খুলনা | মঙ্গলবার | ১৮ নভেম্বর ২০২৫ | ৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

নামাজে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন

নগরীতে একই পরিবারে তিন সদস্যসহ চার খুনে গ্রেফতার নেই, শঙ্কিত পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:১৬ এ.এম | ১৮ নভেম্বর ২০২৫


জমিজমা সংক্রান্ত রিরোধের জের ধরে নগরীর ৩১নং ওয়ার্ডে মোল্লাপাড়া দরবেশ মোল্লা গলির ভিতরে একটি বাড়িতে দুর্বৃত্তদের হামলায় একই পরিবারে নানী মহিতুন্নেছা বেগম (৫০)সহ নাতি মোস্তাকিম (৮) ও নাতনি তাইয়্যেবা (৭) হত্যাকান্ডের ২৪ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও হত্যাকান্ডে জড়িতরা এখনো গ্রেফতার হয়নি। তবে এ হত্যাকান্ডের ক্লু-বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার দুই শিশুসন্তানের পিতা সিফার আহমেদ মুন ও মাতা রুবিয়া আক্তার রয়েছেন চরম নিরাপত্তাহীনতায়। হত্যাকান্ডে জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি তুলেছেন নিহত মহিতুন্নেছার মেয়ে রুবিয়া আক্তার, জামাতা সিফার আহমেদ মুন, রুবিয়ার পিতা হান্নান শেখ, রুবিয়ার ভাই তরিকুল ইসলামসহ পরিবারের লোকজন। জমিজমা বিরোধের কারণে এ হত্যাকান্ড ঘটতে পারে এমন মন্তব্য করেছেন পরিবারের লোকজন। 
অপর দিকে, রোববার নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন করিমনগর সৈয়দ আলী হোসেন স্কুলের পাশে পূর্ব শত্র“কার জের ধরে আলাউদ্দিন মৃধা নামের যুবককে গুলি ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছিলো। সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের পর নামাজে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের এখনো কেউ আটক-গ্রেফতার হয়নি। ঘটনার ক্লু বের করতে পুলিশী অভিযান অব্যাহত আছে।       
এদিকে ঘটনার দিন রাতে নিহত মহিতুন্নেছাসহ নাতী মোস্তাকিম ও নাতনী তাইয়্যেবার মরদেহ সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। গতকাল সোমবার ময়নাতদন্ত শেষে বিকেল ৩টায় নিহত মহিতুন্নেছাসহ নাতি-নাতনির মরদেহ লাশবাহী গাড়ি (এ্যাম্বুলেন্স) করে রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামের বাড়ি সামছুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে আনা হয়। মরদেহ আনার পর নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহতের স্বজন, গ্রামবাসী ও উৎসুক জনতা একনজর দেখার জন্য মাঠে এসে ভীড় জমাতে থাকে। বাদ মাগরিব সামছুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাজা শেষে বাগমারা আল-আকসা দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন জান্নাতুল মুয়াল্লা কবরস্থানে দাফন করা হয়। নামাজে জানাজা পরিচালনা করেন নিহত মহিতুন্নেছার ভাতিজা হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন। 
নামাজে জানাজায় উপস্থিত ছিলেন খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ, উপজেলা বিএনপি’র আহŸায়ক মোল্লা সাইফুর রহমান, উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি হাবিবুল্লাহ ইমন, নৈহাটী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ ইলিয়াজ শেখ, সামছুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোঃ হায়দার আলী, বাইতুল মেরাজ জামে মসজিদের খতীব মুফতি আবুল হাসান হামিদী, হালিমাতুস সাদিয়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আহসান হাবীব, বাগমারা দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সেখ লুৎফর রহমান, নৈহাটী ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সদস্য সচিব দিদারুল ইসলাম, সামছুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনতেজ আলী, বাগমারা আল-আকসা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী আজগার আলী, নন্দনপুর দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী মাওলানা আনিসুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মোঃ ইদ্রিস আলী, ওসমান আলী শেখ, মোঃ ওমর আলী শেখ, মোঃ মাসুদুজ্জামান, অহিদুজ্জামান, মেহেদী হাসান মিঠু, শাহানেওয়াজ হোসেন মিলন, আজমল হোসেন, আলী হোসেন, মোঃ ফরিদুজ্জামানসহ সর্বস্তরের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। সামছুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্রদীপ কুমার পাল নিহতদের বাগমারা গ্রামের বাড়িতে যান এবং গভীর শোক প্রকাশ করেন। 
নামাজের জানাজায় উপস্থিত খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন, নিহত শিশু মোস্তাকিম ও তাইয়্যেবার পিতা সিফার আহমেদ মুন খুলনা চেম্বার অব কমার্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা পদে কর্মরত আছেন। তার দুই শিশু সন্তান ও তার শাশুড়িকে দুর্বৃত্তরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। হত্যাকান্ডের ক্লু বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুবই তৎপর রয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে এমন প্রতিশ্র“তি দেন তিনি। 
নিহত মহিতুন্নেছার বেগমের মেয়ে রুবিনা আক্তার রামপাল উপজেলা ভূমি অফিসে নাজির পদে কর্মরত আছেন। তিনি বলেন, তার মাতা ও ছেলে মোস্তাকিম এবং মেয়ে তাইয়্যেবাকে পরিকল্পিতভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শ^শুর বাড়ির জমিজমা নিয়ে বিরোধ হয়ে আসছে। তিনি ধারণা করছেন, তার শ^শুর বাড়ির লোকজন পরিকল্পনা করে তার মাতা ও দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমার ছেলে-মেয়ের শিক্ষক রোববার বিকালে যখন পড়াতে আসেন তখন তিনি সিসি টিভি ও বিদ্যুৎ লাইনের তার বিচ্ছিন্ন দেখে আমাদের ফোন করে জানালে তখন রুবিনা ও তার স্বামী মুন দ্রুত বাড়িতে আসেন।
তিনি বলেন, তার মাতার মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ও তার ছেলে-মেয়ের মুখের ভিতর কাপড়-চোপড় ঢুকিয়ে রেখে শরীর বিভিন্ন স্থানে ইট দিয়ে আঘাত করে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এ বর্বর হত্যাকান্ডে জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। 
নিহত শিশু মোস্তাকিম ও তাইয়্যেবার পিতা সিফার আহমেদ মুন খুলনা চেম্বার অব কমার্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা পদে কর্মরত আছেন। তিনি বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে তার শাশুড়ি ও ছেলে-মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, জমিজমার বিরোধের কারণে এ হত্যাকান্ড হয়েছে। ক্লিংমিশনে জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি। নিহত শিশু মোস্তাকিম ও তাইয়্যেবার নানা মোঃ হান্নান শেখ বলেন, তার স্ত্রী, নাতি ও নাতনিকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। 
তিনি এ হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। নিহত মহিতুন্নেছা বেগমের ছোট ছেলে তরিকুল ইসলাম বলেন, তার মাতা এবং ভাগ্নে-ভাগ্নিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকান্ডে জড়িতদের অল্প সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।