খুলনা | শনিবার | ১৮ অক্টোবর ২০২৫ | ৩ কার্তিক ১৪৩২

ভোজ্য সয়াবিন, চালের বাজার উর্ধ্বমুখি

বেশির ভাগ সবজির দাম চড়া মাছ-মুরগি অপরিবর্তিত

আল মাহমুদ প্রিন্স |
১২:৫৬ এ.এম | ১৮ অক্টোবর ২০২৫


দীর্ঘদিন ধরে চড়া সবজির বাজার। এ সপ্তাহে কয়েকটি সবজির দাম কিছুটা কমছে। তবে অধিকাংশ সবজির দাম এখনও চড়া। গত সপ্তাহের চেয়ে ডজনে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম। এছাড়া মাছ-মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
অন্যদিকে ভোজ্য সয়াবিন চাল বাজার উর্ধ্বমুখি হয়ে উঠেছে। মাত্র দু’সপ্তাহের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও জিনিসের মূল্য বেড়েছে অস্বাভাবিক। ভোজ্য সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি এক টাকা, চাল কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা, লেয়ার মুরগির ডিম হালিপ্রতি চার টাকা, ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি দশ টাকা ও সবধরণের সবজি কেজিপ্রতি অন্তত চার থেকে পাঁচ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভোক্তাদের মন্তব্য, বাজারে এসব পণ্য ও জিনিসের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও অধিক মুনাফার আশায় এক ধরণের অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও কারসাজির কারণে তাদের ইচ্ছামত দাম বাড়িয়ে দিয়ে কৌশলে পকেট কাটছেন ভোক্তাদের। তবে মাঝে মাঝে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করলেও দোকানে মূল্য তালিকা সাঁটানোর পাশাপাশি অভিযান আরো জোরদার করলেও মূল্য হ্রাস পেতে পারে এমন দাবি তুলেছেন ভোক্তারা। আর দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে নি¤œ ও মধ্য আয়ের মানুষ।
গতকাল শুক্রবার ানগরীর ২৬টি বাজারের মধ্যে কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব জিনিস ও পণ্যসামগ্রী প্রায় একই দামে বিক্রি হয়েছে। কমছে না ভোজ্য সয়াবিন তেলের মূল্য। বোতলজাত ভোজ্য সয়াবিন ফ্রেশ, তীর, বসুন্ধরা পাঁচ লিটার বিক্রি হচ্ছে ৯২০ টাকা দরে। অর্থাৎ, প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৮৪ টাকা দরে। যা দুই সপ্তাহ আগে লিটারপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১৮৩ টাকা। বোতলজাত সয়াবিনের চেয়ে বেড়েছে লুজ সয়াবিনের দাম। লুজ সয়াবিন কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা। যা দু’সপ্তাহ আগে কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১৯৫ টাকা। তবে দুই মাস আগেও লুজ সয়াবিন কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১৮৫ টাকা।
বেড়ে চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির দাম। অন্তত ৬০ টাকার নিছে মিলছে না অধিকাংশ সবজি। 
নগরীর ময়লাপোতাস্থ কেসিসি সন্ধ্যা বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৫০ টাকা, ঝিঙে ৫০ টাকা, টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা, প্রতি কেজি দেশি পেঁঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, চায়না রসুন ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, মানভেদে দেশি রসুন ১০০ থেকে ১৩০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৫০ টাকা, কুশি ৬০ টাকা, কাঁকরল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, আলু ২০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, কাঁচাকলা প্রতিহালি ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। 
এছাড়া নগরীর এ্যাপ্রোচ রোডস্থ রূপসা কেসিসি মার্কেট, নতুন বাজার, মিস্ত্রিপাড়া বাজার, দোলখোলা বাজারসহ নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রায় একই দামে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য ও সবজি। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে অধিকাংশ ক্ষেতে মরিচ গাছ মরে যাওয়ায় মাঝে মাঝে দাম বৃদ্ধি ও হ্রাস পাচ্ছে।  
কমছে না মশুর ডালের মূল্য। প্রতিকেজি মশুর ডাল (মোটা) ১০০ টাকা, মশুর ডাল (সরু) ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ দেড় মাস আগে প্রতিকেজি মোটা মশুর ডাল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, সরু মশুর ডাল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চালের বাজারে চলছে অস্থিরতা। কোনোভাবে কমছে চালের দাম। প্রায় দেড় মাসের ব্যবধানে চালের মূল্য অন্তত কেজিপ্রতি বেড়েছে ৩/৪ টাকা। 
নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি স্বর্ণা চাল ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা, আঠাশ বালাম ৬২ থেকে ৬৫ টাকা, মিনিকেট ভালোমানের ৭৫ টাকা, মিনিকেট নি¤œমানের ৬০ থেকে ৬৬ টাকা এবং বাসমতি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ একমাস আগে স্বর্ণা চাল ৫২ টাকা, আঠাশ বালাম ৫৮ থেকে ৬২ টাকা, মিনিকেট ভালোমানের ৭০ থেকে ৭২ টাকা, মিনিকেট নি¤œমানের ৬০ থেকে ৬২ টাকা এবং বাসমতি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
মুরগির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে আরেক দফা। মুরগির দাম কেজিপ্রতি অন্তত দশ থেকে পনের টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা, কক মুরগি ২৮০ টাকা এবং সোনালী মুরগি ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ মাসখানেক আগেও প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকা, কক মুরগি ২৬০ থেকে ২৬৫ টাকা এবং সোনালী মুরগি ৩২০ থেকে ৩৩৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।  
বেশি কিছুদিন লেয়ার মুরগির ডিমের দাম একটু সহনীয় পর্যায়ে থাকলে ফের বৃদ্ধি পেয়েছে লেয়ার মুরগির ডিমের দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় ডিমের দাম ডজনে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। এক ডজন ব্রয়লার মুরগির ডিমের দাম এখন ১৪০-১৪৫ টাকা। সাদা ডিম ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা।
বছরের পর বছর গরুর মাংস বিক্রি হয়ে আসছে চড়া দামে। যা নি¤œ ও মধ্য আয়ের মানুষের পক্ষে কেনা খুবই কষ্টের। খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন স্থনে এবং গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজি দরে। তবে কোনো কোনো স্থান বা বাজারে গরুর মাংস সাড়ে ৬শ’ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়ে থাকে।   
নগরীর কেসিসি সন্ধ্যা বাজারে আসা জাকির হোসের বলেন, বাজারে অনেক সবজি উঠেছে। কিন্তু দাম চড়া। বাজার দর নিয়ন্ত্রণের রাখার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আশু দৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি। নগরীর রূপসা কেসিসি মার্কেটে আসেন মৎস্য ব্যবসায়ী মোঃ আবু জাফর শেখ। তিনি বলেন, সয়াবিন তেল, সবজিসহ প্রায় সবজিনিসের দাম বাড়তি। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে মোবাইল কোর্টের দরকার। পাশাপাশি প্রত্যেকটি দোকানে পণ্যমূল্য তালিকা টানিয়ে দেওয়া উচিৎ। তাহলে ব্যবসায়ী বেশি দাম নিতে পারবে না।