খুলনা | শুক্রবার | ৩১ অক্টোবর ২০২৫ | ১৬ কার্তিক ১৪৩২

বিশ্বকাপের জন্য ‘আকাশে’ ফুটবল স্টেডিয়াম বানাচ্ছে সৌদি আরব!

ক্রীড়া প্রতিবেদক |
১২:২৭ এ.এম | ৩১ অক্টোবর ২০২৫


ফুটবল স্টেডিয়াম আকাশে বানানোর পরিকল্পনা; শুনতে অবাস্তব মনে হলেও সামাজিক মাধ্যমে সেটিই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। সৌদি আরবের ‘নিওম স্টেডিয়াম’ নামের এই প্রস্তাবিত ভেন্যুটি বিশ্ব ফুটবলে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
এই স্টেডিয়ামটি ২০৩৪ বিশ্বকাপ আয়োজনের সৌদি আরবের প্রস্তুতি পরিকল্পনার অংশ। আগামী আট বছরে দেশটি নতুন ১১টি স্টেডিয়াম নির্মাণ করবে, সঙ্গে সংস্কার করা হবে আরও ৪টি বিদ্যমান স্টেডিয়াম।
ফিফায় জমা দেওয়া সৌদি আরবের বিড বইয়ে বলা হয়েছে, ‘নিওম স্টেডিয়াম হবে বিশ্বের সবচেয়ে অনন্য স্টেডিয়াম। মাঠ থাকবে মাটি থেকে ৩৫০ মিটার উঁচুতে, যেখানে শহরের নিজস্ব কাঠামো দিয়েই তৈরি হবে ছাদ। এটি হবে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।’
স্টেডিয়ামটি তৈরি হবে ‘দ্য লাইন’ নামের এক ভবিষ্যতনির্ভর স্মার্ট সিটির অংশ হিসেবে। ২০২১ সালে ঘোষিত এই প্রকল্পটি একটি সরলরেখার মতো শহর- দৈর্ঘ্যে ১৭০ কিলোমিটার, প্রস্থে ২০০ মিটার এবং উচ্চতায় সর্বোচ্চ ৫০০ মিটার। শহরটিতে থাকবে না কোনো গাড়ি, রাস্তা বা কার্বন নিঃসরণ। প্রায় ৯০ লাখ মানুষকে আবাসনের লক্ষ্য নিয়েই পরিকল্পনা করা হয়েছে ‘দ্য লাইন’।
যদিও প্রকল্পটির মূল কাঠামো এখনো নির্মাণাধীন, সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন শেষ হতে পারে ২০৪৫ সালে, অর্থাৎ বিশ্বকাপের ১১ বছর পর।
প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী, ‘নিওম স্টেডিয়াম’-এ থাকবে ৪৬ হাজার দর্শকের আসন, যা মাটি থেকে ৩৫০ মিটার ওপরে অবস্থান করবে। সৌদি আরবের অন্যান্য প্রস্তাবিত ভেন্যুগুলো থাকবে রিয়াদ, জেদ্দা, আল খোবার ও আভা শহরে। প্রতিটি স্টেডিয়ামেই থাকবে অনন্য স্থাপত্য; কোনোটিতে রঙিন আলোকসজ্জা, কোনোটিতে স্ফটিকের মতো নকশা, আবার কোনোটিতে স্থানীয় উপকরণ দিয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা।
২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর ফিফার এক বিশেষ কংগ্রেসে ২০৩৪ বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বাগতিক হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হয় সৌদি আরবের নাম।
ফিফা আগেই জানায়, এবার থেকে ৪০ হাজারের বেশি দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন অন্তত চারটি স্টেডিয়াম থাকলেই বিশ্বকাপ আয়োজন সম্ভব। অন্য কোনো দেশ বিড জমা না দেওয়ায় প্রতিদ্ব›দ্বী ছাড়াই আয়োজক হয় সৌদি আরব।
ফিফার ‘রোটেশন নীতি’ অনুযায়ী এবারের আয়োজন কেবল এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর জন্যই উন্মুক্ত ছিল। সম্ভাব্য স্বাগতিক দেশগুলোকে মাত্র ২৫ দিনের মধ্যে প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়, যার মধ্যে শুধুমাত্র সৌদি আরব আগ্রহ দেখায়।
এটি হবে ২১শ শতকে এশিয়ায় তৃতীয় বিশ্বকাপ। এর আগে ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া-জাপান এবং ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল।
২০৩৪ সালে সৌদি আরব এককভাবে আয়োজক হবে, কারণ ২০২৬ সালের আসর হবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর যৌথ উদ্যোগে; আর ২০৩০ সালে স্পেন, পর্তুগাল ও মরক্কোর পাশাপাশি দক্ষিণ আমেরিকার তিন দেশ উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়েতে কিছু ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের শতবর্ষ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে।
এখনো পুরো এক দশক সময় আছে সৌদি আরবের সামনে ভেন্যু নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ শেষ করার জন্য। তবে এর আগে নজর থাকবে ২০২৬ সালের উত্তর আমেরিকা বিশ্বকাপে, যা শুরু হবে আগামী ১১ জুন।
সেই আসরেই হয়তো শেষবারের মতো বিশ্বকাপ মঞ্চে দেখা যাবে দুই কিংবদন্তি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসিকে।