খুলনা | বুধবার | ১৫ অক্টোবর ২০২৫ | ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

খুলনায় ভূমিদস্যু চক্রের দৌরাত্ম : ছাড় পাচ্ছেন না প্রকৌশলী

হামলা, মামলা, হুমকি আর ভূমিদস্যুদের মারপ্যাচে এখন ক্লান্ত ষাটোর্ধ্ব বিধবা জোবেদা!

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৫৬ এ.এম | ১৫ অক্টোবর ২০২৫


টুটপাড়ার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব বিধবা জোবেদা বেগম। কষ্টে অর্জিত জীবনের সর্বস্ব দিয়ে লবণচরা থানাধীন মাথাভাঙা মৌজায় এক টুকরো জমি ক্রয় করেছেন। তবে সেখানে স্থায়ী নিবাস গড়তে পারেননি। গ্রামে পিতার রেখে যাওয়া জমিটা বিক্রি করে সেই অর্থও ব্যয় করেছেন স্থায়ী নিবাস গড়ার স্বপ্নে। তবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। ভূমিদস্যু বলে খ্যাত স্থানীয় এক প্রভাবশালী চক্রের খপ্পরে পড়ে তার এই বেহাল দশা। হামলা, মামলা, হুমকি আর ভূমিদস্যুদের মারপ্যাচে এখন ক্লান্ত জোবেদা।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের উপ-সহকারি প্রকৌশলী অমিত কান্তি ঘোষ ও তার স্ত্রী রিয়া ঘোষ। ২২ বছর পেরিয়ে কর্মজীবনের তেইশে পা রেখেছেন অমিত। ২০২২ সালে জীবনের সবটুকুই দিয়েই লবণচরা এলাকায় ৮ কাঠা জমি ক্রয় করেন এই দম্পতি। সেই থেকে আজ অবধি সীমানা দেয়াল নির্মাণ করতে গিয়ে রীতিমত নাস্তানাবুদ। নানান কায়দায়, নানান অজুহাতে সীমানা দেয়াল নির্মাণ কাজ থমকে যায়। থানা, আর্মি ক্যাম্প গিয়ে কয়েক দফা সুরাহা হলেও তা মানতে নারাজ ভূমিদস্যু চক্র।
শুধু জোবেদা কিংবা অমিত নন, তাদের মতন ইলেকট্রিক মিস্ত্রী শাহজাহান ও নাছিমা বেগম দম্পতি, বাগমারার ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন লিটন, এনজিও কর্মী মাহমুদা- নিজ নিজ স্বপ্নের নিবাস গড়তে গিয়ে ভূমিদস্যুদের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সর্বস্ব হারাচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন লবণচরা থানা এলাকায় ভূমিদস্যু চক্রের হোতা মোঃ নাজিম শেখ। তিনি পুটিমারী রেলব্রিজ সংলগ্ন আব্দুল হকের ছেলে। জিরোপয়েন্ট এলাকার মহিদুল ও বান্দাবাজার এলাকার আরিফ এই চক্রের অন্যতম দু’জন। এলাকায় দাপটে নাজিমের ভয়ে তটস্ত সবাই। ইতোপূর্বে কয়েক দফা মারামারিতে প্রতিপক্ষকে শক্তভাবে ঘায়েল করেছেন নাজিম। কারাগারেও যেতে হয়েছে তার।
বিগত সরকারের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, কাউন্সিলরের সাথে সখ্যতা থাকার কারণে অনেকেই নাজিম শেখের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস রাখতেন না। ৫ আগস্ট পরবর্তী এই চিত্র বদলায়নি। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন ব্রজেন ঢালী নামের এক ব্যক্তির প্রভাবে এখন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন নাজিম। থানা-পুলিশ তার নিয়ন্ত্রণে, এমন জনশ্র“তি ওই এলাকায় শোনা গেছে। সব মিলিয়ে এলাকার জমি সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি করে অনৈতিকভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয়া নাজিম শেখের কাজ, অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
মাদ্রাসা শিক্ষক মোঃ নাছির উদ্দিন শেখ জানান, সাড়ে ৫ কাঠা জমি ক্রয় করে সেখানে নূরে-মদিনা তাহফিজুল কুরআন মডেল মাদ্রাসা নামে ছোট্ট এশটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। ৫ আগস্টের পর তার প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড খুলে ফেলে দেয় নাজিম বাহিনী। দখলের অপতৎপরতা চালায়। তবে আর্মি ক্যাম্পে অভিযোগ করায় নাজিম ও তার গ্যাং এর অন্য সদস্যরা দমে যান। ত্র“টিপূর্ণ কাগজাদি প্রদর্শন করায় তখন বেদম পেটানো হয় এমন দাবি তার। ইতোপূর্বে জমি জবরদখল সংক্রান্ত ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। হত্যা চেষ্টা মামলায় ওয়ারেন্ট ইস্যু হলে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
চলতি বছরের ১১ মার্চ খুলনা সিটি কর্পোরেশনের উপ-সহকারি প্রকৌশলী অমিত কান্তি ঘোষ আর্মি ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ করে বলেন, ভূমিদস্যু নাজিম শেখ তার জমিতে বালু ভরাট করতে বাধা দেন, জীবননাশের হুমকি প্রদান করেছেন। এর আগে চলতি বছরের ১৩ ফেব্র“য়ারি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে কেএমপি’র লবণচরা থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন অমিত।
অভিযুক্ত নাজিম শেখ জানান, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সবই মিথ্যা, একটি সংঘবদ্ধ চক্র তার বিরুদ্ধে নানান মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য সাংবাদিকদের সরবরাহ করছে।
ব্রজেন ঢালী জানান, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নয়, গ্রামের বাসিন্দা হিসেবে নাজিম শেখকে চিনি। তার দ্বারা সংঘটিত কোন অপরাধের দায় নিশ্চয়ই আমার ওপর বর্তায় না। লবণচরা থানা সংলগ্ন নিউ টাউন আবাসিক এলাকার জমি সংক্রান্ত বিষয়ে নিজেরা কয়েক দফা বসে কোন লাভ হয়নি। পরবর্তীতে পুলিশের কাছে সংশ্লিষ্টদের যেতে বলেছি।