খুলনা | মঙ্গলবার | ১১ নভেম্বর ২০২৫ | ২৭ কার্তিক ১৪৩২

কোর্টে হাজিরা দিতে গিয়েই নিহত দাবি স্ত্রীর

গাড়ি থেকে নামলেন, ৬ থেকে ৭টি গুলি পড়ে গেলেন রক্তাক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩৪ এ.এম | ১১ নভেম্বর ২০২৫


রাজধানীর পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুন (৫৬) নিহত হয়েছেন। ছয় থেকে সাতটি গুলি ছোড়েন। এরপর এক ব্যক্তির বুকের ডান পাশে গুলি করেন। তাঁর হাতেও গুলি লাগে।’ সোমবার আদালতে তিনি একটি মামলার হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী রিপা আক্তার। গতকাল বেলা ১১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে এলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মামুন ল²ীপুর সদরের মোবারক কলোনির এস এম ইকবাল হোসেনের ছেলে।
নিহত মামুনের স্ত্রী রিপা আক্তার জানান, আমার স্বামী বিএনপি সমর্থিত একজন কর্মী ও পাশাপাশি ব্যবসা করতো। আজ তার কোর্টে হাজিরা ছিল। আমরা জানতে পারি আমার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে আছেন। পরে ঢাকা মেডিকেলে হাসপাতালে এসে আমার স্বামীকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই।
নিহত ব্যক্তি একসময় আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের সহযোগী ছিলেন, বলছে ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি সূত্র। অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে তাঁদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল বলে জানায় পুলিশ।
ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি দৌড়ে  হাসপাতালের গেট দিয়ে ঢোকেন। পেছন থেকে বন্দুক হাতে দু’জন ব্যক্তি হাসপাতালের গেট থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। ফুটেজে সাতটি গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এর মধ্যে তিনটি গুলি ওই ব্যক্তির শরীরে লাগে।
এদিকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলের ওয়ার্ড মাস্টার মহিবুল্লাহ জানান, আনুমানিক বেলা ১১টার দিকে তাদের হাসপাতালের সামনের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। শব্দ শুনে হাসপাতালের মেইন গেটের সামনের এসে ওই ব্যক্তিকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখি। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি দেখে সেখান থেকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসি। তবে দায়িত্বরত চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির খালাতো ভাই হাফিজ জানান, আমার ভাই তারিক সাঈদ মামুন একজন সাধারণ মানুষ। কী কারণে তাকে কে হত্যা করা হলো, আমি জামি না। সে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। কারা তাকে হত্যা করেছে, কী কারণে করেছে আমার জানা নেই।
সিসিটিভি ফুটেছে দেখা যায়, হাসপাতালের সামনে দুইজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এসে গুলি করে। পরে তারা নির্দ্বিধায় পালিয়ে যায়।
শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। তিনি বলেন, তারিক সাঈফ মামুন নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী কি না বলতে বলতে পারছি না। তবে তিনি ক্যাপ্টেন ইমন গ্র“পের লোক ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
ডিসি তালেব বলেন, তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। আজ (সোমবার) সে আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েছিল। সেখান থেকে বের হওয়ার পরেই দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
জানা যায়, নিহত সাঈফ মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ক্যাপ্টেন ইমনের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। তবে তার সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবৎ শীর্ষ সন্ত্রাসী ক্যাপ্টেন ইমনের দ্ব›দ্ব চলছিল। দীর্ঘ ২৪ বছর জেল খাটার পর ২০২৩ সালে তিনি জেল থেকে বের হন।
এর আগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তেজগাঁও সাত রাস্তায় মামুনকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। ওই ঘটনায় মামুন আহত হলেও পথচারী ভুবন চন্দ্র শীল নিহত হয়। নিহত মামুন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী এবং সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাই শহীদ সাঈদ আহমেদ টিপু হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।