খুলনা | শুক্রবার | ৩১ অক্টোবর ২০২৫ | ১৬ কার্তিক ১৪৩২

‘গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি হলে দায় প্রধান উপদেষ্টার’

‘হ্যাঁ’ ভোটে জন্ম হওয়া বিএনপি’র মৃত্যু হবে ‘না’ ভোটে : পাটওয়ারী

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩৪ এ.এম | ৩১ অক্টোবর ২০২৫


অন্তর্র্বর্তী সরকারের কাছে ফেব্র“য়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাওয়ারী। এনসিপি মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘বিএনপি’র জন্ম হয়েছিল ‘হ্যাঁ’ ভোটের মধ্য দিয়ে। বিএনপি যদি ‘না’ ভোটে স্ট্রিক্ট থাকে, তাহলে বিএনপি’র মৃত্যু হবে ‘না’ ভোটের মধ্য দিয়ে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি একটি বড় দল। আমরা বলব, ‘না’ ভোটের মধ্য দিয়ে নিজেদের মৃত্যুর কবর রচনা করবেন না।’ ‎‎বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘রাজনীতির বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ পথরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জুলাই সনদ নিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, অস্পষ্টতার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে ঠেলে দিতে পারব না। গণভোট আগে হবে, না হবে এটা জামায়াত ও বিএনপি’র কুতর্ক। এটা থেকে বেরিয়ে তাদের নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে হবে। দেশের পরিস্থিতি ভালো না। সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালার ড্রাফট প্রকাশ্যে আনতে হবে এবং ফেব্র“য়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। এটা যদি না হয়, আর দেশ যদি গৃহযুদ্ধের দিকে যায়, তার দায় প্রধান উপদেষ্টাকে নিতে হবে।
জামায়াতের প্রতি আহŸান জানিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আপার হাউজের পিআর, লোয়ার হাউজে এনে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করেছেন। কিন্তু গণভোট প্রশ্ন জামায়াত একসময় বিএনপি’র সঙ্গে একত্র হয়ে যাবে। তারা দুই দল মিলে আসলে কুতর্ক করছে।’
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে কোনো ভাবে মেনে না নেওয়ার কথা উল্লেখ করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়। অনেকেই বলেছিলেন আওয়ামী লীগের ৫ লাখ নেতা-কর্মীর প্রাণ যাবে। আমরা কিন্তু আওয়ামী লীগের গায়ে হাত দেইনি। কিন্তু তারা যদি বাধা দিতে আসে, কঠোরভাবে প্রতিহত করব। বিএনপিকে বলব আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে আনবেন না।’
নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিকভাবে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে, ফলে এই কমিশনের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন এনসিপির এই মুখ্য সংগঠক।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান কমিশনের গঠন প্রক্রিয়া থেকেই এর পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থান স্পষ্ট, যা দেশের গণতন্ত্রের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে’
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘কমিশন যদি রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত থাকে, তাহলে তার অধীনে কোনো নির্বাচনই জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে না। এমন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত হয়ে যায় এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের বিশ্বাস ক্রমে হ্রাস পায়। এ অবস্থায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ছাড়া গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।’
এনসিপির মুখ্য সংগঠক আরও বলেন, জুলাই সনদ স্বাক্ষর না করে তাদের দল রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়েছিল, তবে পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে যে সিদ্ধান্তটি ছিল সঠিক ও দূরদর্শী। কারণ সেই সময়ে অনেকেই রাজনৈতিক সুযোগের আশায় তাড়াহুড়ো করে সনদে সই করেছিলেন, কিন্তু এনসিপি বুঝেছিল যে সেটি ছিল ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার শামিল। বর্তমানে সংস্কার কমিশনের যে সুপারিশনামা এসেছে, সেখানে প্রস্তাবনা-১ বাস্তবায়নই হতে হবে সরকারের প্রধান করণীয়। এই প্রস্তাবনার বাইরে সরকারের জন্য অন্য কোনো বিকল্প পথ থাকা উচিত নয়।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশনামা প্রকাশ না করা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, এখন বল রয়েছে ড. ইউনূসের কোর্টে। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তি হলেও বাংলাদেশের রাজনীতির মাটিতে পদক্ষেপ নিতে গেলে তাকেও পিছলে যেতে হয়।
এমন পরিস্থিতিতে আসিফ নজরুলের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ড্রাফট উন্মুক্ত না করে রাখলে এর পেছনে অসৎ উদ্দেশ্যের আশঙ্কা থেকেই যায়। যদি সেই ড্রাফটটি প্রকাশ করা হয় এবং দেখা যায় প্রস্তাবনাগুলো সঠিক ও বাস্তবসম্মত, তাহলে এনসিপি তা সমর্থন করবে। কিন্তু জনগণের অজান্তে কোনো প্রক্রিয়া চললে তারা তাতে অংশ নেবে না।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে আস্থাহীনতা, পক্ষপাত এবং অনিশ্চয়তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিচ্ছে। এই অবস্থায় স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন ও গণভোটের মতো জাতীয় সিদ্ধান্তগুলোতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই সময়ের দাবি।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, দেশ অন্য পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। ফেব্র“য়ারির মধ্যে নির্বাচন দিন। যদি ফেব্র“য়ারির মধ্যে নির্বাচন না দিতে পারেন তাহলে পরবর্তীতে যদি কোনো গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি হয় সেই দায়িত্ব আপনার কাঁধে বর্তাবে।
এ সময় সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালার ড্রাফট প্রকাশ্যে আনার দাবি জানান এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক। তিনি বলেন, সংস্কার কমিশন সুপারিশমালা দিয়েছে। ড. ইউনূসের কোর্টে এখন বল। উনি যেহেতু আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড়, বলা হয়ে থাকে বিদেশি খেলোয়াড়রা বাংলাদেশে খেলতে এলে পিছলে যায়। কারণ বাংলাদেশের মাঠ পিছলা। কিন্তু এই পিছলা যায়গায় আরও বেশি তেলমর্দন করেন আমাদের আইন উপদেষ্টা। উনি রাজনীতিবিদদের শুধু পিছলা খাওয়াতে চান। আপনারা সুপারিশমালার ড্রাফট জনসম্মুখে আনুন, তখনই এনসিপি এতে স্বাক্ষর করবে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, অস্পষ্টতার মধ্যদিয়ে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে ঠেলে দিতে পারবো না। গণভোট আগে হবে, না হবে এটা জামায়াত ও বিএনপি’র কুতর্ক। এটা থেকে বেরিয়ে তাদের নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে হবে। আর বিএনপি’র জন্ম হয়েছিল ‘হ্যাঁ’ ভোটের মধ্যদিয়ে। বিএনপি যদি ‘না’ ভোটে স্ট্রিক্ট থাকে, তাহলে বিএনপি’র মৃত্যু হবে ‘না’ ভোটের মধ্যদিয়ে। বিএনপি একটি বড় দল, আমরা বলবো, ‘না’ ভোটের মধ্যদিয়ে নিজেদের মৃত্যুর কবর রচনা করবেন না।
জামায়াতের প্রতি তিনি আহŸান জানিয়ে বলেন, আপার হাউজের পিআর, লোয়ার হাউজে এনে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করেছেন। কিন্তু গণভোট প্রশ্ন জামায়াত একসময় বিএনপি’র সঙ্গে একত্র হয়ে যাবে। তারা দুই দল মিলে আসলে কুতর্ক করছে।