খুলনা | বৃহস্পতিবার | ৩০ অক্টোবর ২০২৫ | ১৫ কার্তিক ১৪৩২

রাতে অধিকাংশ ট্রলারে জ্বলে না বাতি

রূপসাঘাটে মানছে না শিশু শ্রম আইন

আল মাহমুদ প্রিন্স |
০১:৪৩ এ.এম | ৩০ অক্টোবর ২০২৫


খুলনার ব্যস্ততম রূপসাঘাট মাঝিরা কোনভাবে মানছে না শিশুশ্রম আইন। আইন আছে, প্রয়োগ নেই। আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করে বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছেন মাঝি-মাল­াদের কার্যক্রম। ম্যাসচুসেটস অঙ্গরাজ্যে ১৮৩৬ সালে শিশুশ্রম আইন পাস হয়েছিলো। সন্ধ্যার পর অধিকাংশ ট্রলারে জ¦লে না বাতি। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ততম এ খেয়াঘাট দিয়ে ট্রলার পারাপার হয় হাজার হাজার যাত্রী। ঘড়ির কাটা রাত নয়টা বেজে পারে না এর মধ্যে জনপ্রতি ট্রলারে পারানি আদায় করা হয় পাঁচ টাকা। এমনকি রাত সাড়ে ১০টার পর শুরু হয় রাহাজানি। অধিকাংশ যাত্রীদের কাছ থেকে জনপ্রতি পারানি আদায় করা হয় দশ টাকা। পূর্ব ও পশ্চিম রূপসা ঘাট দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হয় হাজার হাজার যাত্রী। পূর্ব ও পশ্চিম রূপসা ঘাট ইঞ্জিন চালিত নৌকা মাঝি সংঘের কার্যনির্বাহী কমিটির এ ব্যাপারে নেই কোনো মাথা ব্যথা। 
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, রূপসা ঘাটে ট্রলার মাঝিরা শিশুশ্রম আইন মানে না। দিনের বেলা এমনকি রাতেও আঠারো বয়সের নীচে ছেলেদের দিয়ে ট্রলার চালানো হচ্ছে আবার পারানি আদায় করানো হয়ে থাকে। যা দেখার কেউ নেই। রূপসা ঘাট ট্রলার মাঝিদের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাহাড় জমা হয়ে আছে। 
প্রথমতঃ শিশুশ্রম আইন মানছেই না। দ্বিতীয়তঃ সন্ধ্যার পর জ¦ালিয়ে রাখা হয় না অধিকাংশ ট্রলারে বাতি। তৃতীয়তঃ রূপসা ঘাটের দুই পাশে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য একাধিক পন্টুন থাকলেও, অধিকাংশ সময় ভালো পন্টুনে ট্রলার না ভীড়িয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করা হয় পুরাতন পন্টুনে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অহরহ পারাপার হতে হয় যাত্রীদের। পুরাতন পন্টুনে ট্রলার ভীড়ানোর কারণে এক শিশুসন্তান নদীতে পড়ে ডুবে মারা যায়। এছাড়া অহরহ ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘনা। নিয়ম অনুযায়ী ছোট ট্রলারে ২৫ জন এবং বড় ট্রলারে ৩৫ জন যাত্রী নেওয়ার কথা। কিন্তু সেখানো তাদের দেওয়া আইন অধিকাংশ ট্রলার মাঝি মানেই না। পূর্ব ও পশ্চিম রূপসা ঘাট ইঞ্জিন চালিত নৌকা মাঝি সংঘ’র আওতায় বর্তমানে ৯০ খানা ট্রলার রয়েছে। প্রতিদিন ৪৫ খানা ট্রলারে যাত্রী পারাপার করা হয়ে থাকে। বাকি ট্রলার অমিট রাখা হয়। অর্থাৎ, প্রতিথানা ট্রলার দিয়ে একদিন পর একদিন যাত্রী পারাপার করে থাকে। 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ পূর্ব ও পশ্চিম রূপসাঘাট ইঞ্জিন চালিত নৌকা মাঝি সংঘ আয়োজিত এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কমিটির ভিআইপি (সরকারি) ট্রিপ (যাত্রী বোঝাই) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ট্রিপ বন্ধ করে দেওয়ায় কমিটির অনেক কর্মকর্তার মধ্যে শুরু হয়েছে গাত্রদাহ।    
অভিযোগ উঠেছে, বিগত দিনে কমিটির সাধারণ সদস্যদের ভিআইপি ট্রিপ (সরকারি ট্রিপ নামে) না দিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের ট্রলার দিয়ে প্রতিদিন ভিআইপি ট্রিপ দিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে মোটা অংকের টাকা। স¤প্রতি কার্যনির্বাহী কমিটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হওয়ায় ভিআইপি ট্রিপ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে স্বস্তি পেয়েছে কমিটির সাধারণ সদস্যরা। 
বটিয়াঘাটার খারাবাদ এলাকার বাসিন্দা মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, রূপসাঘাট ট্রলার মাঝিদের দৌরাত্ম কখনো কমে না। ছোট ট্রলারে ২৫ জন এবং বড় ট্রলারে ৩৫ জন নেওয়ার কথা থাকলেও সেখানো তাদের দেওয়া আইন অধিকাংশ ট্রলার মাঝি মানেই না। বরং মাঝিদের সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে তারা আমলে না নিয়ে তাদের চিরাচরিত কার্যক্রম চালিয়ে যায়। 
ফকিরহাটের খাজুরা গ্রামের মোঃ সুমন শেখ, রূপসাঘাট ট্রলার মাঝিদের যাত্রী বেশি নেওয়ার ব্যাপারে কথা বললে তারা কর্ণপাত করে না। তিনি আরো বলেন, অধিকাংশ দিন সন্ধ্যার পর ১৪-১৫ বছর বয়সী ছেলেদের দিয়ে ট্রলার চালানো হয়। এমনকি পারানিও আদায় করা হয়। 
পূর্ব ও পশ্চিম রূপসা ঘাট ইঞ্জিন চালিত নৌকা মাঝি সংঘের সাধারণ সম্পাদক হারেজ হাওলাদার বলেন, ‘শিশুশ্রম আইন যাতে লঙ্ঘন না হয় এজন্য আমরা সচেতন আছি। তিনি বলেন, আমি নিজে ঘাটে উপস্থিত থেকে দেখাশুনা করে থাকি যাতে কম বয়সী ছেলেদের দিয়ে ট্রলার চালাতে না পারে।’