খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৩ অক্টোবর ২০২৫ | ৮ কার্তিক ১৪৩২

দেয়ালের ঘেরাটোপে মানবতা বিপন্ন

রামপালের হাতিরবেড় গ্রামের ৬টি পরিবারের ছয় বছর ধরে বন্দিদশায় জীবন পার

রামপাল প্রতিনিধি |
১১:৫০ পি.এম | ২২ অক্টোবর ২০২৫


বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার হাতিরবেড় গ্রামের ছয়টি পরিবার গত ছয় বছর ধরে যেন দেয়ালের বন্দিদশায় জীবন পার করছে। মৃত নিরোদ দাসের পাঁচ ছেলে সঞ্জয় দাস, কিশোর দাস, নয়ন দাস, অসীম দাস ও কৃষ্ণ দাস এবং সঞ্জয় দাসের ছেলে সজল দার্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্সে পরিবারসহ মোট ছয়টি পরিবার সেখানে বসবাস করে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ২৩ জন, যার মধ্যে ১১ জনই শিশু ও কিশোর।
হাতিরবেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে তাদের বসতবাড়ি। প্রায় ছয় বছর আগে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ সুরক্ষার জন্য চারপাশে উঁচু প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেই দেয়াল ঘিরে ফেলে এই ছয়টি পরিবারকেও। বিদ্যালয়ের ভেতর দিয়েই ছিল তাদের একমাত্র যাতায়াতের পথ। দেয়াল ওঠার পর থেকে বাঁধে বিপত্তি। এখন তাদের বের হতে হয় দেয়ালের নিচের ছোট্ট ফাঁক গলে। এই সংকীর্ণ ফাঁক দিয়েই প্রতিদিন শিশু, নারী ও পুরুষদের যাতায়াত করতে হয়। অনেকেই দেয়ালে মাথা ঠেকে আহত হয়েছেন; কারো মাথা ফেটে রক্তও ঝরেছে। বর্ষাকালে ফাঁকের নিচে ডোবায় পানি জমে থাকে, তখন কাদা-পানির ভেতর দিয়েই চলাচল করতে হয়। পূর্ব দিকে ডোবা ও পশ্চিমে অন্যের বসতঘর থাকায় বিকল্প কোনো পথও নেই। ফলে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
স¤প্রতি উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এনসিপির উপজেলা সমন্বয়ক মোঃ মাজেদুর রহমান জুয়েল বিষয়টি উত্থাপন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজ তামান্না ফেরদৌসী তখন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু মাস পার হলেও এখনো কোনো সমাধান আসেনি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পান্না আক্তার বলেন, “দেয়াল নির্মাণের সময় আমরা বলেছিলাম, এক হাত জায়গা ছাড়লে তাদের জন্য চলাচলের পথ রাখা যাবে। তারা জায়গা দিতে রাজি না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।”
তবে সঞ্জয় ও কিশোর দাস বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, “আমরা কখনো জায়গা দিতে অস্বীকার করিনি, আমাদের কথা কেউ শোনেনি।”
ছয় বছর ধরে দেয়ালের ঘেরাটোপে বন্দি এসব পরিবারের এখন একটাই আকুতি একটি ছোট্ট যাতায়াতের পথ খুলে দেওয়া হোক, যাতে তারা স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজ তামান্না ফেরদৌস জানান, বিষয়টি অমানবিক হলেও এটি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিষয়। তারা চাইলে দ্রুত সমাধান সম্ভব। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফরহাদ হোসেন বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও অমানবিক। জেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।