খুলনা | মঙ্গলবার | ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

শিক্ষা খাতে নানামুখী সংকট দ্রুত সমাধানই কাম্য

|
১২:১২ এ.এম | ১০ অক্টোবর ২০২৫


দেশের শিক্ষা খাতের নানামুখী সংকট বারবার আলোচনায় এলেও সেসব সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। কয়েক বছর আগে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক সেমিনারে দেশের বর্তমান পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সংকট মানহীন শিক্ষা। গত ৩০ বছরে আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলেছি। বিশেষত, মাধ্যমিক শিক্ষায় সংকট বেশি। এখন থেকে এর পুনরুদ্ধার কাজ শুরু করা হলেও ঠিক করতে আরও ৩০ বছর লাগবে।
অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, শিক্ষা খাতে নানামুখী সংকট কত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন (২০২৩ সালের তথ্য নিয়ে তৈরি) থেকে জানা যায়, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রায় ৫৬ শতাংশ শিক্ষকের উচ্চতর ডিগ্রি নেই। ইউজিসির অন্য এক বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য থেকে জানা যায়, দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় আগ্রহ কম। কোনো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতের চিত্র অত্যন্ত করুণ। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। বস্তুত শিক্ষা খাতের সব স্তরেই নানামুখী সংকট বিরাজমান। প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উলে­খ করা হয়েছে, যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়াই শিক্ষকতা করছেন অনেক শিক্ষক। বস্তুত দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় রয়েছে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে বড় সংকট মানসম্মত শিক্ষক। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা প্রয়োজনীয় পেশাগত প্রশিক্ষণ ছাড়াই করছেন শিক্ষকতা। দেশে শিক্ষকদের ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের কোনো কাঠামো নেই। ফলে আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহারে শিক্ষকরা পিছিয়ে পড়ছেন।
বিগত স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর গত এক বছরেরও বেশি সময়ে শিক্ষা খাতে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি না হওয়া দুঃখজনক। শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে অনেক পদ খালি রয়েছে। বস্তুত আমাদের দেশে শিক্ষা সবচেয়ে অবহেলিত খাতগুলোর একটি। বছরের পর বছর শিক্ষা খাতকে গুরুত্বহীন করে রাখায় সমাজে শিক্ষা ও শিক্ষকদের মর্যাদা ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এখন তো দেশে পরিবর্তন এসেছে। দেশবাসী আশা করছে শিক্ষাক্ষেত্রেও কাক্সিক্ষত পরিবর্তন আসবে। বর্তমানে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শিক্ষা খাতের আশু সংস্কারের বিকল্প নেই। শিক্ষা খাতের সংকট নিরসনে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। যেহেতু শিক্ষকরা সমাজ গঠনের প্রধান কারিগর সেহেতু মেধাবীরা যাতে শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহী হন সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এআইয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে মানুষকে জ্ঞান, দক্ষতা ও সৃজনশীলতার বিকাশে মনোযোগ বাড়াতে হবে। শিক্ষা খাতকে অবহেলা করে দেশ ও জাতির অগ্রগতি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। কাজেই এ খাতের সমস্যাগুলো নিরসনে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে।