খুলনা | মঙ্গলবার | ১৮ নভেম্বর ২০২৫ | ৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

অগ্নিঝুঁকিতে খুলনার ২৩ মার্কেট, নেই পর্যাপ্ত নির্বাপণ ব্যবস্থা, আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |
১২:৫০ এ.এম | ১৬ নভেম্বর ২০২৫


পর্যাপ্ত নির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকা, সরুপথ, অল্প জায়গায় বেশি দোকানসহ নানা কারণে অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহ ঝুঁকিতে খুলনার অন্তত ২৩টি মার্কেট। অধিকাংশ মার্কেটই গড়ে উঠেছে পরিকল্পনা ছাড়া। অনুমোদন নেই কেডিএ, ফয়িার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার। আর এত যে কোনো ছোট দুর্ঘটনায় এসব বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষিত করাসহ সরু গলিপথ প্রশস্ত করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
নগরীর প্রাণকেন্দ্র জুড়ে ছড়িয়ে থাকা শত শত দোকানপাটে প্রতিদিনই চলছে কোটি টাকার লেনদেন। কিন্তু এই জমজমাট ব্যবসার আড়ালে লুকিয়ে আছে ভয়ঙ্কর ঝুঁকি। নগরীর বড়বাজার, নিক্সন মার্কেট, সোহরাওয়ার্দী বিপণিবিতান, হেরাজ মার্কেট, ভৈরব স্ট্যান্ড রোডের বাজারসহ অন্তত ২৩টি বাণিজ্যিক কেন্দ্র রয়েছে অগ্নিকাণ্ডের উচ্চ ঝুঁকিতে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, অগোছালো বৈদ্যুতিক তার, সরু গলি, পর্যাপ্ত নির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকা এবং পানি সরবরাহের অভাবই এই বিপদের মূল কারণ।
নগরীর খানজাহান আলী হকার্স মার্কেটে ঢুকলেই বোঝা যায় পরিস্থিতি কতটা নাজুক। চার-পাঁচ ফুট প্রশস্ত গলির দুই পাশে সারি সারি দোকান। কোথাও পথ বন্ধ করে রাখা পণ্যের স্তূপ, আবার কোথাও বৈদ্যুতিক তারের ঝুলন্ত জটলা। এমন পরিবেশে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় গরমের দিনে নিঃশ্বাস ফেলা দায়, আর আগুন লাগলে বেরোনোর পথও থাকবে না। 
এ চিত্র শুধু এক মার্কেটের নয়, প্রায় সব বাণিজ্যিক এলাকাতেই একই পরিস্থিতি। এসব মার্কেটে নেই ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের সুযোগ, নেই অগ্নিনির্বাপণের প্রাথমিক কোনো ব্যবস্থা। মার্কেটগুলোর দেয়ালে ঝুলন্ত বৈদ্যুতিক তারের জটলা যেন দুর্ঘটনার আগাম বার্তা। সব মিলিয়ে আতঙ্কেই দিন কাটে সাধারণ ব্যবসায়ীদের।
বড়বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী মোঃ কামাল হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন আতঙ্ক নিয়ে দোকান খুলি। একটু স্পার্ক হলেই বুঝি সব শেষ। ছোট গলিতে অনেক ব্যবসায়ী, সব সময়ে ভয়ে থাকি। সড়কগুলো আরও প্রশস্ত করা প্রয়োজন। আমরা এ ব্যাপারে ব্যবাসয়ী সমিতির নেতাদের বলেছি। কিন্তু খুব একটা সমাধান হয় না।’ 
মশলা পট্টির ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি মার্কেটের রাস্তা একটু প্রশস্ত করা হোক, কেউ শোনে না। তবে ফায়ার সার্ভিস থেকে মাঝে মধ্যে এসে আমাদের প্রাথমিক ধারণা দিয়ে যায়, আমরা সতর্ক থেকেই ব্যবসা করছি।’
খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোঃ মাসুদ সরদার বলেন, ‘মহানগরীর অন্তত ২৩টি বাণিজ্যিক মার্কেটকে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। এসব জায়গায় আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার পথ থাকে না। প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া দুর্ঘটনা ঠেকানো সম্ভব নয়। আমাদের যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। আমরা জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে সমন্বয় সভায় বিষয়গুলো উত্থাপন করি। আশা করছি, সবার উদ্যোগে পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে।’ 
অন্যদিকে জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলোর তালিকা অনুযায়ী আমরা ফায়ার সার্ভিস ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করছি। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও সচেতনতা বৃদ্ধি উদ্যোগ ইতোমধ্যেই নেয়া হয়েছে।’ 
নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, শহরের কেন্দ্রস্থলে গড়ে ওঠা এসব বাজারে কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না। এখনই সিটি কর্পোরেশন, কেডিএ, বিদ্যুৎ বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে নতুন করে পরিকল্পনা নিতে না পারলে বড় বিপর্যয় আসন্ন। 
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানারর্স খুলনা চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক আসিফ আহমেদ বলেন,  খুলনা শহরের ব্যবসাকেন্দ্রগুলোকে নিরাপদ করতে সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া বিকল্প নেই। সরু রাস্তা প্রশস্ত করতে হবে, বৈদ্যুতিক তার মাটির নিচে নিতে হবে এবং প্রতিটি মার্কেটে পানি ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। 
ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, গত এক বছরে খুলনা জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ২৯১টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।