খুলনা | মঙ্গলবার | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

সংকটাপন্ন খালেদা জিয়া, দোয়া কামনায় সর্বস্তরের মানুষ

খবর প্রতিদেবন |
০১:৪৯ এ.এম | ৩০ নভেম্বর ২০২৫


ফুসফুস ও হৃদ্যন্ত্রে সংক্রমণ নিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিএনপি’র চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এর আগে গত ২৩ নভেম্বর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর শুরু হয় চিকিৎসা। ২৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এখনও তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন।
পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে ভ্রমণ করার মতো হলেও বিদেশে নেওয়ার হবে, দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে এমন কথা শনিবার দুপুরেই জানানো হয়েছে। 
বিকেলে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা উপদেষ্টা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা আগের চেয়ে একটু ভালো, তবে সেটা বিদেশে যাওয়ার মতো নয়। এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা করে দল মত শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সবাই দোয়া কামনা করছেন। খালেদা জিয়ার অবস্থার অবনতি হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহারকারী হাজার হাজার মানুষ সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সুস্থতা কামনা করে পোস্ট দিচ্ছেন। অনেকে নিজের টাইম লাইনে খালেদা জিয়ার ওপর আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে দোয়া চেয়েছেন। অনেকে দেশ গঠনে অতীতে খালেদা জিয়ার অবদান তুলে ধরে পোস্ট করেছেন। বেশিরভাগ পোস্টকারীই খালেদা জিয়াকে ‘আপোষহীন নেত্রী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, কেউ আখ্যা দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে।
বিএনপি’র রাজনৈতিক মিত্ররা ছাড়াও এখন যারা দলটির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তারাও সফল রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার অবদান উল্লেখ করে তার জন্য দোয়া চেয়েছেন। রাজনৈতিক দলের বাইরে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোও বেগম জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া চেয়েছেন। 
রাষ্ট্রপতি ও সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ বেগম জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন। সরকারের একাধিক উপদেষ্টা হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছেন। বিএনপি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা হাসপাতালে গিয়ে বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং তাঁর জন্য দোয়া করেন। শুক্রবার দেশের প্রায় সব মসজিদে খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিবৃতি দিয়েছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। তারেক রহমান লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ ও সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যায় রয়েছেন। তার রোগমুক্তির জন্য দল-মত নির্বিশেষে দেশের সকল স্তরের নাগরিক আন্তরিকভাবে দোয়া অব্যহত রেখেছেন। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা তার রোগমুক্তির জন্য দোয়ার সাথে সাথে চিকিৎসার সর্বোচ্চ সহায়তার প্রতিশ্র“তি ব্যক্ত করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘দেশ-বিদেশের চিকিৎসক দল সর্বোচ্চ মানের পেশাদারিত্ব ছাড়াও সর্বোচ্চ আন্তরিক সেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। বন্ধু প্রতীম একাধিক রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও উন্নত চিকিৎসাসহ সম্ভাব্য সকল প্রকার সহযোগিতার আকাক্সক্ষা প্রকাশ করা হয়েছে।’ 
তারেক রহমান বলেন, ‘সর্বজন শ্রদ্ধেয়া বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি সকলের আন্তরিক দোয়া ও ভালোবাসা প্রদর্শন করায় জিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। একই সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তির জন্য সকলের প্রতি দোয়া অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানাই।’
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান। শুক্রবার রাতে ফেসবুকে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতির সংবাদ অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তাঁর সার্বিক শারীরিক অবস্থা জানতে জামায়াত নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন। এ সময় জামায়াত আমির বিএনপি চেয়ারপারসনের দ্রুত ও পূর্ণ রোগমুক্তি কামনা করেন।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না শনিবার খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যান। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চিকিৎসকরা তেমন আশাবাদের কথা বলেননি, দেশবাসীকে দোয়া করতে বলেছেন। গতকালের মতোই সংকটাপন্ন পরিস্থিতি, সেটার কোন উন্নতি বা অবনতি হয়নি।বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় রাজনীতির শীর্ষনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু এবং সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। সঙ্গে খালেদা জিয়ার দ্রুত এবং পূর্ণ রোগমুক্তির জন্য গভীর প্রার্থনা করেছেন তারা। এ বিষয়ে তারা শনিবার এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার জ্ঞান থাকলেও শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল নয়। আমরা দূরত্ব রেখে কথা বলেছি। ম্যাডাম আমাদের চিনতে পেরেছেন এবং সালামের রিপ্লাই দিয়েছেন। দেশের মানুষের কাছে আমার আবেদন ব্যক্তিগতভাবেও সবাই তার জন্য দোয়া করুন। 
চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে শনিবার এক অনুষ্ঠানে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বর্তমান শারীরিক অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। বিএনপি নেত্রীর জন্য দোয়া করতে তারা দেশবাসীর প্রতি আহŸান জানান। দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান তারা। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এনসিপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন দলের এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম-সদস্য সচিব ডাঃ তাসনিম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। 
ইসলামি বক্তা মাওলানা ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেছেন, চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশপ্রেম ও অতুলনীয় ব্যক্তিত্বের কারণে প্রায় সবার কাছে বিশেষ সম্মানের ও শ্রদ্ধার আসন অলংকৃত করেছেন। শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে ড. মিজানুর রহমান আজহারী লিখেন, নানা বিভক্তি ও বিভাজনের এ দেশে সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া এ ক্ষেত্রে অনন্য। দেশপ্রেম ও অতুলনীয় ব্যক্তিত্বের কারণে তিনি প্রায় সবার কাছে বিশেষ সম্মানের ও শ্রদ্ধার আসন অলংকৃত করেছেন। এ ইসলামি বক্তা বলেন, বর্তমানে তিনি অসুস্থ হয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আমি দেশের তরে সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার করা ধর্মীয় মূল্যবোধে শ্রদ্ধাশীল এ মহিয়সী নারীর রোগমুক্তি ও সম্পূর্ণ সুস্থতা কামনা করছি। আল্লাহ তা’আলা তাকে দ্রুত আরোগ্য দান করুন।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিনের জটিলতা, ফুসফুসে সংক্রমণ ও হৃদযন্ত্রের নতুন সমস্যায় আক্রান্ত প্রায় ৮০ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া ২৩ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি হন। মেডিকেল বোর্ডের অধীনে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা তাকে সিসিইউতে ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
ফুসফুসে সংক্রমণ ও শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি নিউমোনিয়া, কিডনি, লিভার, আর্থ্রাইটিস এবং ডায়াবেটিসের পুরনো সমস্যা তার চিকিৎসাকে জটিল করে তুলেছে। এক রোগের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অন্যটির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।