খুলনা | রবিবার | ০৯ নভেম্বর ২০২৫ | ২৫ কার্তিক ১৪৩২

বিভিন্ন সংগঠনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ : প্রতিবাদে খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ আজ

নগরীতে দুর্বৃত্তদের অতর্কিত হামলায় সাংবাদিক নেতা শাওন ও মনি আহত

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:২৮ এ.এম | ০৯ নভেম্বর ২০২৫


সংবাদে বক্তব্য নিতে যেয়ে দৈনিক আমার দেশ-এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এহতেশামুল হক শাওন ও স্টাফ রিপোর্টার কামরুল হোসেন মনির উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শনিবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে নগরীর শিববাড়ি মোড়স্থ একটি রেস্টুরেন্টের নিচে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহত দুই সাংবাদিককে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 
এহতেশামুল হক শাওন বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার সহ-সভাপতি ও খুলনা প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য। কামরুল হোসেন মনি মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনা ও খুলনা প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য। এ ঘটনায় সাংবাদিক সমাজের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।  
আহত সাংবাদিক এহতেশামুল হক শাওন জানান, একটি নিউজের বক্তব্য নেওয়ার জন্য ০১৭১১-৮৯৩৩০৯ নাম্বারে কল করলে রিসিভ করে কথা বলতে-বলতে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে শান্ত হলে আমি বলি আপনি কোথায় আছেন। তিনি বলেন, আমি শিববাড়ি মোড়ের সুলতান ডাইন রেস্টুরেন্টের নিচে আছি। তখন আমি (শাওন) বলি সামনা-সামনি কথা বললে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে। তখন তিনি (জনৈক বিপ্লব আবির) বলেন, আসেন আমি এখানে আছি। আসেন এক সাথে চা খাব। আমি আর আমার দেশ’র স্টাফ রিপোর্টার মনি মোটরসাইকেলযোগে সেখানে গিয়ে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে দেখি ৭/৮ জন অপেক্ষা করছে। এখানে কথা বলার একপর্যায়ে ব্যুরো চীফ কে? তখন আমি এগিয়ে যাই, সাথে সাথে তারা আমার উপরে হামলা করে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। আমি দৌড় দিয়ে পাশর্^বর্তী টাইগার গার্ডেনে গিয়ে আশ্রয় নিই। আর মনিকে তারা মারতে-মারতে মাটিতে ফেলে পাড়াতে থাকে। আশপাশের লোকজন চলে আসলে তারা পালিয়ে যায়। 
এদিকে, সাংবাদিকরা খবর পেয়ে টাইগার গার্ডেনে আশ্রয় নেওয়া শাওন ও মনিকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এর মধ্যে জরুরি সেবা ৯৯৯ ফোন করলে ৪৫ মিনিট পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছায়। এতে সাংবাদিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ কবির হোসেন বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। 
এদিকে হামলার খবর পেয়ে বিএনপি’র মহানগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় তিনি উপস্থিত সাংবাদিক ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন।
অপর দিকে, খুলনার দুই সাংবাদিক নেতার উপর অতর্কিত হামলার ঘটনায় সাংবাদিক সমাজের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিএফইউজে’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন ও মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার সভাপতি মোঃ আনিসুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হিমালয়, কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক রানা, নির্বাহী সদস্য মুহাম্মদ নূরুজ্জামান ও সোহরাব হোসেন। অনুরূপ বিবৃতি দিয়েছেন বিএফইউজের সাবেক সহ-সভাপতি ড. মোঃ জাকির হোসেন, আবু তৈয়ব ও মোঃ রাশিদুল ইসলাম, সাবেক নির্বাহী সদস্য শেখ দিদারুল আলম ও এইচ এম আলাউদ্দিন।
এছাড়া খুলনা প্রেসক্লাবের আহবায়ক এনামুল হক, সদস্য সচিব রফিউল ইসলাম টুটুল, নির্বাহী সদস্য শেখ দিদারুল আলম, মিজানুর রহমান মিলটন, কৈশিক দে, আহমদ মুসা রঞ্জু ও আশরাফুল ইসলাম নূরও অনুরূপ বিবৃতি দিয়েছেন।
সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, সাংবাদিক নেতা এহতেশামুল হক শাওন ও কামরুল হোসেন মনির ওপর হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বলেন, মুক্ত গণমাধ্যম বিরোধী যে কোনো অপতৎপরতা রুখতে সাংবাদিক সমাজ বদ্ধপরিকর। 
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, অতীতেও কোনো ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচার সাংবাদিকদের সত্য প্রকাশ থেকে নিবৃত্ত করতে পারেনি। সুতরাং আগামীতেও কোনো অপশক্তির কাছে সাংবাদিকরা আত্মসমর্পণ করবে না। নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা রোধ করতে না পারলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে। পাশাপাশি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারও সংকটের দিকে ধাবিত হবে। 
নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি স¤প্রতি বিভিন্ন স্থানে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক হামলা করা হচ্ছে। এসব হামলা মুক্ত সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন আঘাত।
এদিকে, সাংবাদিক নেতা এহতেশামুল হক শাওন ও কামরুল হোসেন মনির ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ ও জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। খুলনা প্রেসক্লাব ও মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনা যৌথভাবে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
কেসিআরএ : সংবাদ সংগ্রহকালে বিএফইউজে’র সহকারী মহাসচিব দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ব্যুরো প্রধান এহতেশামুল হক শাওন এবং একই পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও খুলনা ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন-কেসিআরএ’র কোষাধ্যক্ষ কামরুল হোসেন মনির ওপর সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন কেসিআরএ নেতৃবৃন্দ। একই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
এছাড়া সাংবাদিক নেতা এহতেশামুল হক শাওন ও কামরুল হোসেন মনির ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ ও জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে আগামীকাল রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় খুলনা প্রেসক্লাবের ঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশে সংহতি জানিয়ে কেসিআরএ’র সদস্যদের উপস্থিত থাকার জন্য আহŸান জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। 
বিবৃতিদাতারা হলেন এসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন আহমেদ, সহ-সভাপতি নূর হাসান জনি ও শিশির রঞ্জন মল্লিক, সাধারণ সম্পাদক আহমদ মুসা রঞ্জু, যুগ্ম-সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম নূর ও আনিছুর রহমান কবির, দপ্তর সম্পাদক জয়নাল ফরাজী, কার্যনির্বাহী সদস্য বিমল সাহা, ইয়াছিন আরাফাত রুমি ও রকিবুল ইসলাম মতি প্রমুখ।
খুলনা টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটি : বিএফইউজে সহকারী মহাসচিব ও দৈনিক আমার দেশ খুলনা ব্যুরো প্রধান এহতেশামুল হক শাওন এবং স্টাফ রিপোর্টার কামরুল হোসেন মনির ওপর হামলার ঘটনায় খুলনা টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটি গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। খুলনা টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটি মনে করে, সাংবাদিকদের ওপর হামলা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও পেশাগত নিরাপত্তার জন্য এক ভয়াবহ হুমকি।
সংগঠনের সভাপতি মোস্তফা জামাল পপলু, সাধারণ সম্পাদক রকিবুল ইসলাম মতি, কোষাধ্যক্ষ বেল্লাল হোসেন সজলসহ সংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দ এক যৌথ বিবৃতিতে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একই সঙ্গে তারা আহত সাংবাদিকদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন এবং দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
অনলাইন জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশন : সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় অনুরুপভাবে তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও  প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন খুলনা অনলাইন জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মিলন।
নগর বিএনপি : দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার খুলনা ব্যুরো চীফ ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহকারী মহাসচিব এহতেশামুল হক শাওন ও দৈনিক প্রবাহের মফস্বল কামরুল মনি’র ওপর সন্ত্রাসী হামলা ও এলোপাতাড়ি মারধরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে খুলনা মহানগর বিএনপি। শনিবার প্রদত্ত বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ ঘটনার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন। 
বিবৃতিদাতারা হলেন বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, নগর বিএনপি’র সভাপতি এড. শফিকুল আলম মনা, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাদী, মাসুদ পারভেজ বাবু, চৌধুরী হাসানুর রশিদ মিরাজসহ ৫ থানার নেতৃবৃন্দ। অনুরুপ বিবৃতি দিয়েছেন নগর বিএনপি’র মিডিয়া সেলের আহবায়ক মিজানুর রহমান মিলটন ও সদস্য সচিব রকিবুল ইসলাম মতি।
জেলা বিএনপি : বিএফইউজে’র সহকারী মহাসচিব, খুলনা প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য ও দৈনিক আমার দেশ’র খুলনা ব্যুরো চীফ এহতেশামুল হক শাওন এবং আমার দেশ পত্রিকার ব্যুরো অফিসের রিপোর্টার ও দৈনিক প্রবাহের মফস্বল কামরুল হোসেন মনি’র ওপর অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলা ও এলোপাতাড়ি মারধরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন খুলনা জেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ। শনিবার খুলনা জেলা বিএনপি’র আহবায়ক মোঃ মনিরুজ্জামান মন্টু ও ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী যৌথ বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ ঘটনার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। পেশাদার সাংবাদিকদের ওপর এধরণের ন্যাক্কারজনক হামলা স্বাধীন গণমাধ্যমের উপর হুমকি স্বরূপ। অবিলম্বে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনগণের নিরাপত্তা বিধানে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে উদাত্ত আহŸান জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
জামায়াতে ইসলামী : অনুরুপ বিবৃতিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও  প্রতিবাদ জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর খুলনা অঞ্চল নেতৃবৃন্দ।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, শনিবার বেলা সোয়া ৩টার দিকে নগরীর ব্যস্ততম এলাকা বাবরী চত্বরে (শিববাড়ি মোড়) প্রকাশ্যে দুইজন সাংবাদিকের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনায় নগরবাসীকে বিচলিত করে তুলেছে। অবিলম্বে প্রশাসনের প্রতি এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
বিবৃতিদাতারা হলেন জামায়াতের সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, টিম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মশিউর রহমান খান, মাস্টার শফিকুল আলম ও হাফেজ মুহাদ্দিস রবিউল বাসার, মহানগর আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান ও সেক্রেটারি এড. শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন ও সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা জেলা আমীর অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল ও সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান, বাগেরহাট জেলা আমীর মাওলানা রেজাউল করিম ও সেক্রেটারি শেখ মোঃ ইউনুস।