খুলনা | সোমবার | ২৭ অক্টোবর ২০২৫ | ১২ কার্তিক ১৪৩২

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি

|
১২:০৯ এ.এম | ২৭ অক্টোবর ২০২৫


দেশের অর্থনীতি রীতিমতো বিপর্যয়ের মুখে। শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। বিনিয়োগে নেমে এসেছে স্থবিরতা। দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা আজ চরম শঙ্কা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতির জন্য মূলত দায়ী করা হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে। এই পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশি কোনো বিনিয়োগকারীই নতুন বিনিয়োগে আশ্বস্ত হতে পারছেন না। এমনকি উন্নয়ন সহযোগীরাও নানাভাবে পিছিয়ে যাচ্ছেন। সবাই অপেক্ষায় আছেন নির্বাচিত সরকারের জন্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ২২ শতাংশ কমেছে। নতুন প্রকল্প নিবন্ধনেও গতি নেই। বিডা কর্মকর্তারা জানান, বেশির ভাগ বিদেশি বিনিয়োগকারী এখন ‘অপেক্ষা-পর্বে’ আছেন। অনেকে নতুন কারখানা করা বা উদ্যোগ নেওয়া দূরে থাক, পুরনো ব্যবসাই কমিয়ে ফেলছেন। কেউ কেউ বিদেশে সম্পদ স্থানান্তর করছেন, যা অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক ইঙ্গিত। কিছু বিদেশি বিনিয়োগ দেশ ছেড়ে চলেও যাচ্ছে। স¤প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) বলে দিয়েছে, নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত তারা ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের পরবর্তী কিস্তি বা ষষ্ঠ কিস্তি ছাড় করবে না। অন্যদিকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও এক কণ্ঠে বলছেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া নতুন বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে অর্থনীতি এখন এক ধরনের ‘অপেক্ষার ঘূর্ণিতে’ পড়েছে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ইসহাকুল হোসাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্বাচিত সরকার ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ নেওয়া আত্মহত্যার মতো ঝুঁকি। আমরা শুধু পুরনো কার্যক্রম চালাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘বিদেশি ক্রেতারা রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। রপ্তানি অর্ডারও কমছে। নির্বাচিত সরকার না এলে আস্থা ফিরবে না। রপ্তানি বাজারে স্থিতিশীলতা দরকার।’
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই স্থবিরতা কেবল রাজনৈতিক নয়, সরকারের প্রস্তুতি ও নীতি পরিচালনায় স্বচ্ছতার অভাবও দায়ী। বিনিয়োগ গতি হারানো, বিদ্যমান শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া, বন্ধ না হলেও ধুঁকতে থাকা ও উৎপাদন কমে যাওয়া, বেকারত্ব বৃদ্ধি-কোনোটিই অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়। সর্বশেষ সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে বেকার জনগোষ্ঠী ২৬ লাখ ২০ হাজার, যা আগের বছরের তুলনায় দেড় লাখ বেশি। বেকারদের একটি বড় অংশই হতাশায় ভুগছে। নেশাগ্রস্ত হচ্ছে। অপরাধে জড়াচ্ছে। সামাজিক স্থিতি নষ্ট করছে।
বিনিয়োগের জন্য পরিবেশের প্রয়োজন হয়। স্থিতিশীল নীতিকাঠামোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ-জ্বালানি, অবকাঠামো, আইন-শৃঙ্খলা, সহজ শর্তে ব্যাংকঋণসহ আরো অনেক কিছুর প্রয়োজন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিন্তু সেটিই এখন অনিশ্চিত। জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ফেব্র“য়ারিতে হবে কি না, তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। অনেকেই বলছেন, ফেব্র“য়ারিতে নির্বাচন না-ও হতে পারে। এমন অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। এর ওপর ব্যবসার খরচ বাড়ছে, জ্বালানি নিরাপত্তা দুর্বল, আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি হয়নি। ফলে দেশের ব্যবসা-বিনিয়োগের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিল্প ও বিনিয়োগের এমন দূরবস্থা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন। তা না হলে দেশের অর্থনীতিতে ধ্বস নামবে। যত দ্রুত সম্ভব রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে।