খুলনা | মঙ্গলবার | ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

ভয়াবহ রূপ নিয়েছে অপরাধ কর্মকান্ড জননিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

|
১২:০৯ এ.এম | ০৮ অক্টোবর ২০২৫


আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। সারা দেশেই বেড়েছে খুন, সন্ত্রাস, ডাকাতি, ছিনতাই, লুটতরাজ, অপহরণ, জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের ঘটনা। বাড়ছে নদী, জলাশয়, ঝোপঝাড় থেকে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধারের সংখ্যা। বেড়েছে ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার ঘটনা। সেই সঙ্গে বেড়েছে চাঁদাবাজির ঘটনা। মব সৃষ্টি করেও চাঁদাবাজি হচ্ছে। ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশুকন্যা থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত। এমন পরিস্থিতিতে দেশজুড়েই সাধারণ মানুষ চরম উৎকণ্ঠায়। উদ্বেগ-আতঙ্ক মানুষের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে। রাত জেগে পাহারা দিয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না।
গতকাল রাজধানীসহ সারা দেশের অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে উঠে আসে শহর-নগরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও দ্রুত বাড়ছে হত্যা, ডাকাতিসহ ভয়ংকর অপরাধ।পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান মতে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসের (জানুয়ারি-আগস্ট) হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে ৫৪০টি মামলা হয়েছে। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে প্রতি মাসে গড়ে মামলা হয়েছিল ৪৪৫টি। আগের বছরের চেয়ে চলতি বছর প্রতি মাসে গড়ে হত্যা, ডাকাতি, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণের জেরে ৯৫টি মামলা বেশি হয়েছে। আর ২০২৩ সালের সঙ্গে তুলনা করলে চলতি বছর প্রতি মাসে গড়ে ১৬০টি মামলা বেশি হয়েছে। ২০২৩ সালে মাসে গড়ে মামলা হয়েছিল ১৩৫টি।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মানুষ আশা করেছিল, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। হত্যা, সন্ত্রাস, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও চাঁদাবাজি-এসব কমবে। কিন্তু মানুষ হতাশ হচ্ছে, পরিস্থিতি ভালো হওয়ার বদলে দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ নিজেই স্বীকার করেছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর দেশে চাঁদাবাজি বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি এবং রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ছাড়া, রাজনৈতিক সরকার ছাড়া চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) গত সেপ্টেম্বর মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছুতেই দেশে থামছে না মব সন্ত্রাস। গত মাসেও দেশে গণপিটুনিতে আরো ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছে। আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে এসে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বেড়েছে। এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে খাল-বিল, ঝোপঝাড় থেকে ৫২ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যার শিকার হয়েছেন ৮৩ নারী, যা আগের মাসের চেয়ে আটজন বেশি। গত মাসে ৫৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, বেকারত্ব, মাদকাসক্তি ও সামাজিক বৈষম্যের কারণে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। দেশে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, কর্মসংস্থান বাড়ছে না, চালু কারখানাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে বেকারত্ব হু হু করে বাড়ছে। প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, এক বছরে লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়েছেন। এর ৫ শতাংশও যদি বাধ্য হয়ে অপরাধে জড়ায়, তাহলে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হবে, তা কি ভাবা যায়! মাদকের অনুপ্রবেশ ও মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তরুণ, এমনকি কিশোররাও ক্রমে বেশি করে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। আর মাদকের অর্থ জোগাড় করতে চুরি, ছিনতাইয়ে জড়িত হচ্ছে। এ ছাড়া বর্তমানে দেশের অস্থিতিশীল রাজনীতিও এসব অপরাধে কোনো না কোনোভাবে প্রভাব ফেলছে।
মানুষ নিরাপত্তা চায়, মান-সম্মান নিয়ে বাঁচতে চায়। আর তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে বাস্তবে পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে হবে। তা না হলে মানুষের ক্ষোভ বাড়তেই থাকবে।