খুলনা | শুক্রবার | ৩১ অক্টোবর ২০২৫ | ১৬ কার্তিক ১৪৩২

সাতক্ষীরায় সবজির বাজারে স্বস্তি ফিরলেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম, স্থিতিশীল রয়েছে চালের বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা |
০২:১৬ এ.এম | ৩১ অক্টোবর ২০২৫


সাতক্ষীরায় সবজির বাজারে স্বস্তি ফিরলেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম, স্থিতিশীল রয়েছে চালের বাজার। ভারত থেকে চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও স্থানীয় বাজারে সরবরাহ কম থাকায় কমছে না দেশি জাতের চালের দাম। ফলে বাজারে গিয়ে সাধারণ ক্রেতারা সবজি কিনতে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ বোধ করলেও  হিমশিম খেতে হচ্ছে পেঁয়াজ ও চাল কিনতে গিয়ে। তবে পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ৩০ অক্টোবর থেকে ভারতীয় চাল আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে দেশি চালের দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। 
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের পাইকারি সবজির বাজারে গিয়ে দেখা গেছে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। পাইকারি বাজারে আলু প্রতিকেজি ১৪ টাকা এবং বস্তা কাটা সাড়ে ১২ থেকে ১৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বেগুন স্থানীয় জাতের ৫০ টাকা এবং জেলার বাইরেটা ৪০ টাকা, স্থানীয় জাতের ফুলকপি ৭০/৭৫ ও জেলার বাইরের টা বিক্রি হচ্ছে ৬০/৬৫ টাকা কেজি। বাঁধা কপি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ওল কপি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, টমেটা প্রকারভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, সিম ৪০ টাকা, বরবটি ৩০ টাকা, কচুরমুখি প্রকারভেদে ১৫ থেকে ১৮ টাকা, কচু ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৮ থেকে ৩২ টাকা, খিরাই ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতা ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, কাঁচ কলা ৩০/৩২ টাকা, পেপে প্রকার ভেদে ১৪ থেকে ১৮ টাকা, ঝিঙে ১৫ টাকা, ধুন্দুল ১০/১২ টাকা, ধেড়স ১৩ থেকে ১৫ টাকা, চিচিংগা ১৪/১৫ টাকা, উচ্ছে ২৫ থেকে ২৮ টাকা, ওল দেশি ১০০ টাকা ও মাদ্রাজ জাতের ৭০ টাকা কেজি, মাটির আলু প্রকারভেদে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, জলপাই ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি। পুঁইশাক ২০ টাকা কেজি, লাল শাখ এক আটি ৭টাকা, পালন শাখ ১০ থেকে ১২ টাকা আটি এবং লাউ এক পিস ১২ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।  এছাড়া পাইকারি বাজারে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি। তবে খুচরা বাজারে প্রকারভেদে এসব সবজি ৫, ১০, ১৫ ও ২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে এসব সবজি ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। সরবরাহ বাড়ার সাথে সাথে সবজির দাম কমছে। 
সুলতানপুর বড়বাজারের সবজির আড়তদার মিয়ারাজ হোসেন জানান, বেশ কয়েকদিন থেকে বাজারে স্থানীয় জাতের শীতকালীন সবজি উঠতে শুরু করেছে। বাজারে সরবরাহ বাড়ার সাথে সাথে দামও কমছে। বর্তমানে প্রায় সব ধরনের সবজি সাধারণ ক্রেতাদের কিছুটা নাগালের মধ্যে এসেছে। এখন থেকে যত দিন যাবে সবজির দামও কমতে থাকবে। 
এদিকে সবজির বাজারে স্বস্তি ফিরলেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাক বেড়েছে। বর্তমানে পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা ও রসুন প্রকার ভেদে ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা কেজি। 
সুলতানপুর বড়বাজারের পাইকার আব্দুল আজিজ জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম একটু বাড়তির দিকে। কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। তবে অন্যান্য মসলা জাতীয় পণ্যের দাম প্রায় স্বভাবিক রয়েছে। 
অপর দিকে গত প্রায় দুইমাস ধরে চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। ভারতীয় চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও দেশি চালের দামের উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে ভারতীয় চাল কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশি মোটা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকা কেজি। মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৮-৭০ টাকায়। ২৮ জাতের চিকন চাল ৬৪ টাকা এবং ২৮ মোটা জাতের চাল ৬০-৬১ টাকা। আতপ মোটা ৪৬ ও আতপ চিকিন চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজি। এছাড়া বাসমতী চালের দাম কেজিপ্রতি ৮২-৮৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ভারত থেকে অমদানি করা এলসি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫১ টাকা, মিনিকেট ৬৬ টাকা, রতœা ৫২ টাকা, নাজির শাইল ৭৫ টাকা, কাটারিভোগ ৭৬ টাকা কেজি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত প্রায় দুই মাস ধরে বাজারে এই দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। আমদানি বাড়লেও দেশি চালের দামে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। 
চাল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে যে চাল আমদানি হচ্ছে তার খুব কম চাল সাতক্ষীরায় বিক্রি হচ্ছে। বেশির ভাগ চাল চলে যাচ্ছে দেশের উত্তরবঙ্গ, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে। যে কারনে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় সাতক্ষীরার স্থানীয় বাজারে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। যদি আমদানির মেয়াদ সরকার আর না বাড়ায় তাহলে চালের দাম বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। 
ভোমরা স্থলবন্দর কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান জানান, দেশে চালের বাজার স্থিতিশিল রাখার জন্য ভারত থেকে চাল আমদানির মেয়াদ আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। আমদানির শুরু থেকে ২৮ অক্টোরবর পর্যন্ত ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৪ হাজার ৪৫৮ গাড়িতে এক লাখ ৭২ হাজার ৫১১ দশমিক ৪৭৬ মেট্রিক টন চাল আমদানি করছে ব্যবসায়িরা। আগামী নভেম্বর পুরো মাসব্যাপী আমদানি অব্যাহত থাকায় চালের বাজার স্বাভাবিক থাকবে বলে জানান তিনি।