খুলনা | বুধবার | ১৫ অক্টোবর ২০২৫ | ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

মিরপুরে আগুন : পোশাক কারখানায় ১৬ লাশ, ছাদে ছিল তালা

খবর প্রতিবেদন |
০১:১৯ এ.এম | ১৫ অক্টোবর ২০২৫


রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে পোশাক কারখানা ও রাসায়নিকের গুদামে আগুনে ঝরে গেলো ১৬ প্রাণ। এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, একতলা টিনশেড ভবনের রাসায়নিকের গুদামে প্রথমে আগুন লাগে। সেই আগুন মুখোমুখি থাকা চারতলা পোশাক কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। পোশাক কারখানাটির ছাদে তালা মারা ছিল।
মঙ্গলবার  সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম পৃথকভাবে এসব তথ্য জানান।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রাসায়নিকে গুদামটি একতলা হলেও উচ্চতায় তা দুই তলার মতো। টিনশেড গুদামেরই প্রথম আগুন লাগে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে মুখোমুখি থাকা চারতলা পোশাক কারখানায়। এখান থেকেই ১৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এই ১৬ জনের শরীরের অধিকাংশই পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। তাদের শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন হবে। লাশগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, তিনতলা পোশাক কারখানার বিভিন্ন জায়গা থেকে ১৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে আগুন লাগার সময়ে পোশাক কারখানাটির ছাদে তালা মারা ছিল। 
তিনি জানান, বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। রাসায়নিকের গুদামের আগুন এখনো নেভেনি। বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক মজুত থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।’
এর আগে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শিয়ালবাড়ি এলাকার গার্মেন্টস ও কেমিক্যাল গোডাউনে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। বিকেল নাগাদ ইউনিটের সংখ্যা বাড়িয়ে ১০টি করা হয়। অগ্নিকাণ্ডের প্রায় আট ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, সবকটি মরদেহই গার্মেন্টস ভবন থেকে পাওয়া গিয়েছে। কেমিক্যাল গোডাউন ভবনের অগ্নিনির্বাপণের কাজ চলছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে সরেজমিনে দেখা যায় ভিন্নচিত্র। ছেলের শালিকা আসমা আক্তারকে খুঁজতে ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রেশমা আক্তার। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘সকালে আগুন লাগার পর থেকেই আমরা ওর কোনও খোঁজ পাচ্ছি না। আমার ছেলে গিয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে খোঁজ করতে। এখনও পর্যন্ত আমরা ওকে (আসমা) খুঁজে পাচ্ছি না।’’
আসমা আক্তারের বাড়ি ময়মনসিংহের নেত্রকোনায়। তিনি ঢাকায় তার খালার বাসায় থাকতেন বলে জানান রেশমা।
মেয়ে ফারজানা আক্তারের (১৫) খোঁজে আগুনে পুড়ে যাওয়া গার্মেন্টস কারখানার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছেন বাবা রতন। ফারজানা ওই গার্মেন্টসে চাকুরি করতেন বলে জানান রতন। তিনি বলেন, ‘‘আগুনের খবর পেয়ে আমার মেয়ের খোঁজে চলে এসেছি। এখনও তার কোনও হদিস পাইনি। আমাদের কিছু জানাচ্ছেও না। কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাদের বলা হয়েছে, যারা মারা গিয়েছেন, তাদের ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। আমরা আর কিছুই জানি না। শুধু মেয়েকে ফিরে পেতে চাই।’’
শফিকুল ইসলাম তার ভাগ্নী মাহিরার (১৪) ছবি হাতে এদিক-সেদিক খুঁজে চলেছেন। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। জানতে চাইলে শফিকুল  বলেন, ‘‘আমার ভাগ্নী মাহিরা। গার্মেন্টসের তিন তলায় কাজ করতো। তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। আগুন লাগার পর থেকে তাকে খুঁজছি। আশপাশের হাসপাতালেও খোঁজ নিয়েছি। কোথাও খুঁজে পাইনি। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কথা বলেছি তারা বলেছে ধৈর্য ধরতে।’’
নিখোঁজ নারগিস আক্তারের বড় বোন লাইজু বেগম বলেন, ‘‘আমার বোন সকাল আনুমানিক ৮টায় কাজে আসে। সকাল ১১টায় খরব পাই, আগুন লেগেছে। সেখানের একজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানতে পারি-কেউ ভেতর থেকে বের হতে পারেনি। এরপর থেকে আর কোনও খোঁজ পাইনি। এখনও কোনও খোঁজ নাই-আমার বোন কোথায় আছে।’’
প্রত্যক্ষদর্শী বিইউবিটি’র শিক্ষার্থী আবু জাফর মোহাম্মদ নোমান বলেন, ‘‘আমি ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার সময় আগুন দেখতে পাই। তখন থেকেই এদিকে আছি। আগুন লাগার পর দেখি কেমিক্যাল গোডাউনে ব্লাস্ট হচ্ছে। তারপরেই পাশের গার্মেন্টসে আগুন লেগে যায়। আগুন লাগার ২০ মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস আসে। তারা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে।’’