খুলনা | শনিবার | ১৫ নভেম্বর ২০২৫ | ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

জাল টাকার কালো ছায়া কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

|
১২:২৪ এ.এম | ১৫ নভেম্বর ২০২৫


জাল টাকার বিস্তার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দেশের অর্থনীতি এবং আসন্ন নির্বাচনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ  তৈরি হয়েছে। জাল টাকার গভীর ও বিপজ্জনক এই প্রভাব কেবল একটি আর্থিক সমস্যা নয়, এটি এখন আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও এক বড় ধরনের হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জাল নোট প্রস্তুতকারী চক্রটি ভারতের অভ্যন্তরে তৈরি করে অত্যন্ত নিখুঁত জাল টাকা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে সরবরাহ করছে।
এক লাখ জাল টাকার জন্য ক্রেতাকে দিতে হচ্ছে প্রায় ৩৬ হাজার টাকা, যা প্রমাণ করে, এই কারবার কত বড় একটি মাফিয়াচক্র দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এই জাল নোটগুলো এতটাই সূ² যে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যাংক কর্মকর্তাদেরও বিভ্রান্ত করছে। শেরপুরের শাহিনা বেগমের মতো হতদরিদ্রদের সারা জীবনের সঞ্চয় মুহূর্তে হারিয়ে যাওয়া চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় এই অপরাধের ভয়াবহ মানবিক দিক। পোস্ট অফিস থেকে জাল নোট বিতরণের ঘটনাটি ইঙ্গিত দেয় যে চক্রটি তাদের শিকড় সরকারি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরেও বিস্তৃত করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান যথার্থই বলেছেন, টাকার সঠিক প্রচলন ব্যাহত হলে অর্থনীতিতে ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়বে। এই জাল টাকা বাজারে প্রবেশ করে একদিকে যেমন মুদ্রাস্ফীতি ও আর্থিক স্থিতিশীলতাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে এটি কালো টাকার উৎস হিসেবেও কাজ করবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এর রাজনৈতিক দিকটি আরো বেশি উদ্বেগের। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন যে কিছু মহল রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং ভোটারদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে এই জাল নোট নতুন করে বাজারে ছড়াতে পারে।
বিজিবি এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের তৎপরতা বাড়ালেও এই সমস্যা মোকাবেলায় একটি সমন্বিত ও বহুস্তরীয় কৌশল প্রয়োজন। সীমান্ত নজরদারি জোরদার করার পাশাপাশি আমাদের প্রয়োজন ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরের দুর্বলতা দ্রুত দূর করা। বাংলাদেশ ব্যাংককে তাদের নজরদারি আরো কঠোর করতে হবে এবং জাল নোট শনাক্তকরণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করা, যাতে তারা নিজেরাই নোট গ্রহণের সময় সতর্ক থাকতে পারে।
আমাদের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের সুরক্ষার জন্য সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এবং প্রতিটি নাগরিককে অবশ্যই এই নীরব ঘাতক জাল টাকার কালো ছায়ার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।