খুলনা | সোমবার | ০৩ নভেম্বর ২০২৫ | ১৯ কার্তিক ১৪৩২

খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন স্থগিত, তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ প্রার্থীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৪৩ এ.এম | ০৩ নভেম্বর ২০২৫


খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। সমিতির সদস্য সচিব শেখ নুরুল হাসান রুবা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।  রোববার দুপুর ২টায় সমিতির ১নং হল রুমে বিশেষ সাধারণ সভায় ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত করার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে নির্বাচন স্থগিতের সংবাদে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ আইনজীবীরা। রোববার বিকেলে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদ জানান জামায়াত সমর্থিত বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল ও এসসিপি সমর্থিত স্বতন্ত্র আইনজীবী পরিষদের প্রার্থীরা।
প্রেসক্লাবে বিকেল সাড়ে ৪টায় সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল মনোনীত এড. মোঃ আবুল খায়ের ও এড. শেখ জাকিরুল ইসলাম পরিষদ। এরপর বিকেল ৫টায় সংবাদ সম্মেলন করেন স্বতন্ত্র আইনজীবীদের প্যানেল আক্তার জাহান রুকু ও নিহিত কান্তি ঘোষ পরিষদের প্রার্থীরা।
উভয় পরিষদের প্রার্থীদের অভিযোগ, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সমিতির সাবেক সভাপতি খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম পরিষদের সব সদস্য পালিয়ে যান। ৬ আগস্ট বিএনপিপন্থি আইনজীবী আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চুকে আহŸায়ক ও নুরুল হাসান রুবাকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের এ্যাডহক কমিটি গঠন হয়। প্রতি বছরের ৩০ নভেম্বর সমিতির বার্ষিক নির্বাচন ও নতুন বছরের প্রথম দিন দায়িত্ব গ্রহণের প্রথা আছে। কিন্তু এ্যাডহক কমিটি নানা অজুহাতে ২০২৪ সালে নির্বাচন না দিয়ে সাধারণ সভায় তাদের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে নেয়। ২০২৬ সালের নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশন গঠন ও তফসিল ঘোষণা হয়। মনোনয়নপত্র বিক্রির নির্ধারিত দিন ৩০ অক্টোবর কোনও মনোনয়নপত্র তারা বিক্রি করেননি। তখন বলা হয়, ক্লারিক্যাল মিসটেকের জন্য ফরম বিতরণ করা যাচ্ছে না। ২ নভেম্বর পাওয়া যাবে। কিন্তু এদিন সকাল থেকে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র না পেয়ে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এরই মধ্যে অ্যাডহক কমিটি দুপুর ২টায় সমিতি ভবনের ১ নম্বর হলরুমে একটি জরুরি সভা দেখিয়ে আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন। তারাই সমিতির কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দেন।
ল’ইয়াস কাউন্সিলের সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সেক্রেটারি মনিরুল ইসলাম পান্না বলেন, গত ২০২৫ সালে মনোনয়ন বিক্রির শেষ দিনে কথিত সাধারণ সভার নামে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছিল। আজ (রোববার) একই কায়দায় আবারও এডহক কমিটি নির্বাচন স্থগিত করলো। এটা অগণতান্ত্রিক, নব্য ফ্যাসিস্টের বহিঃপ্রকাশ। 
তিনি বলেন, দেশে অনেক আইনজীবী সমিতিতে নির্বাচন হয়েছে এবং হচ্ছে। আইনজীবী সমিতির বর্তমান এডহক কমিটি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। যা নতুন বিপ্লবের সঙ্গে সরাসরি বিশ্বাস ঘাতকতার শামিল।
তিনি বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় ৩০ অক্টোবর আইনজীবীরা মনোনয়নপত্র ক্রয় করতে গেলে বিতরণ করা হয়নি। নির্বাচন কমিশনের প্রধান শেখ আব্দুল আজিজ ২ নভেম্বর রবিবার মনোনয়নপত্র বিতরণ করবেন বলে জানান। রোববার বেলা একটায় মনোনয়নপত্র কিনতে গেলে আবারও জানানো হয়, মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে না। দুপুর ২টায় কমিটি সাধারণ সভার ডেকে সাধারণ আইনজীবীদের কোন বক্তব্য না শুনে নির্বাচন স্থগিত এবং এডহক কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এবং অবিলম্বে জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে ল’ ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘নির্বাচনে বিএনপি ভরাডুবি আঁচ করতে পেরে দুরভিসন্ধিমূলকভাবে ভোট বানচাল করেছে। আমরা সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনকে সময় দিলাম। তারা ঘোষিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলে আইনজীবীদের নিয়ে কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবো।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি প্রার্থী এড. আবুল খায়ের, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এড. শেখ জাকিরুল ইসলাম, এড. মনিরুল ইসলাম পান্না, এড. শফিকুল ইসলাম লিটন, এড. আব্দুল মান্নান, এড. আবু ইউসুফ মোল্লা, এড. লুৎফর রহমান ও এড. লিয়াকত আলী প্রমুখ।
অপর দিকে, স্বতন্ত্র প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী এড. আক্তার জাহান রুকু সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম নির্বাচন দিয়ে ভোট কারচুপি করতো। ক্ষমতার দখল নিতো। কিন্তু আজ বিএনপি ভোট না দিয়েই ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চায়। আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর অর্থ, এর আগে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে বলে আশা করছে। এরপর তারা ভোট ছাড়াই বারের দখল নিয়ে আয়ের কোটি কোটি টাকা লোপাট করবে। সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিলাম। এরপর আমরা নতুন এ্যাডহক কমিটি ঘোষণা এবং ইসি কমিটির রুমে তালা মারতে বাধ্য হবো।’ 
এ সময় উপস্থিত ছিলেন তাদের প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিহিত কান্তি ঘোষ, এড. এ এম মমিনুজ্জামান (টুলু), এড. সাবিত্রি চক্রবর্তী, এড. এস এম মাসুদুর রহমান, এড. হাফিজুর রহমান শান্ত ও এড. মোঃ মহসিন প্রমুখ।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্ত অ্যাডহক কমিটি সাধারণ সভার সিদ্ধান্তে নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে আমরা।’
বিএনপিপন্থি খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির এ্যাডহক কমিটির সদস্যসচিব নুরুল হাসান রুবা বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর আমাদের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু সমিতির সদস্যরা আশঙ্কা করছেন, ভোটের পরে পলাতক সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর চার্জশিট ও বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকে ভোটে জেতার জন্য সাইফুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিচ্ছেন। এজন্য সাধারণ সদস্যরা সভা ডাকার জন্য চিঠি দেন আমাদের। সেই সভায় সর্বসম্মতিতে নির্বাচন কিছু দিনের জন্য পেছানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ৯৪ জন আইনজীবী নির্বাচন ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্থগিতের আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে বেলা ২টায় বিশেষ সাধারণ সভা আহŸান করা হয়। সভায় নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়েছে।