খুলনা | মঙ্গলবার | ২৮ অক্টোবর ২০২৫ | ১৩ কার্তিক ১৪৩২

বিএনপি’র আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে অনন্য নাম

দক্ষিণ খুলনার গণমানুষের কাছে হ্যামিলনের সেই বাঁশিওয়ালা জাতীয়তাবাদী আদর্শের যোদ্ধা এনামুল

পারভেজ মোহাম্মদ |
০১:৩৪ এ.এম | ২৮ অক্টোবর ২০২৫


জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকা সংখ্যা ততক্ষণে কয়েক হাজারে ঠেকেছে। ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে আঙিনায় পা রাখতে শুরু করে সাধারণ মানুষ। ইথারে ভেসে আসে একটি কণ্ঠস্বর। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা মিলেমিশে একাকার। কণ্ঠস্বরের সূত্র ধরে বাড়ছে মানুষের ভীড়, আস্থা, আর বিশ্বাসের এক অবিশ্বাস্য রূপ। এ যেন  দক্ষিণ খুলনার গণমানুষের কাছে হ্যামিলনের সেই বাঁশিওয়ালা। 
বিএনপি-এর আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার এস এম এনামুল হক  এক অনন্য নাম। তরুণ বয়সে ছাত্রদল থেকে রাজনীতির হাতেখড়ি শুরু হলেও তার রাজনৈতিক জীবন ধীরে ধীরে রূপ নেয় গণতন্ত্র রক্ষার এক অদম্য যাত্রায়। বহু হামলা-মামলা, নির্যাতন ও কারাভোগ পেরিয়েও তিনি আজও দলের তৃণমূল থেকে দক্ষিণ খুলনার এক অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে আছেন। এস এম এনামুল হকের  রাজনীতির শুরু ছাত্রজীবনে। স্কুল জীবনের ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব কাধে নিয়েই সফল। নেতৃত্বের স্বাক্ষর রাখেন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে। ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিয়ে রাজপথে সংগ্রামী চরিত্র গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে উপজেলা বিএনপি’র নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। উপজেলা বিএনপি’র নেতাকর্মীদের আস্থা অর্জনের পর  ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন জনপ্রিয় জননেতা। জন্মস্থান সোলাদানা ইউনিয়নের গণমানুষ তথা সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক এনামুল জনতার দাবির প্রেক্ষিতে  সোলাদানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বারবার নির্বাচিত হয়ে তিনি হয়ে ওঠেন অপ্রতিদ্ব›দ্বী। অন্যায়ের প্রতিবাদ, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষার লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখে তিনি এলাকার মানুষের  মাঝে এক দৃঢ় নেতৃত্বের পরিচয় দেন। হ্নতখন থেকেই তার মধ্যে দেখা যায় দৃঢ়তা, সাহস আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন মনোভাব। সময়ের সাথে সাথে তিনি হয়ে ওঠেন উপজেলা বিএনপি’র নির্ভরযোগ্য নেতা। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এনামুল ছিলেন নির্যাতনের শিকার। একের পর এক মিথ্যা মামলা, হামলা ও রাজনৈতিক হয়রানির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন তিনি। দলের অভ্যন্তরীণ দ্ব›েদ্ব মিথ্যা অপবাদে বহিষ্কার হয়েছেন। একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে কারাগারে কাটিয়েছেন দীর্ঘ সময়। হ্নকারাগারে থাকাকালীনও তিনি হাল ছাড়েননি, বরং নেতাকর্মীদের সাহস যুগিয়েছেন। তার এই অটল মনোভাব কর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে দেয় নতুন উদ্দীপনা। এনামুল শুধু একজন সাংগঠনিক নেতা নন তিনি কর্মীদের অভিভাবকও। হামলার শিকার কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো, আইনি সহায়তা করা কিংবা পারিবারিক কষ্ট ভাগ করে নেওয়া সবকিছুতেই তিনি ছিলেন অগ্রণী। একাধিক কর্মী জানান, আমরা যখন নির্যাতনের শিকার হয়েছি, তখন এনামুল ভাই-ই প্রথম আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তার সাহসই আমাদের বারবার রাজপথে ফিরিয়ে এনেছে।
রাজনীতি তার কাছে ছিল কেবল ক্ষমতার লড়াই নয়, বরং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। তার কথায়, ব্যক্তিগত ক্ষতির চেয়ে দেশের ক্ষতি বড়। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে না আনলে শান্তি নেই। তিনি সর্বদা সমাজ ও মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। সততা, মানবিকতা ও ত্যাগের এই সমন্বয় তাকে আলাদা করে তুলেছে। পাইকগাছার রাজনীতিতে তৃণমূল কর্মীদের কাছে তিনি এক অটল ভরসা। যখন আন্দোলন থমকে যায়, তখন এনামুল সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে কর্মীদের সাহস দেন। তার দৃঢ় নেতৃত্বে একাধিক সংকট উত্তরণ করেছে উপজেলা বিএনপি। স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিশ্বাস, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৬ (পাইকগাছা কয়রা) আসনটি  পুনরুদ্ধারে জাতীয়তাবাদী আদর্শের (হ্যামিলনের সেই বাঁশিওয়ালার মত) এক বাঁশিওয়ালা এনামুলের খুব প্রয়োজন।এড. আকরামুল হক তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে চায়ের দোকানদার থেকে শুরু করে মসজিদের ইমাম, সাধারণ মানুষসহ দলীয় নেতাকর্মীদের যখন গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছিল তখন এই মানুষটি (পাইকগাছা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান) এনামুল হক নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিতেন। জাতীয়তাবাদী দলের একজন ক্ষুদ্র কর্মী ও আইনজীবী হিসেবে আমি ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষী। সব সময় বলতেন, নেতাকর্মীদের দ্রুত জামিন করতে আমাকে কি সহযোগিতা করতে হবে। আমি কোন নেতাকর্মীকে জেলে দেখতে চাই না। আজ সেই মানুষটি দলীয় আন্তঃ কোন্দলের শিকার। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা যাচাই না করে এমনকি কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবের সময়টা পর্যন্ত না দিয়ে বহিষ্কার করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ দলীয় গণতন্ত্রের পরিপন্থী। ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ দলের বৃহত্তর স্বার্থে এ ধরনের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। 
উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব এসএম ইমদাদুল হক বলেন, ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে নিজ দলের প্রতিপক্ষ গ্র“পের ইন্ধন ও চক্রান্তের শিকার এসএম এনামুল হক। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঘের দখলের অভিযোগ তুলে এনামুলকে সাময়িক বহিষ্কার করেন সাবেক জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব। কিন্তু ওই বহিস্কারে এনামুলের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। জনপ্রিয়তার কারণে উদর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা এনামুলের বহিস্কার প্রত্যাহারের দাবি জানান, লতা ইউনিয়ন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক ইব্রাহিম গাজী, দেলুটি ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি সুজিত কুমার, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ কুমার গাইন, সোনাদানা ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি আমিনুর সরদার সাধারণ সম্পাদক হাকিম সানা, লস্কর ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আনারুল কাদির, রাড়–লী ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আঃ সাত্তার, গড়–ইখালী ইউনিয়ন বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল বাসার বাচ্চু, হরিঢালী ইউপির সহসভাপতি আঃ গফুর, কপিলমুনি ইউপির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ, গদাইপুর ইউপির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লিপটন সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। 
নেতৃবৃন্দ বলেন, আগামী দিনগুলোতেও নতুন বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনের যে ডাক বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দিয়েছেন, এনামুল দক্ষিণ খুলনার সেই সংগ্রামে নেতৃত্ব দেবেন। সেলক্ষে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় দপ্তর হতে এনামুলের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের একটি খবর বিজ্ঞপ্তির অপেক্ষায় এলাকার হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মীর ও সমর্থকরা। তাদের মতে ত্যাগী এই নেতার হাত ধরেই পাইকগাছা বিএনপি সংগঠিত হয়ে নতুন যুগের সূচনা করবে।