খুলনা | মঙ্গলবার | ২৫ নভেম্বর ২০২৫ | ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

নাগালের বাইরে গুঁড়া দুধ দাম কমানোর উদ্যোগ নিন

|
১২:৩২ এ.এম | ২৫ নভেম্বর ২০২৫


দেশের বাজারে বিদেশি ও দেশি ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের দাম বেড়ে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবরে ‘বিদেশি গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের পুষ্টি নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এক বছরের ব্যবধানে বিদেশি ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের মূল্য গড়ে ২৫ শতাংশ এবং দেশীয় ব্র্যান্ডের মূল্য ১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় অপরিহার্য শিশুখাদ্যটি অনেক পরিবারের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, আমদানিকারকরা এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য বিশ্ববাজারে গুঁড়া দুধের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার সংকট এবং আমদানি কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) জটিলতার কারণে আমদানিতে যে স্থবিরতা এসেছে, তার সরাসরি প্রভাব পড়ছে দেশের সাধারণ ভোক্তাদের ওপর। ডিএনসিসি মার্কেটের চিত্র অনুযায়ী, জনপ্রিয় নান, নিডো, সিমিল্যাক এবং পিডিয়াশিওরের মতো ব্র্যান্ডগুলোর প্রতি ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের প্যাকেটে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। একজন ক্রেতার ভাষ্য মতে, একটি শিশুর পেছনে মাসে প্রায় ছয় হাজার টাকা খরচ হচ্ছে শুধু দুধের জন্য। এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি আয়-ব্যয়ের অসামঞ্জস্যতায় হিমশিম খাওয়া পরিবারগুলোকে মারাত্মকভাবে চাপে ফেলছে।
শিশুখাদ্যের মতো একটি অপরিহার্য পণ্যে কেন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই? বাজারে সরবরাহ ব্যাহত হলে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার কথা সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর, কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। শিশুখাদ্যের বাজারে এমন অস্থিরতা পরিবারগুলোকে কঠিন সিদ্ধান্তের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। মাসে একটি শিশুর জন্য গুঁড়া দুধ কিনতে প্রায় ছয় হাজার টাকা খরচ হওয়া এখন বহু পরিবারই বহন করতে পারছে না, যা কোনোভাবেই স্বাভাবিক পরিস্থিতি বলা যায় না। পুষ্টিহীনতা এরই মধ্যে দেশে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
শিশুদের বৃদ্ধি, মস্তিষ্কের বিকাশ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে মানসম্মত পুষ্টি অপরিহার্য। গুঁড়া দুধ অনেক পরিবারেই শৈশব পুষ্টির একটি নির্ভরশীল উপাদান; এর দাম বেড়ে গেলে সরাসরি পুষ্টিহীনতার ঝুঁকি বাড়বে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের উচিত দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। ডলারের বাজার স্থিতিশীল করা, এলসি জটিলতা নিরসন করা এবং শিশুখাদ্য হিসেবে গুঁড়া দুধের আমদানিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। একই সঙ্গে টিসিবির মাধ্যমে বা ন্যায্যমূল্যে গুঁড়া দুধের সরবরাহ নিশ্চিত করার মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। অন্যথায় এই মূল্যবৃদ্ধি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে একটি বড় ধরনের পুষ্টিগত সংকটের কারণ হবে।
শিশুখাদ্য গুঁড়া দুধ কোনো বিলাসপণ্য নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার। এই খাতের বাজারের অস্থিরতা দূর করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এখনই সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে এর যে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে, তার ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে।