খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৩ অক্টোবর ২০২৫ | ৭ কার্তিক ১৪৩২

সন্ত্রাস বিরোধী মামলায় সেই মার্কিন নাগরিক ফের ৫ দিনের রিমান্ডে

খবর প্রতিবেদন |
০১:৫৮ পি.এম | ২২ অক্টোবর ২০২৫


অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতে অন্য দেশের এজেন্ট হিসেবে কাজ করার অভিযোগে রমনা মডেল থানার সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ বুধবার (২২ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইসতিয়াকের আদালত শুনানি শেষে রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এর আগে এই মামলায় দুই দফায় তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

ঢাকার মিন্টো রোডের মন্ত্রী পাড়ায় গাড়িতে করে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরির সময় গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে আটক করা হয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে। বিকেলে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তার সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন রমনা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আজিজুল হাকিম। ওইদিন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন। ওইদিন সকালে তাকে রমনা মডেল থানার এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বিকেলে তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার একটি আদালত। পরে ১৬ সেপ্টেম্বর তার সহযোগী গোলাম মোস্তফা আজাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেই সহযোগী ও তার সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত প্রত্যেকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এরপর গত ১৩ অক্টোবর পুনরায় এনায়েত করিম চৌধুরীর ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আখতার মোর্শেদ। আদালত আসামির উপস্থিতিতে শুনানির জন্য এদিন ধার্য করেছিলেন। শুনানিকালে এনায়েত করিম আদালতে হাজির করা হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

মামলার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মিন্টো রোডের মন্ত্রীপাড়া এলাকায় প্রাডো গাড়িতে করে সন্দেহজনক চলাচল করতে দেখা যায় আসামি এনায়েত করিম চৌধুরীকে। এসময় তার গাড়ি থামানো হয় এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। এ সময় তার কাছে পাওয়া ২টি আইনফোন জব্দ করা হয়। প্রাথমিকভাবে তার ফোন বিশ্লেষণ করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানান যে, তিনি বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক। তিনি গত ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে নিউইয়র্ক থেকে কাতার এয়ারওয়েজ যোগে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার চুক্তিভিত্তিক এজেন্ট। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছেন এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তিনি বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের নিমিত্তে কাজ করার জন্য বাংলাদেশে এসেছেন বলে জানান।

তিনি গত ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থান করেন। পরবর্তী সময়ে গুলশানের বর্তমান ঠিকানায় অবস্থান করতে থাকেন। ইতোমধ্যে তিনি সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা, ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন বলে জানান। তিনি আরও জানান, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমেরিকান সরকার হতাশ। আগামী ২১ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় বাতিল করবেন বলে জানান তিনি। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে সেনাবাহিনী সমর্থিত নতুন জাতীয় সরকার, অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। নতুন এই সরকারে কারা অংশগ্রহণ করবেন এবং সরকারপ্রধান কে হবেন, তা আমেরিকা নির্ধারণ করে দেবে বলে জানান। তিনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে সরকারি ও বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বর্তমান অবস্থান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করে তাকে নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা সংস্থার কাছে হস্তান্তর করতেন বলে জানান।

অভিযোগে আরও বলা হয়, আসামি এনায়েত করিম চৌধুরী বর্তমানে বাংলাদেশের বৈধ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করার জন্য অন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে এসে জননিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত আছেন, যা ধর্তব্য অপরাধ।

রমনা মডেল থানায় সন্ত্রাস বিরোধ আইনে মামলাটি দায়ের করেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক আজিজুল হাকিম।

এদিকে মামলার অভিযোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় তার সহযোগী এসএম গোলাম মোস্তফা আজাদ, জাতীয় পার্টির রওশনপন্থি অংশের মহাসচিব কাজী মো. মামুনুর রশীদ, সাংবাদিক মো. আজহার আলী সরকার, যুব সংহতির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব রিফাতুল ইসলাম পাভেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।