খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৬ অক্টোবর ২০২৫ | ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

ইসরাইলকে সহায়তা করার দায়ে ৩৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল হামাস

খবর প্রতিবেদন |
০৫:৩১ পি.এম | ১৫ অক্টোবর ২০২৫


দীর্ঘ যুদ্ধের পর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির সুযোগে গাজায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। যুদ্ধবিরতির পর থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালিয়ে অন্তত ৩৩ জনকে হত্যা করেছে হামাস, যাদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে।

শুক্রবার যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকেই হামাসের পক্ষ থেকে এ অভিযান শুরু হয়। রয়টার্স জানিয়েছে, গাজার দুটি নিরাপত্তা সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে—এই ৩৩ জন হামাসের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। এ অভিযানে হামাসের ছয়জন সদস্যও নিহত হয়েছেন। তবে নিহতদের পরিচয় এবং তারা ইসরাইলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানায়নি কোনো পক্ষ।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার জেরে ইসরাইলের ভয়াবহ প্রতিশোধমূলক হামলায় বিপর্যস্ত হয়েছিল হামাস। যুদ্ধবিরতির পর সংগঠনটি ধীরে ধীরে নিজেদের সদস্যদের রাস্তায় ফিরিয়ে আনছে। তবে পুরো পরিস্থিতি যে কোনো সময় আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে—এমন শঙ্কায় হামাস বর্তমানে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে।

গাজা সিটির এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যুদ্ধ চলাকালীন হামাসের নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ করা বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি রাফাহ অঞ্চলে হামাসবিরোধী নেতা ইয়াসের আবু শাবাবের বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, হামাস এরইমধ্যে আবু শাবাবের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে হত্যা করেছে এবং তাকে হত্যার চেষ্টাও চলছে। হামাসের দাবি, আবু শাবাব ইসরাইলের সহযোগী, যদিও তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, মুখোশধারী ও সবুজ ফিতা বাঁধা কয়েকজন বন্দুকধারী রাস্তার পাশে হাঁটু গেড়ে বসা অন্তত সাতজনকে গুলি করে হত্যা করছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাধারণ মানুষের কেউ কেউ নিহতদের ‘সহযোগী’ আখ্যা দিয়ে উল্লাস করছিল। ভিডিওটি গাজায় ধারণ করা বলে দাবি করা হলেও রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে এর সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি।

এর আগেও গত মাসে হামাস কর্তৃপক্ষ ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল।

একই দিনে হামাস দুই বছর আগে আটক শেষ জীবিত জিম্মিদের ইসরাইলের কাছে মুক্তি দিয়েছে। সে সময় কাসাম ব্রিগেডের সদস্যদের রাস্তায় মোতায়েন করা হয়। গাজায় একটি স্থায়ী সমঝোতার পথ তৈরিতে এই মুহূর্তগুলোকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইলসহ একাধিক দেশ হামাসকে নিরস্ত্র করার দাবি জানিয়ে আসছে।

যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়নের পর হামাসের গাজা সরকারের মিডিয়া অফিসের প্রধান ইসমাইল আল-থাওয়াবতা বলেন, তারা কোনো নিরাপত্তা শূন্যতা তৈরি হতে দেবে না এবং জনগণের নিরাপত্তা ও সম্পত্তির রক্ষায় তারা দায়িত্ব পালন করবে। হামাসের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে তারা অস্ত্র সমর্পণ করতে প্রস্তুত, তবে গাজার শাসন কাঠামো নির্ধারণে সিদ্ধান্ত আসা উচিত ফিলিস্তিনিদের মধ্য থেকেই। সেখানে বিদেশি কোনো নিয়ন্ত্রণ কাম্য নয়।

ফিলিস্তিনি বিশ্লেষক রেহাম ওউদার মতে, এই পদক্ষেপগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে হামাসের শক্তি প্রদর্শন এবং ইসরাইলের সহযোগীদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করা। একই সঙ্গে হামাস এও বোঝাতে চাইছে, গাজার ভবিষ্যৎ শাসন ব্যবস্থায় তাদের নিরাপত্তা শাখার সদস্যদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা উচিত—যদিও ইসরাইল তা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।

এই পরিস্থিতিতে গাজার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও রাজনীতির ভবিষ্যৎ যে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।