খুলনা | শনিবার | ১৫ নভেম্বর ২০২৫ | ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

অনলাইনে আবেদন শুরু ২১ নভেম্বর, চলবে ৫ ডিসেম্বর

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রমের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

খবর প্রতিবেদন |
০১:১২ এ.এম | ১৫ নভেম্বর ২০২৫


সরকারি স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়ায় এবারও লটারির মাধ্যমেই শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে। অবশ্য, কাক্সিক্ষত মানের স্কুলে সুযোগ পাওয়া নিয়ে তাই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ রয়ে গেছে। লটারি ব্যবস্থা চালুর মূল উদ্দেশ্য প্রতিযোগিতা কমানো হলেও বিভিন্ন কোটা রাখাকে ঘিরে সমালোচনা বাড়ছে।বিদ্যালয়ে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রমের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। এবারের ভর্তি প্রক্রিয়ায় কোনো বিদ্যালয় থেকে আলাদা করে ফরম বিতরণ করা হবে না। সম্পূর্ণ আবেদন করতে হবে অনলাইনের মাধ্যমে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে বলা হয়, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহে আগামী ২১ নভেম্বর বেলা ১১টা থেকে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু হবে, যা চলবে ৫ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। gsa.teletalk.com.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করা যাবে। এ ক্ষেত্রে আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা, যা শুধুমাত্র টেলিটক প্রি-পেইড নম্বর থেকে এসএমএসের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, আবেদনের সময় সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের থানাভিত্তিক তালিকা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচটি বিদ্যালয় পছন্দক্রম অনুযায়ী নির্বাচন করা যাবে। তবে ডাবল শিফট বিদ্যালয়ের উভয় শিফট বেছে নিলে তা দুইটি পছন্দ হিসেবে গণ্য হবে। একই বিদ্যালয় বা একই শিফট পুনরায় বেছে নেয়া যাবে না। ভর্তির ক্ষেত্রে সারাদেশের সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে কেন্দ্রীয়ভাবে আয়োজিত ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে; কোনো ধরনের পরীক্ষা নেয়া যাবে না।
বয়সসীমা সম্পর্কে জানানো হয়েছে, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী ১ম শ্রেণিতে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীর বয়স ধরা হয়েছে ৬+। কাক্সিক্ষত শিক্ষাবর্ষের ১ জানুয়ারি ন্যূনতম বয়স ৫ বছর এবং ৩১ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ ৭ বছর হতে হবে। বয়স যাচাইয়ের জন্য অনলাইন জন্মনিবন্ধনের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের অতিরিক্ত সুবিধা প্রযোজ্য হবে। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের ভর্তি-উপযুক্ত সন্তানের জন্য নিজ প্রতিষ্ঠানেই সমসংখ্যক অতিরিক্ত আসন সংরক্ষণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে কাঙ্ক্ষিত শ্রেণি না থাকলে নিকটবর্তী উপযোগী প্রতিষ্ঠানে এ সুযোগ পাওয়া যাবে। তাদের অনলাইনে আবেদন করার প্রয়োজন নেই। ভর্তিসংক্রান্ত তারিখ, সময় ও স্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে পরবর্তীতে জানানো হবে।
ঢাকা মহানগরের ৪৪টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় তিনটি গ্র“পে ভাগ করা হবে বলেও নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরের ৪৪টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আগের মতো তিনটি গ্র“পে থাকবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ তিনটি থানাকে ‘ক্যাচমেন্ট এরিয়া’ হিসেবে নির্ধারণ করতে পারবে। ক্যাচমেন্ট এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ কোটা এবারও বহাল রাখা হয়েছে।
ভর্তির ক্ষেত্রে কোটায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে নীতিমালায়। বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫ শতাংশ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ২ শতাংশ এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১০ শতাংশ কোটা অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটা এবার দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ এবং অধীনস্থ দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।
যমজ ও সহোদর কোটায়ও পরিবর্তন আনা হয়েছে। যমজ কোটা ৩ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। সহোদর কোটা ২ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। উভয় কোটা সর্বোচ্চ এক দম্পতির তিন সন্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলেমেয়ে পাওয়া না গেলে সাধারণ কোটা থেকে ওই আসনে ভর্তি করতে হবে। কোনো অবস্থায় আসন শূন্য রাখা যাবে না। এ ছাড়া বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন আসনেও কোনো শিক্ষার্থী পাওয়া না গেলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শূন্য আসন পূরণ করতে হবে।
অন্যদিকে বেসরকারি স্কুল, স্কুল এ্যান্ড কলেজ (মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তর) এর জন্যও একই সময়সীমায় অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হবে। ঢাকা মহানগরী, বিভাগীয় মেট্রোপলিটন এলাকা, জেলার সদর উপজেলা এবং অন্যান্য উপজেলার উপজেলা সদরের সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হবে একই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আবেদন ও বয়সসীমা সরকারি বিদ্যালয়ের মতোই থাকবে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মচারী এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সন্তানরা যোগ্যতা পূরণ সাপেক্ষে সাধারণ নিয়মে আবেদন করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কোনো পোষ্য, আত্মীয়স্বজন বা কমিটির সদস্যদের জন্য আলাদা আসন সংরক্ষণের বিধান রাখা হয়নি। বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর ভর্তি-সংক্রান্ত পরবর্তী কার্যক্রম, ফলাফল প্রকাশ এবং লটারি প্রক্রিয়ার সময়সূচি পরে জানিয়ে দেয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
মাউশির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ দপ্তরের কর্মীদের জন্য থাকা কোটা বাস্তবে খুবই সীমিত; তবে এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। তিনি আরও জানান, ক্যাচমেন্ট কোটায় অনিয়ম ও জালিয়াতির প্রমাণ রয়েছে, তাই কঠোরভাবে নিয়ম প্রয়োগ করা জরুরি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বি এম আব্দুল হান্নান বলেন, মন্ত্রণালয়ের সভায় অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী এবারও লটারির মাধ্যমে ভর্তি সম্পন্ন হবে। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আপত্তি উঠলে বা নতুন প্রস্তাব এলে মন্ত্রণালয় তা বিবেচনা করবে।