খুলনা | সোমবার | ২৪ নভেম্বর ২০২৫ | ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

বিশ্বে ভূ-রাজনৈতিক পুনর্গঠনে ‘সঠিক পথ’ বেছে নেবে বাংলাদেশ

বঙ্গোপসাগরে করিডোর নয়, আত্মবিশ্বাসী ভূমিকা চায় বাংলাদেশ : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

খবর প্রতিবেদন |
০১:২৪ এ.এম | ২৩ নভেম্বর ২০২৫


বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক পুনর্গঠনের এই সময়ে বাংলাদেশ কোনো পক্ষ বেছে নিতে চায় না, বরং নিজের জাতীয় স্বার্থ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সক্রিয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে চায় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন। শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ভাঙন, পুনর্গঠন’।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘পুনর্গঠনের সময় অনেক রাষ্ট্র পক্ষ বেছে নিতে আগ্রহী হয়, কিন্তু আমাদের উচিত প্রথমে সঠিক পথ বেছে নেয়া। বঙ্গোপসাগর এখন কৌশলগত কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। সেখানে বাংলাদেশ নিছক কোনো করিডোর হয়ে থাকতে চায় না, বরং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কৌশলগত ভূমিকা রাখতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় বাংলাদেশ সার্বভৌমত্ব অক্ষুণœ রেখে এমন অংশীদারিত্ব গড়ে তুলবে যার মধ্যে দৃশ্যমান ফল পাওয়া যাবে। জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে কখনও আপস করা হবে না।
ইউক্রেন, গাজা, সুদান ও মিয়ানমারের চলমান সংকটের প্রসঙ্গ টেনে তৌহিদ হোসেন বলেন, বিদ্যমান বহুপাক্ষিক কাঠামো এসব সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে। তাই আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী ও ফলপ্রসূ করতে হবে।
রোহিঙ্গা সংকট ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের কথা উলে­খ করে তিনি বলেন, মানবিক দায়িত্ব পালনে বাংলাদেশের অঙ্গীকার বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট।
তথ্যযুদ্ধ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার নিয়ে সতর্ক করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভুয়া তথ্য, ডিপফেক ও এআই-চালিত প্রভাব অভিযান কূটনীতি ও শাসনব্যবস্থাকে বদলে দিচ্ছে। বাংলাদেশ তথ্যক্ষেত্রকে সুরক্ষিত রাখতে এবং নিরাপত্তা ও মৌলিক অধিকার দু’টোই সংরক্ষণ করবে-এমন নিয়ন্ত্রক কাঠামো গড়ে তুলবে।জলবায়ু পরিবর্তনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা য়দ্ধি ও লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। উপকূলীয় দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করে প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও জলবায়ু-সহনশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন বলেন, বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক পুনর্গঠনের এ সময়ে বাংলাদেশ একটি সক্রিয় ও দায়িত্বশীল সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, ‘পুনর্গঠনের সময় অনেক রাষ্ট্র পক্ষ বেছে নিতে আগ্রহী হয়, কিন্তু আমাদের উচিত প্রথমে সঠিক পথ বেছে নেওয়া।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অংশ নেবে এবং জাতীয় স্বার্থ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি সক্রিয়, সার্বভৌম ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে চায়। আমরা দৃঢ়ভাবে অংশ নেব, প্রয়োজন হলে স্পষ্টভাবে বলব এবং সবসময় জাতীয় স্বার্থ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার দিকে নজর রেখে কার্যকর অংশীদারিত্ব গড়ে তুলব।’
ক্ষমতার পরিবর্তনশীল কাঠামোর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সার্বভৌমত্ব অক্ষুণœ রেখে বাংলাদেশের অংশীদারিত্বে দৃশ্যমান ফল আসতে হবে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, বঙ্গোপসাগর এখন কৌশলগত কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। সেখানে বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভূমিকা রাখতে চায়, নিছক করিডর হয়ে নয়।
ইউক্রেন, গাজা, সুদান ও মিয়ানমারের অস্থিরতার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সংকট মোকাবিলায় বিদ্যমান কাঠামো ব্যর্থ হয়েছে। তাই বহুপাক্ষিক ও আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী হতে হবে, যাতে বাস্তব ফলাফল পাওয়া যায়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে মানবিক দায়িত্ব পালনে বাংলাদেশের অঙ্গীকার স্পষ্ট হয়েছে।
তথ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রসঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেন, ভুয়া তথ্য, ডিপফেক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর প্রভাব কূটনীতি ও শাসন ব্যবস্থাকে বদলে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ তথ্যক্ষেত্রকে সুরক্ষিত রাখতে চায়। একই সঙ্গে এমন নিয়ন্ত্রক কাঠামো গড়ে তুলতে চায়, যা নিরাপত্তা ও অধিকার দু’টোই রক্ষা করবে।
অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা, নিষেধাজ্ঞা ও ঝুঁকি এড়ানোর কৌশল বাংলাদেশকে বহুমুখী হতে এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে বাধ্য করছে।
বঙ্গোপসাগরের বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিকেও তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘পারস্পরিক সুযোগ ও স্থিতিস্থাপকতার ভিত্তিতে যোগাযোগ ও অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে।’ 
উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ুজনিত ঝুঁকির মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা য়দ্ধি ও লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি উপকূলীয় দেশগুলোকে সহযোগিতামূলক কাঠামো গড়ে তোলা, প্রযুক্তি ভাগাভাগি করা এবং জলবায়ু সহনশীল নিরাপত্তা ও উন্নয়ন কৌশল প্রণয়নের আহবান জানান।
তিনি সিজিএসকে ধন্যবাদ জানান এ আয়োজনের জন্য। বলেন, ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে খোলামেলা আলোচনার জন্য এ প্ল্যাটফর্ম অপরিহার্য।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন। এবারের ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’-এর মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ভাঙন, পুনর্গঠন।’
এবারের সম্মেলনে বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, আঞ্চলিক বাস্তবতা, জোট ও অংশীদারিত্বের পরিবর্তন, তথ্যযুদ্ধ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক চাপ ও অভিবাসন অর্থাৎ আজকের বিশ্বকে সংজ্ঞায়িত করছে এমন বিষয়গুলো আলোচনায় থাকবে।
উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সম্মেলনে বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, তথ্যযুদ্ধ, এআই, জলবায়ু সংকট, অর্থনৈতিক চাপ ও অভিবাসনসহ সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তিন দিনব্যাপী আলোচনা হবে।