খুলনা | সোমবার | ২৭ অক্টোবর ২০২৫ | ১২ কার্তিক ১৪৩২

বিভাগের ৩৬ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীকে ডেকেছে বিএনপি : তারেক রহমানের সাথে বৈঠক আজ

খুলনার ৬ আসনে মনোনয়নে খুলছে জট সমাধানের প্রত্যাশা তৃণমূলে

এন আই রকি |
০১:২৪ এ.এম | ২৭ অক্টোবর ২০২৫


খুলনার ছয়টি আসনে প্রায় দেড় ডজনের বেশি নেতা আগামী নির্বাচনে বিএনপি’র সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে সরব রয়েছেন। প্রতিনিয়ত নেতারা রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা, সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ, ধানের শীষের প্রচারণাসহ নানান কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। আসনগুলোতে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা এককভাবে সরব। সেখানে বিএনপি’র একাধিক প্রার্থীর প্রচারণায় দলের মধ্যে খানিকটা বিভেদের সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে গত এক যুগেরও বেশি সময় এলাকায় না থাকা, হামলা ও মামলার আসামি না হওয়া, আওয়ামী লীগের আমলে আত্মগোপনে থাকা একাধিক বিএনপি নেতারা সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে বেশ দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। অনেক সময় একজন বিএনপি প্রার্থী অপর প্রার্থী সম্পর্কে কুৎসা করছেন। যার কারণে সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিএনপি। 
দলীয় শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং আগামী নির্বাচনে ঐকবদ্ধভাবে কাজ করার উদ্দেশ্যে আজ সোমবার বিকেলে আগ্রহী প্রার্থীদের ডাকা হয়েছে কেন্দ্রে। খুলনা-৩ এবং খুলনা-৫ আসনে বিএনপি’র একক প্রার্থী হিসেবে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন রকিবুল ইসলাম বকুল এবং মোহাম্মদ আলী আসগার লবী। অন্যান্য চারটি আসনে প্রার্থীর ছড়াছড়ি রয়েছে। আজ সোমবার বিকেলে অনলাইনের মাধ্যমে আগ্রহী বেশ কয়েকজন প্রার্থীদের সাথে কথা বলবেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। আর এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দলের কেন্দ্রীয় সূত্রগুলো। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ নেতারা ঢাকায় অবস্থান করছেন। 
জানা গেছে, ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে আজ সোমবার বিকেলে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে বৈঠক করবেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সবাইকে ফোন করে ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত শুক্রবার রাত থেকে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার নেতাকে ফোন করে আমন্ত্রণ জানানো হয়। নবীন-প্রবীণ সব মনোনয়ন প্রত্যাশী সভায় আমন্ত্রণ পেয়েছেন।
জানা গেছে, খুলনা-১ (বটিয়াঘাটা-দাকোপ) আসনে মাঠে রয়েছেন বিএনপি’র ছয়জন প্রার্থী। এর মধ্যে জেলা বিএনপি’র সাবেক আহবায়ক এবং পূর্বে চার দলীয় জোটের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া আমীর এজাজ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা এবং কেন্দ্রীয় বিএনপি’র প্রভাবশালী এক নেতার বন্ধু হিসেবে হিসেবে পরিচিত জিয়াউর রহমান পাপুল, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা পার্থ দেব মন্ডল, খুলনা জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি এস এম শামীম কবির, খুলনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি তৈয়েবুর রহমান এবং এড. গোবিন্দ হালদার। প্রার্থীরা বিএনপি’র আন্দোলন ও সংগ্রামে মাঠে ছিল এবং সবাই প্রায়ই একাধিক মামলার আসামি। আমীর এজাজ খান ও জিয়াউল ইসলাম পাপুুল মিটিংয়ে উপস্থিত থাকার বিষয়ে সংকেত পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। 
খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) আসনটি জেলার সদর হিসেবেই পরিচিত। আসনটিতে হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছে তিনজনই। বর্তমান নগর বিএনপি’র সভাপতি এ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন প্রার্থী। তাছাড়া রয়েছেন নগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও আসনটির সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনজনই মিটিংয়ে উপস্থিত থাকার জন্য সিগন্যাল পেয়েছেন। নজরুল ইসলাম মঞ্জু জানিয়েছেন, তাকে ফোনে এবং এসএমএসের মাধ্যমে মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। 
শফিকুল আলম তুহিন জানান, আমাকে খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ফোন দিয়েছিলেন। 
খুলনা-৩ (দৌলতপুর-খালিশপুর-খানজাহানআলী) আসনে এককভাবে প্রার্থী রয়েছেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও বিগত নির্বাচনে বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল। 
খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আসনে প্রার্থী রয়েছেন বিএনপি’র তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক পারভেজ মল্লিক এবং বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শাহ কামাল তাজ। 
আজিজুল বারী হেলাল দেশের বাইরে অবস্থান করার কারণে মিটিংয়ে থাকতে পারছেন না। তবে পারভেজ মল্লিক উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনে একক প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও বিসিবির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী আসগর লবী। 
খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনটি সুন্দরবন উপকূলবর্তী এলাকার অনেকাংশ নিয়েই গঠিত। আসনটিতে আগ্রহী প্রার্থীরা হলেন জেলা বিএনপি’র আহবায়ক মোঃ মনিরুজ্জামান মন্টু, জেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক এড. মোমরেজুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পরিচালক সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, বাসসের চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীন, পাইকগাছা উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ডাঃ আব্দুল মজিদ, ঢাবির সাবেক ছাত্রনেতা ও কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সদস্য মোঃ রফিকুল ইসলাম। এরমধ্যে মনিরুজ্জামান মন্টু, মোমরেজুল ইসলাম ও সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী মিটিংয়ে উপস্থিত থাকার আহŸান পেয়েছে। ইতিমধ্যে তাদের কাছ থেকে ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়া হয়েছে। এদিকে প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এলাকা ছিল না। এমনকি কোন রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও অংশগ্রহণ করেনি।
খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত জানান, আগ্রহী সকল প্রার্থীদের ডাকা হচ্ছে না। দল থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কাকে ডাকা হবে। অনেককে আমি নিজেই ফোন দিয়েছে। আমার কলিগরাও ফোন দিয়েছে। অফিস থেকেও ফোন দেওয়া হয়েছে। মোট কতজনকে ফোন দেওয়া হয়েছে এটা বলা মুশকিল। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সোমবার বিকেল ৫টা পরে আগ্রহী প্রার্থীদের সাথে অনলাইনে কথা বলবেন। এখানে কোন প্রার্থী চূড়ান্ত হবে না। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক আলোচনা হতে পারে।