খুলনা | মঙ্গলবার | ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

আর্থিক খাতে ভয়াবহ জালিয়াতি সুশাসনের প্রশ্নে কোনো আপস নয়

|
১২:০০ এ.এম | ০৭ অক্টোবর ২০২৫


শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেস্ট হোল্ডিংস (লা মেরিডিয়ান হোটেল) কর্তৃক প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সুশাসনের ওপর এক বিরাট প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ব্যাংক ও শেয়ারবাজার-উভয় খাত থেকে প্রতিষ্ঠানটি বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। বলা বাহুল্য, এটি কেবল একটি কোম্পানির আর্থিক কেলেঙ্কারি নয়, বরং স্বৈরাচার শাসনামলে চামচা পুঁজিবাদ (Cronie Capitalism) এবং অশুভ যোগসাজশের (Unholy Nexus) মাধ্যমে দেশের আর্থিক ভিত্তিকে চরমভাবে গ্রাস করার এক নিকৃষ্ট উদাহরণ।
তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বেস্ট হোল্ডিংসের জালিয়াতির শিকার হয়েছে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, আইসিবি, রূপালী ব্যাংকের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। জালিয়াতির মাধ্যমে একটি লোকসানি কোম্পানিকে কৃত্রিমভাবে লাভজনক দেখিয়ে, জমির ভুয়া দলিল তৈরি করে এবং অতিরিক্ত সম্পদ ও আয় দেখিয়ে এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হলো, এই ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডে দেশের পতিত সরকারের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা, ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং প্রভাবশালী রাজনীতিবিদরা সরাসরি জড়িত ছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কর্মকর্তাদের বড় অঙ্কের সুবিধা গ্রহণের প্রমাণও মিলেছে।
বিএসইসি’র ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে এই সমস্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছিল। বেশ কয়েকজন পরিচালককেও অযোগ্যও ঘোষণার কথা বলা হয়। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এত গুরুতর অপরাধের তথ্য থাকা সত্তে¡ও, রহস্যজনক কারণে ১০ মাস ধরে এই তদন্ত রিপোর্ট আটকে রাখা হয়েছে। কমিশন কর্তৃক কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার এই প্রবণতা আর্থিক অপরাধীদের আরও প্রশ্রয় যে দিচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য। অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আরও কমিয়ে দেবে। একইসঙ্গে, এ ধরনের অপরাধের বিচার না হলে মানুষের আস্থা ফিরে আসবে না।
স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য এই ভয়াবহ জালিয়াতির দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করা আবশ্যক। বিএসইসি’র উচিত অবিলম্বে তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একইসঙ্গে রেস ম্যানেজমেন্টের মতো জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধন বাতিলের পাশাপাশি অভিযুক্ত সকল প্রভাবশালী ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনা। আর্থিক অনিয়মের কারণে, বিএসইসির সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও অর্থ পাচারের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দ্রুত দুদককে নিয়ে একটি স্বাধীন ফরেনসিক অডিট করা। মনে রাখতে হবে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বলতা ও প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশ ভেঙে না দিলে আর্থিক খাতের এই দুষ্টচক্র থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে না। আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।