খুলনা | সোমবার | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ | ২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

খোঁজ মিলছে না স্বজনদের

চার দিন যাবত অজ্ঞাত ব্যক্তি পড়ে আছে মোংলা হাসপাতালে সিঁড়ির নিচে

মোংলা প্রতিনিধি |
১২:০৮ এ.এম | ০৯ অক্টোবর ২০২৫


মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিঁড়ি ঘরে পড়ে আছে নাম পরিচয়হীন ৫০ বছর বয়সের অসহায় এক ব্যক্তি। গত ৫ অক্টোবর রোববার বিকেলে স্থানীয়রা তাকে মোংলা বাসস্ট্যান্ড থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসা দেয়ার জন্য সেদিনই তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিলেও পেরিয়ে গেল ৪ দিন। এখনো হাসপাতালের সিঁড়ির নিচে কাতরাচ্ছেন পরিচয়হীন ওই ব্যক্তিটি। কিন্ত শত চেষ্টা করেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে তার নাম পরিচয় বা স্বজনদের। তবে কোন কিছুই জানেন না মোংলা থানা পুলিশ। 
বুধবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বারান্দার সিঁড়ির পাশে পড়ে আছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিটি। আধবোজা চোখে মুখে হতাশার ছাপ, মুখে কাঁচাপাকা দাড়ি। প্রথম দিন চোখ না খুললেও চার দিন পর এখন চোখ মেলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাচ্ছে সকলের দিকে। ঠোঁট নাড়াতে পারছে কিন্তু কথা বলতে পারছেন না তিনি। বুকের ওপর ভাঁজ করে রাখা বাঁ হাত। স্যালাইন লাগানো ডান হাতটি মাঝে মাঝে নাড়া-চাড়া করছে। সাথে শুধু জামা আর প্যান্ট ছাড়া কিছু নেই তার, সারা শরীরেই ছোপ ছোপ ময়লা। অযতœ-অবহেলায় পড়ে থাকায় স্যাঁতসেঁতে বালিশের পাশে একটি পাউরুটির প্যাকেট রাখা দেখা গেছে। রোগীর মাথায় স্পর্শ করতেই অস্পষ্ট দৃষ্টি নিয়ে ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকান উপস্থিত মানুষের দিকে। কিছু জানতে চাইলে চোখ মুখে যন্ত্রণা নিয়ে শব্দহীন বারবার ঠোঁট নেড়ে কি যেন বলার চেষ্টা করছেন অসুস্থ এ ব্যক্তিটি। কোথায় বাড়ি ঘর, কিবা তার পরিচয় কিছু জানেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা উদ্ধার করে নিয়ে আসা ব্যক্তিরা। 
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এতোটুকুই জানা যায়, গত ৫ অক্টোবর বিকেলে জামায়াত নেতা গোলাম মোস্তফাসহ কয়েক ব্যক্তি তাকে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। মোংলা বাসস্ট্যান্ডের রাস্তার পাশে মাটিতে শুয়ে আছে কিন্তু কথা বলতে পারছেন না এমন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে সকাল থেকেই নাকি সেখানে পড়ে ছিল এমনটাই জানিয়েছে ভর্তি করতে আসা ব্যক্তিরা। কি কারণে সে অসুস্থ বা তার নাম পরিচয় কি তাও কিছুই জানাতে পারেনি তারা। বিভিন্ন জায়গায় খবর পৌঁছানো হয়েছে কিন্তু তার পরিবারের সন্ধ্যান মিলাতে পারছেন না উদ্ধারকারীরা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 
উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা জামায়াত নেতা গোলাম মোস্তফা জানান, ঘাটের মাঝিদের কাছে খবর পেয়ে মানসিক দায়বদ্ধতার কথা চিন্তা করে লোকজন নিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি এবং ওষুধ ও খাবারের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার ভাল চিকিৎসা বা দেখভাল করেনি। অযতœ-অবহেলা করে ফেলে রেখেছে। ডাক্তার বা নার্স ভালো ভাবে চিকিৎসা বা দেখভালও করছেনা। শুধুমাত্র একটি স্যালাইন দিয়ে চলছে তার চিকিৎসা। সিঁড়ির পাশে যে স্থানে রাখা হয়েছে, বৃষ্টিতে ভিজে গেলেও কোন কর্ণপাত করেনি। সেবা করছে চিকিৎসা নিতে আসা অন্য রোগী ও উদ্ধারকর্মীরা। এ ব্যাপারে পুলিশকেও জানানো হয়েছে।
অবহেলার কথা অস্বীকার করে ডিউটিরত নার্সরা বলেন, সাধ্যমতো চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলেই রোগী এখন অনেকটা সুস্থ। তারপরেও খুলনা বা ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিলে দ্রুত সুস্থ করা সম্ভব হতো।  
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মৌসুমী মৌ জানান, নাম পরিচয় না পাওয়ায় জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা তাঁর (অজানা রোগীর) চিকিৎসা করছেন। খুলনা বা ঢাকায় নেয়া হলে আরও উন্নত চিকিৎসা করানো যেত তা হলে দ্রুত সুস্থ হতো। তার পরেও অগের তুলনায় এখন অনেকটা সুস্থ,  পুরো-পুরি সুস্থ হতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে। 
বুধবার সন্ধ্যার দিকে এ বিষয়ে জানতে মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আনিসুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি তিনি জানেন না বলে উলে­খ করেন। তবে তিনি এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। অসুস্থ ব্যক্তির জীবন বাঁচাতে সকলে মিলে সহযোগিতা করলে ফিরে পেতো তার স্বজনদের এমনটাই দাবি সচেতন মহলের।