন, আমরা বৈশ্বিক স¤প্রদায়কে আহŸান জানাচ্ছি, আপনারা আপনাদের সরকারকে চাপ দিন যাতে আমাদের গাজায় নিরাপদে পৌঁছানোর সুযোগ নিশ্চিত হয়। তিনি আরও বলেন, যদি ইসরাইলি বাহিনী তাদের অপহরণ করে, তবে বিশ্বজুড়ে ফ্লোটিলা সমর্থকদের উচিত হবে তাদের সরকারকে চাপ দিয়ে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানানো।
ফিলিস্তিন : ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আক্রমণ ও আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবাধ চলাচলের অধিকার আছে এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী স্বীকৃত তাদের এই চলাচলের স্বাধীনতায় ইসরায়েলের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।’
মালয়েশিয়া : দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম মালয়েশিয়ার নাগরিকদের অবিলম্বে মুক্তির আহŸান জানিয়েছেন। এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলকে জবাবদিহি করার জন্য ‘‘সব বৈধ ও আইনানুগ ব্যবস্থা’’ নেওয়া হবে। ইসরায়েল শুধু ‘‘ফিলিস্তিনি জনগণের মৌলিক অধিকারকে অগ্রাহ্য করছে না; বরং বৈশ্বিক স¤প্রদায়ের বিবেককেও পদদলিত করছে’’।’
কলম্বিয়া : প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো এক্সে ঘোষণা দেন, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর সরকার ইসরায়েলি কূটনীতিকদের বহিষ্কার করছে এবং কলম্বিয়ার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করছে।
গুস্তাভো পেত্রো বলেন, তাঁদের নাগরিকদের প্রত্যাবর্তনের জন্য কলম্বিয়াকে ‘ইসরায়েলি আদালতের মাধ্যমেও সব ধরনের উপযুক্ত দাবি জানাতে হবে’।
ইতালি : দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল তাঁকে আশ্বস্ত করেছে যে নৌবহরের বিরুদ্ধে ‘কোনো সহিংস কর্মকাণ্ড’ চালানো হবে না।
ইতালীয় ইউনিয়নগুলো আলাদাভাবে আজ শুক্রবার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে, যা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা ও গাজার প্রতি তাদের সংহতি প্রদর্শন করবে।
গ্রিস : দেশটি এই সপ্তাহের শুরুতে ইতালির সঙ্গে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে, যেখানে তারা ইসরায়েলের প্রতি ‘গাজামুখী নৌবহরে অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত’ করার আহŸান জানায়।
আয়ারল্যান্ড : আইরিশ প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি হিগিনস বলেন, ‘ইসরায়েল গাজায় অপরিহার্য ত্রাণ পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে। এই মানবিক কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা আমাদের সবার এবং যেসব দেশ থেকে তাঁরা এসেছেন, সেসব দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়।’
বেলজিয়াম : দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাকসিম প্রেভো ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহŸান জানিয়ে বলেছেন, তাঁর প্রথম অগ্রাধিকার হলো বেলজিয়ামের নাগরিকদের অধিকার রক্ষা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দ্রুত দেশে ফেরানো।
ফ্রান্স : ইউরোপ ও পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের প্রতি আহŸান জানিয়েছে যেন নৌবহরে অংশগ্রহণকারী ফরাসি নাগরিকদের কনস্যুলার পরিষেবা দেওয়া হয় এবং ‘কোনো রকম অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্ব ছাড়াই তাঁদের ফ্রান্সে ফিরতে দেওয়া হয়’।
যুক্তরাষ্ট্র : এ সপ্তাহের শুরুতে মার্কিন কংগ্রেসের ২০ জন ডেমোক্র্যাট সদস্য হোয়াইট হাউসকে নৌবহর রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে আহŸান জানান।
জাতিসংঘ : জাতিসংঘ এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রানচেসকা আলবানিজ বলেছেন, এ ঘটনায় পশ্চিমা দেশগুলোর নিষ্ক্রিয়তা স্পষ্ট হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে ফ্রানচেসকা বলেন, ‘ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ভাঙতে প্রাণ বাজি রাখা মানুষদের অপহরণ করছে তারা আর গাজার মানুষ রয়ে গেছে মৃত্যুপুরীতে। পশ্চিমা সরকারগুলোর নীরবতা ও সহযোগিতাই এখানে লজ্জাজনক।’
ইসরায়েল গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটকানোর পর বৃহস্পতিবার ইস্তাম্বুল, এথেন্স, বুয়েনস এইরেস, রোম, বার্লিন ও মাদ্রিদের মতো বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেন ফিলিস্তিনপন্থীরা।
ইসরায়েল গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটকানোর পর বৃহস্পতিবার ইস্তাম্বুল, এথেন্স, বুয়েনস এইরেস, রোম, বার্লিন ও মাদ্রিদের মতো বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেন ফিলিস্তিনপন্থীরা।
গাজাগামী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার গতিরোধ করেছে ইসরায়েল, যাতে ছিল ৪০টির বেশি নৌযান। আটক করা হয়েছে নৌবহরে থাকা শতাধিক অধিকারকর্মীকে।
এঘটনার প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি করেননি বিশ্বনেতারা। একই সঙ্গে দুর্ভিক্ষকবলিত গাজায় ত্রাণবাহী নৌবহরকে পৌঁছতে না দেওয়া এবং অধিকারকর্মীদের ইসরায়েলের আটকের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ইস্তাম্বুল, এথেন্স, বুয়েনস এইরেস, রোম, বার্লিন ও মাদ্রিদের মতো বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেছেন ফিলিস্তিনপন্থীরা। বিক্ষোভ হয়েছে জর্ডান ও তিউনিসিয়াতেও।
৫০০ জনের এই নৌবহরে অন্তত ৪৪টি দেশের প্রতিনিধি ছিলেন, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, স্পেন, মালয়েশিয়া, তুরস্ক ও কলম্বিয়া উলে­খযোগ্য।