খুলনা | মঙ্গলবার | ২১ অক্টোবর ২০২৫ | ৬ কার্তিক ১৪৩২

আইনশৃঙ্খলায় উদ্বেগ নেই, মব সহিংসতা আলোচনায় আসেনি : ইসি সচিব

খবর প্রতিবেদন |
০১:২১ এ.এম | ২১ অক্টোবর ২০২৫


আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মব সহিংসতা নিয়েও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনায় আসেনি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। সোমবার) রাজধানীর নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক শেষে ইসি সচিব আখতার আহমেদ এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, ভোট আয়োজনের পরিবেশ এখন নিয়ন্ত্রণে এবং অনুকূল রয়েছে। আলোচনায় মব সহিংসতা প্রসঙ্গও আসেনি। বরং বাহিনীগুলো অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিশ্র“তি দিয়েছে।
ইসি সচিব বলেন, বিভিন্ন ভাবে আরও কিছু কাজ পর্যায়ক্রমে করতে হবে। আজকের বৈঠক ছিল সূচনা, পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে অন্যদের সঙ্গে যৌথভাবে বিষয়গুলো আরও নিখুঁতভাবে সমন্বয় করা হবে। লক্ষ্য একটাই, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। সবাই এই বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, আমাদের আলোচনায় তফসিল থেকে ভোটের পরবর্তী সময় পর্যন্ত বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন এবং অভিজ্ঞতা থেকে করণীয় ঠিক করছে।
আইনশৃঙ্খলার বর্তমান পরিস্থিতি ভোটের জন্য কতটা উপযোগী-এমন প্রশ্নে আখতার আহমেদ বলেন, নির্বাচনের সময়সীমা তফসিল ঘোষণা থেকে গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত ইসির এখতিয়ারাধীন। আমাদের আলোচনার পরিসর ছিল এতটুকুই, এর বাইরে কিছু আলোচনা হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে কোনো উদ্বেগ দেখিনি। বরং তারা একটি ভালো নির্বাচনের বিষয়ে প্রতিশ্র“তিবদ্ধ। নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ রয়েছে এবং সেটিকে আরও সুসংহত করার জন্যই আলোচনা হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি কিংবা ভোটের সময় নিয়ে কোনো শঙ্কাও প্রকাশ করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আশঙ্কা প্রকাশের কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কেউ তা করেননি।
সা¤প্রতিক অগ্নিকাণ্ড ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে ফেব্র“য়ারিতে নির্বাচন সম্ভব কি না জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, আজকের আলোচনায় সে বিষয়ে কিছু হয়নি। আলোচনার মূল বিষয় ছিল নির্বাচনকে আরও সুষ্ঠু ও সুন্দর করার প্রস্তুতিমূলক দিকগুলো।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়। বৈঠকে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা, ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ, বডিক্যামেরা ব্যবহারের মতো অন্তত ১৪টি বিষয়ে আলোচনা হয়।
ইসি সচিব জানান, নির্বাচনের আগে তিন দিন, নির্বাচনের দিন এবং পরের চার দিন মোট আট দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রাখার প্রস্তাব এসেছে। আগে এই সময়সীমা ছিল পাঁচ দিন। প্রস্তাবটি পরীক্ষা করে দেখা হবে।
এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, এর অপব্যবহার ঠেকাতে এনটিএমসি গত পূজায় সফলভাবে তথ্যপ্রযুক্তি মনিটরিং করেছে। একইভাবে নির্বাচনের সময়েও প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা যাচাই করা হবে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার একটি সেমিনার হবে।
পার্বত্য অঞ্চলে ভোটসামগ্রী পরিবহনে হেলিকপ্টার ব্যবহারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনী এ দায়িত্বে থাকবে। প্রয়োজনীয় স্থানে হেলিপ্যাড প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সেনাবাহিনীর দায়িত্ব প্রসঙ্গে সচিব বলেন, তারা মাঠ পর্যায়ে ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার হিসেবে কাজ করছে। ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিং বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক বাহিনীর নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি হলে সমন্বয় আরও শক্ত হবে।
সীমান্ত ও উপকূলীয় এলাকায় কাজের ধরন ভিন্ন হওয়ায় সেখানে সমন্বয় বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যানবাহনের স্বল্পতা নিয়েও আলোচনা হয়। সচিব বলেন, প্রয়োজনীয় যানবাহন রিকুইজিশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) সংশোধনের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অংশ হিসেবে যুক্ত করা হবে কি না-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার হিসেবে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব বহাল রাখার পক্ষে আলোচনা হয়েছে।
বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রত্যেক বাহিনীর আলাদা ব্যয় থাকবে। প্রশিক্ষণ ও মোতায়েন সংক্রান্ত খরচগুলো ইসিকে জানানো হবে, যা নির্বাচন বাজেটের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। এখনো কেউ বাজেটের অঙ্ক বলেননি, তবে সবাই একমত যে বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বাজেট চূড়ান্তের সময় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলোচনার পর ফাইন টিউনিং করে বাজেট অর্থ বিভাগে পাঠানো হবে। লুট হওয়া অস্ত্রের প্রসঙ্গে সচিব বলেন, লুট হওয়া অস্ত্রের ৮৫ শতাংশ উদ্ধার করা হয়েছে, বাকি অংশ উদ্ধারের কাজ চলছে।
তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিতদের মধ্যে ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, সেনাবাহিনী প্রধানের প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, বিমানবাহিনীর প্রতিনিধি এয়ার ভাইস মার্শাল রুশাদ দিন আসাদ, নৌবাহিনীর প্রতিনিধি রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান, এনএসআই মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবু মোহাম্মদ সরোয়ার ফরিদ, ডিজিএফআই মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, আনসার ভিডিপি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, কোস্টগার্ড মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মোঃ জিয়াউল হক, এনটিএমসি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল কাইয়ুম মোল­া, র‌্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, এসবি অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক জি এম আজিজুর রহমান এবং সিআইডির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোঃ ছিবগাত উল­াহ।