খুলনা | শনিবার | ২২ নভেম্বর ২০২৫ | ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

সশস্ত্র বাহিনী দিবসে প্রধান উপদেষ্টার প্রত্যাশা

|
১১:৫৫ পি.এম | ২১ নভেম্বর ২০২৫


সশস্ত্র বাহিনী একটি দেশের গৌরবের প্রতীক। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী। শুধু তা-ই নয়, দুর্যোগে-দুর্বিপাকে বিপর্যস্ত মানুষের অন্যতম সহায় তারা। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী মান ও মর্যাদায় আরো এক ধাপ এগিয়ে। কারণ এই বাহিনীর জন্ম একটি গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। এই বাস্তবতায় ২১ নভেম্বর পালিত হলো সশস্ত্র বাহিনী দিবস। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অবদানকে সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করার উদ্দেশ্যে প্রতিবছর এই দিনে পালিত হয় সশস্ত্র বাহিনী দিবস।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। একই সঙ্গে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট অনুষ্ঠানের কথাও রয়েছে। এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখরভাবে আয়োজন করতে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন ‘আগামী ফেব্র“য়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখরভাবে আয়োজন করতে হবে।’ গত বুধবার মিরপুর সেনানিবাসে ডিএসসিএসসি কমপ্লেক্সে সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) কোর্স ২০২৫-এর সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ ছাড়া দেশের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নেও সশস্ত্র বাহিনীকে অপরিহার্য বিবেচনা করা হচ্ছে।
গত বছর দিবসটি পালিত হয়েছিল এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথমবারের মতো পালিত হয় সশস্ত্র বাহিনী দিবস। ওই বছরের ৫ আগস্ট এবং তার আগে-পরে সেনাবাহিনী প্রধান, সেনাবাহিনী এবং সার্বিকভাবে সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়ে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছিল। গত বছর ৬ অক্টোবর সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে ‘সেনা সদর নির্বাচনী পর্ষদ ২০২৪’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসও তাদের সেই অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘দেশের ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এবং একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে দেশকে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা করেছে।’
সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীর যেকোনো দেশে ন্যাশনাল পাওয়ার যাদের বলা হয়, তার অন্যতম হচ্ছে সামরিক বাহিনী। একটি দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী রাখার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক বাহিনীর শক্তি ও মর্যাদা রাষ্ট্রের মর্যাদার সঙ্গে সম্পর্কিত। সামরিক শক্তি ছাড়া কোনো দেশকে এখন আর তেমনভাবে গণনায় নেওয়া হয় না। ‘সশস্ত্র বাহিনী একটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক’ এই বিশ্বাস অন্যান্য দেশের মতো এ দেশের জনগণও লালন করে আসছে।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘আমি সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক পরিমন্ডলে হস্তক্ষেপ করতে দেব না, এটি আমার স্পষ্ট অঙ্গীকার।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা হচ্ছি একমাত্র ফোর্স, যারা আপনাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, দাঁড়িয়ে আছি প্ল্যাটফর্মে, অফকোর্স নেভি অ্যান্ড এয়ার ফোর্স। আমাদের সাহায্য করেন; আমাদের আক্রমণ করবেন না। আমাদের অনুপ্রাণিত করেন, আমাদের উপদেশ দেন; আমাদের প্রতি আক্রমণ করবেন না। উপদেশ দেন, আমরা অবশ্যই ভালো উপদেশ গ্রহণ করব। আমরা একসঙ্গে থাকতে চাই এবং দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’ সশস্ত্র বাহিনী আমাদের আশার প্রতীক, আমাদের আস্থার প্রতীক। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা সশস্ত্র বাহিনীর আত্মত্যাগকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি। আমরা আশা করি, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সেনাবাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল অংশগ্রহণ অব্যাহত থাকবে।