খুলনা | বুধবার | ০৫ নভেম্বর ২০২৫ | ২১ কার্তিক ১৪৩২

মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে ‘বাবা’ হিসেবে দেখিয়ে প্রতারণা!

বাবার পরিচয় শনাক্তে নাচোল ইউএনও কামালের ডিএনএ পরীক্ষা করবে দুদক

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩৮ এ.এম | ০৫ নভেম্বর ২০২৫


বাবার পরিচয় জালিয়াতির অভিযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ কামাল হোসেনের ডিএনএ পরীক্ষা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার  রাজধানীতে দুদক কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মোঃ আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 
তিনি জানান, ইউএনও কামাল হোসেন মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে ‘বাবা’ হিসেবে দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ৩৫তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পান। বিষয়টি তদন্তে এখন ডিএনএ পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে নাচোলে যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম ও ঘুস কান্ডে জড়িয়ে পড়েছেন ইউএনও কামাল হোসেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ ডিসেম্বর কমিশনের উপসহকারী পরিচালক মোঃ মনজুরুল ইসলাম মিন্টু বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলা করেন। 
মামলায় উলে­খ করা হয়, কামাল হোসেন তার প্রকৃত পিতা-মাতা মোঃ আবুল কাশেম ও মোছাঃ হাবীয়া খাতুনের পরিবর্তে চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আহসান হাবীব এবং চাচি মোছাঃ সানোয়ারা খাতুনের নাম ব্যবহার করেন। এই জাল পরিচয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ লাভ করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, মোঃ কামাল হোসেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সিরাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি এবং ফিলিপনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়নকালে পিতার নাম হিসেবে তার প্রকৃত জন্মদাতা মোঃ আবুল কাশেমের নাম ব্যবহার করেন। তবে পরবর্তী সময়ে একই স্কুলে ৯ম শ্রেণিতে তিনি তার আপন চাচা মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আহসান হাবীব এবং চাচি মোছা. সানোয়ারা খাতুনকে পিতা-মাতা সাজিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন। এরপর এসএসসি, এইচএসসিসহ বিভিন্ন উচ্চতর ডিগ্রি পরীক্ষায় চাচা-চাচির নামই পিতা-মাতার নাম হিসেবে ব্যবহার করেন। এছাড়া প্রতারণার মাধ্যমে মোঃ কামাল হোসেন তার জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রকৃত পিতা-মাতার পরিবর্তে চাচা-চাচির নামই ব্যবহার করেন।
মামলায় উলে­খ করা হয়েছে, মোঃ কামাল হোসেনের জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে পিতা-মাতার নামের জায়গায় চাচা-চাচির নাম উলে­খ রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং চাকুরি লাভসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগের উদ্দেশ্যে তিনি আপন চাচা-চাচিকে পিতা-মাতা সাজিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে চরম প্রতারণা করেছেন। তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে চাকুরি নেন।
এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪২০ (প্রতারণা), ৪৬৭ (মূল্যবান জামানত জাল), ৪৬৮ (প্রতারণার উদ্দেশ্যে জাল করা) ও ৪৭১ (জাল দলিল ব্যবহার) ধারায় মামলা করা হয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে পিতৃপরিচয় পরিবর্তনের অভিযোগ প্রমাণে এখন দুদক ডিএনএ টেস্টের উদ্যোগ নিয়েছে।
বর্তমানে মামলাটির ডিএনএ টেস্ট না করতে জোর তদবির চালাচ্ছেন কামাল হোসেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী ছিলেন কামাল হোসেন মাঠ প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা তা নিশ্চিত করেন। সমালোচনার মুখে নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলা থেকে বদলি হয়ে গত ৮ জুলাই থেকে বর্তমানে নাচোল ইউএনও হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন মোঃ কামাল হোসেন। নাচোলে যোগদানের কিছুদিন পরই নানা অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যে মশগুল হয়ে পড়েছেন কামাল হোসেন।
নাচোল উপজেলার ঠিকাদার আকতারুল ইসলাম বলেন, নাচোলে যোগদানের পর থেকে ইউএনও কামাল হোসেন এলজিইডি সহ বিভিন্ন দপ্তরের টেন্ডার বিল পাশ করাতে পাঁচ পার্সেন্ট হারে ঘুষ নিচ্ছেন। কিছুদিন আগে আমার একটি টেন্ডার বিলে সই করার জন্য তার সিএস রবিউলের মাধ্যমে ফাইল প্রতি পাঁচ পার্সেন্ট ঘুষ নেন ইউএনও।
সাংস্কৃতিক শিল্পী অলিউল হক ডলার বলেন, সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত ৩৬ হাজার টাকার আমার নামের চেক গত এক মাস থেকে ইউএনও আটকে রেখেছেন। বিভিন্ন অজুহাতে আমাকে হয়রানি করছেন ইউএনও।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামাল হোসেনের সাথে একাধিকবার তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 
এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, নাচোল ইউএনওর বিষয়ে তার যাবতীয় কাগজপত্র তদন্ত চলছে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।