খুলনা | রবিবার | ১৯ অক্টোবর ২০২৫ | ৪ কার্তিক ১৪৩২

দুইটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতি পেল বিএনপি, অস্ত্রের আবেদন প্রক্রিয়াধীন

খবর প্রতিবেদন |
০২:৫৭ পি.এম | ১৯ অক্টোবর ২০২৫


ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দলটিকে দুটি বুলেটপ্রুফ যানবাহন কেনার অনুমতি দিয়েছে। এর মধ্যে একটি বুলেটপ্রুফ প্রাইভেট কার এবং অন্যটি বুলেটপ্রুফ বাস। পাশাপাশি, দলের পক্ষ থেকে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের আবেদনও বিবেচনাধীন রয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জুন মাসে প্রথম ধাপে বিএনপিকে একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে অক্টোবরের প্রথম দিকে দলের শীর্ষ নেতাদের নিরাপত্তা ব্যবহারের জন্য একটি বুলেটপ্রুফ বাস কেনারও অনুমোদন দেওয়া হয়। বিএনপি সূত্রের বরাতে জানা গেছে, যানবাহন দুটি জাপান থেকে আমদানির বিষয়ে আলোচনা চলছে।

বিএনপির নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেন, “আসন্ন নির্বাচনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দেশব্যাপী প্রচারণায় অংশ নেবেন এবং জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবেন। এই সময়ে তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই বুলেটপ্রুফ গাড়ি ও বাস কেনা হচ্ছে।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণত রাজনৈতিক দলের জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ির অনুমতি দেওয়া হয় না। অতীতে কেবল রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিদেশি দূতাবাস বা আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের জন্য এ ধরনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে বিএনপির এই আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) জানিয়েছে, জাপান, কানাডা ও জার্মানি সাধারণত বুলেটপ্রুফ গাড়ি তৈরি করে। অতীতে শেখ হাসিনার জন্য নব্বইয়ের দশকে এবং ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর জাপান থেকে বুলেটপ্রুফ গাড়ি আমদানি করা হয়েছিল।

বারভিডার সভাপতি আবদুল হক বলেন, “বেসরকারি উদ্যোগে কেউ বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনতে পারেন না। এর জন্য সরকারিভাবে অনুমতি নিতে হয়। একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ির দাম প্রায় ২ লাখ মার্কিন ডলার, আর ৮০০ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হলে মোট ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ২২ কোটি টাকা।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত গত জুনে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের ব্যবহারের জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ির অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। এরপর দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ব্যবহারের জন্য একটি বুলেটপ্রুফ বাস কেনার প্রস্তাবও দেওয়া হয়।

এ ছাড়া দলটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি শটগান ও দুটি পিস্তলের লাইসেন্সের আবেদন করেছে, যা এখনো বিবেচনাধীন রয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণার সময় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হামলা বা সন্ত্রাসী আক্রমণের ঝুঁকিতে থাকতে পারেন। সেই বিবেচনায় তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতিতে কোনো আপত্তি জানানো হয়নি।

২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি শিগগিরই দেশে ফিরবেন এবং নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবেন। অন্যদিকে ২০১৫ সালে তাবিথ আউয়ালের মেয়র নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার সময় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনাকে দলটির নেতারা এখনো বড় নিরাপত্তা উদ্বেগ হিসেবে দেখছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ কার্যক্রমের পটভূমিতে বিএনপি নেতৃত্বের ওপর হামলার আশঙ্কা থেকেই এই বিশেষ নিরাপত্তা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।