খুলনা | মঙ্গলবার | ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে ধ্বংসের মুখে মিয়ানমারের শহর

খবর প্রতিবেদন |
১২:১৪ এ.এম | ১৩ অক্টোবর ২০২৫


মিয়ানমারের শান প্রদেশের একটি শহর কিয়কিম। ২০২৪ সালের আগস্টে শহরটির দখল নেয় মিয়ানমারের জাতিগত তাঙ মিলিশিয়া গোষ্ঠী। পরে প্রায় তিন সপ্তাহের তীব্র লড়াই শেষে গত ১ অক্টোবর শহরটির পুনরায় নিয়ন্ত্রণ নেয় জান্তা বাহিনী। সেনাবাহিনী দখল নেওয়ার করার দশ দিন পরেও এই শহরটিতে ভুতুড়ে নীরবতায় বিরাজ করছে।

স্কুলগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। একসময় প্রাণচঞ্চল বাজারগুলোও প্রায় জনশূন্য। বিদেশি সাংবাদিকদের দেখা মাত্র বিক্রেতারা দ্রুত দোকান বন্ধ করে পালাচ্ছেন।

অ্যাসোসিয়েট প্রেসের এপির একমাত্র অনুমতিপ্রাপ্ত সাংবাদিক সামরিক তত্ত্বাবধানে শহরে প্রবেশ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র দেখেছেন। আদালত, পুলিশ স্টেশন ও সরকারি আবাসিক ভবনসহ একাধিক স্থাপনা আগুনে দগ্ধ হয়েছে। হাসপাতালের আশপাশের বড় অংশ ধ্বংস হওয়ায় জরুরি চিকিৎসা কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে নিকটবর্তী এক চীনা মন্দিরে স্থানান্তর করা হয়েছে। যদিও সাধারণ নাগরিকদের বাড়িঘর তুলনামূলকভাবে অক্ষত। তবু প্রায় ৪৬ হাজার বাসিন্দার অধিকাংশই শহর ছেড়ে পালিয়েছেন।

এতোদিন কিয়কমের নিয়ন্ত্রণ ছিল তাঙ জাতীয় মুক্তিবাহিনীর (টিএনএলএ) হাতে। তারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিমান হামলা ও ভারী অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে। অন্যদিকে সেনাবাহিনী অভিযোগ করেছে, মিলিশিয়ারা শহর ছাড়ার সময় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।

কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিয়কমে শহরটি কেন্দ্রীয় মিয়ানমারকে চীনের সঙ্গে সংযুক্তকারী হাইওয়ের পাশে অবস্থিত। শহরটির নিয়ন্ত্রণ আবারও সেনাবাহিনীর হাতে ফিরে আসাকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে সামরিক সরকারের জন্য বড় জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

শহরে যাওয়ার পথে দেখা যায় বোমা ও গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন। প্রতি ৫০০ থেকে ১,০০০ মিটার অন্তর স্থাপন করা হয়েছে সেনা চেকপোস্ট। আর কিছু এলাকায় পড়ে আছে বিস্ফোরিত না হওয়া মর্টার শেল। কর্তৃপক্ষের দাবি, নিরাপত্তাজনিত কারণে সাংবাদিকদের শহরের কিছু অংশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

স্থানীয়দের মতে, খুব অল্প সংখ্যক বাসিন্দাই শহরে ফিরেছে। সামনের ফ্রন্টলাইন খুব কাছে থাকায় তারা আতঙ্কিত। টিএনএলএ বাহিনী শহর থেকে মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। অনেকে গত বছরের সংঘর্ষের সময় পালিয়ে গিয়েছিল। যারা রয়ে গিয়েছিল, তারা একান্ত প্রয়োজনে। এক মোটরবাইক ট্যাক্সিচালক বলেন, ‘চারপাশের শহরগুলো নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত মানুষ ফিরবে না।’

কিয়কমের এই ধ্বংসাবশেষ পুরো মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের চিত্র প্রতিফলিত করছে—যেখানে সেনাবাহিনী ও জাতিগত মিলিশিয়ারা এখনও নিয়ন্ত্রণের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র: এপি