খুলনা | শুক্রবার | ১৪ নভেম্বর ২০২৫ | ২৯ কার্তিক ১৪৩২

হামজার জোড়া গোলের পরও জয় বঞ্চিত বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক |
১১:৩২ পি.এম | ১৩ নভেম্বর ২০২৫


নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ। স্কোরলাইন বাংলাদেশ ২, নেপাল ১। চতুর্থ রেফারি সায়মন সানি পাঁচ মিনিট ইনজুরি টাইম দেখান। ইনজুরি সময়ের তৃতীয় মিনিটে কর্নার থেকে নেপাল গোল করে সমতা আনে। এতে আবারো ইনজুরি টাইমের গোলে জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশের।

বাংলাদেশ প্রথমার্ধে ১-০ গোলে পিছিয়ে ছিল। হামজা চৌধুরী দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম পাঁচ মিনিটে জোড়া গোল করে বাংলাদেশকে লিড এনে দেন। এরপর খেলা বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। কোচ হামজাকে ৮০ মিনিটে তুলে নেন। এরপর নেপাল ম্যাচে খানিকটা প্রাণ ফিরে পায়।

নেপালের একটি আক্রমণ ক্রসবারে লেগে ফেরত আসে। ইনজুরি সময়ের তৃতীয় মিনিটে কর্নার থেকে অনন্ত তামাং দারুণ দক্ষতায় ফ্লিক করেন। বাংলাদেশের ডিফেন্স জটলা ও গোলরক্ষক মিতুল মারমাকে পরাস্ত হন। নেপাল স্বাগতিকদের জয় ছিনিয়ে নিয়ে উল্লাসে মাতে।

শেষ মুুহূর্তে গোল হজম করে ম্যাচ হারা কিংবা পয়েন্ট হারানো বাংলাদেশের নতুন কিছু নয়। ৯ অক্টোবর ঢাকায় হংকংয়ের বিপক্ষে ৩-৩ গোলে সমতা আনার পরও ইনজুরি সময়ে গোল খেয়ে ম্যাচ হেরেছিল। এক মাস পর প্রীতি ম্যাচেও সেই একই পুনরাবৃত্তি।

১৮ নভেম্বর ঢাকায় এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচের প্রস্তুতির জন্য আজ নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলেছেন জামালরা। জাতীয় স্টেডিয়ামে চলমান ম্যাচের প্রথমার্ধে সফরকারী নেপাল ১-০ গোলে এগিয়ে রয়েছে।

ম্যাচের ৩২ মিনিটে নেপাল গোল পায়। বাঁ প্রান্ত থেকে আক্রমণ করে নেপাল। ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিন নেপালের ফরোয়ার্ডকে ঠিক মতো মার্কিং করতে পারেননি। নেপালি ফুটবলারের কাটব্যাক ক্লিয়ার করতে পারেননি সোহেল রানা। ফলে খানিকটা দৌড়ে এসে রোহিত চাদের নেওয়া জোরালো শট বাংলাদেশের ডিফেন্স ও গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে সমস্যা হয়নি।

হোম ম্যাচ। প্রায় দুই সপ্তাহের অনুশীলন। এরপরও বাংলাদেশ নেপালের বিপক্ষে প্রথমার্ধে তেমন আশাব্যাঞ্জক পারফরম্যান্স করতে পারেনি। বল দখলে থাকলেও সংঘবদ্ধ ও পরিকল্পিত আক্রমণ দেখা যায়নি। ফরোয়ার্ড রাকিব ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিম গোলের সুযোগ পেয়েও ফিনিশিং দক্ষতায় বল পোস্টে পাঠাতে পারেননি।

হামজা অন্য দিনের মতো আজও মাঠ জুড়েই খেলেছেন। আক্রমণের সময় নেপালের বক্সে হাত তুলে বল চেয়েছিলেন। সতীর্থ সোহেল রানা তাকে পাস না দিয়ে উল্টো লক্ষ্যভ্রষ্ট শট করেন। হামজা ডান প্রান্তে রানিংয়ে পা ঘুরিয়ে পাস দিয়ে তার জাত চিনিয়েছেন।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার সোহেল রানার পরিবর্তে সামিত সোমকে নামান কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটেই বাঁ প্রান্ত থেকে ক্রস দেন ফাহিম।

নেপালের ডিফেন্ডার ক্লিয়ার করলেও অধিনায়ক জামালের পায়ে পড়ে। তিনি বলটি হালকা উঠিয়ে হামজার উদ্দেশ্যে পাঠান। হামজা বক্সের মধ্যে শূন্যে লাফিয়ে শট নেন।

বল জালে জড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে উল্লাস। বাইসাইকেল কিকে বাংলাদেশের গোল সচারচর হয় না। তাই কোচিং স্টাফ ও দলের সবাই এই গোলের উদযাপন করেছে বিশেষভাবে।

ম্যাচ সমতা আনার তিন মিনিটের মধ্যেই বাংলাদেশ আবার গোল পায়। এবার ফরোয়ার্ড রাকিবকে বক্সের মধ্যে ফাউল করেন সুমন শ্রেষ্ঠা। বল নেপালের বক্স থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। রাকিবও বলের পেছনে ছুটছিলেন। সেই সময় সুমন রাকিবকে বাধা দিলে বক্সের মধ্যে পড়ে যান। তখন লঙ্কান রেফারি কাওসুন লাকমাল পেনাল্টির বাঁশি বাজান। নেপালি ফুটবলাররা পেনাল্টির প্রতিবাদ জানালেও রেফারি তার অবস্থানে অনড় থাকেন। হামজা হালকা শটে পেনাল্টি থেকে বাংলাদেশকে লিড এনে দেন।

২৫ মার্চ ভারতের শিলংয়ে বাংলাদেশের জার্সিতে প্রথম ম্যাচ খেলেন হামজা। ৪ জুন ভুটানের বিপক্ষে ঢাকায় প্রীতি ম্যাচে হামজা বাংলাদেশের হয়ে প্রথম গোল করেন। ৯ অক্টোবর ঢাকায় হংকং ম্যাচে দুর্দান্ত ফ্রি কিকে করেছিলেন নিজের দ্বিতীয় গোল। আজকের জোড়া গোলে হামজার গোল সংখ্যা ৪ আর ম্যাচ ৫।

আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হয় কিউবা মিচেলের। তাকে কোচ ৮০ মিনিটে হামজার পরিবর্তে নামান। সিঙ্গাপুর ম্যাচের মতো আজকের ম্যাচেও খেলোয়াড় পরিবর্তন নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলেন ক্যাবরেরা। প্রীতি ম্যাচ হওয়ায় দুই দলের সম্মতিতে ছয় জন ফুটবলার পরিবর্তন করা যায়। বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধে ছয় জন ফুটবলার পরিবর্তন করেছেন। দুই সোহেল রানা, জামাল, ফাহিম, হামজা ও জায়ানকে উঠিয়ে নেন কোচ। এর মধ্যে জায়ান ও হামজার হালকা চোট দেখা গেছে ডাগ আউটে।