খুলনা | সোমবার | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

সফলতার অগ্রযাত্রায় প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পার করলো মোংলা সমুদ্র বন্দর

মাহমুদ হাসান, মোংলা |
০১:৪০ এ.এম | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫


উন্নয়ন, অগ্রগতি আর পণ্য আমদানি-রপ্তানির সফলতায় এগিয়ে যাচ্ছে মোংলা সমুদ্র বন্দর। ৯০ দশকের মৃতপ্রায় বন্দরটি নতুন আলোর মুখ দেখছে। ১০৫০ সালে প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পার করে এখন ৭৬ বছরে পর্দাপণ করলো দেশের দ্বিতীয় সামুদ্রিক বন্দর মোংলা। এক সময়ের পিছিয়ে ফেলা এ মৃত বন্দরটি এখন ব্যবসায়ীদের কাছে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয় অপার সম্ভাবনাময় বন্দর হিসেবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নজরও কেড়েছে এই বন্দর। বলা যায় এই বন্দরটি হতে যাচ্ছে আগামী দিনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সোপান। দীর্ঘ ৭৫ বছরে ধারাবাহিকভাবে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে, বেড়েছে আমদানি-রপ্তানি জাহাজ এবং রাজস্ব। তাই দেশের চাহিদা অনুযায়ী বৈদেশিক বাণিজ্যের ২৫ ভাগই পরিচালিত হচ্ছে এই মোংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে এ বন্দরের রাজস্ব দিয়ে দেশের অর্থনীতি বড় ভূমিকা পালন করবে মোংলা সমুদ্র বন্দর। 
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানায়, দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন হিসেবে খ্যাত মোংলা বন্দর আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। প্রতি বছর বন্দরের আয়ও বাড়ছে। নিজস্ব তহবিল থেকে নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশি বিদেশিদের বিনিয়োগ। আধুনিক কার্গো-কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট সংযোজন, ইয়ার্ড ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিক ও বন্দর ব্যবহারকারীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই আজকের মোংলা বন্দর একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত হয়েছে। 
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলেন, এ বন্দরকে এগিয়ে নিতে হলে প্রথমে ব্যাবসায়ীদের আগ্রহ বাড়াতে হবে। অন্যান্য বন্দরের চেয়ে ব্যাবসায়ীদের জন্য বাড়াতে হবে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা। বন্দরকে আরো যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে পারলে তবেই সফলতা আসবে মোংলা সমুদ্র বন্দরের, বাড়বে জাহাজ আগমন, পন্য আমদানি-রপ্তানি। পাশাপাশী বৃদ্ধি পাবে সরকারের রাজস্ব। 
মাংলা বন্দর ইস্টিভিডরস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জুলফিকার আলী বলেন, একটি বন্দরকে সচল রাখতে হলে সেই বন্দরের নৌ-চ্যানেল ঠিক রাখা জরুরি। মোংলা বন্দর বঙ্গোপসাগর থেকে জেটি পর্যন্ত ১৩১ কিলোমিটার নৌপথ রয়েছে। সেই নৌপথের নাব্যতা ধরে রাখাও জরুরি। বন্দরের চ্যানেলের নাব্যতা রক্ষা এটা বন্দরের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। চ্যানেলে নাব্যতা যদি ধরে রাখা যায় তদা হলে আগামী বছরগুলোতে জাহাজ আগমন বাড়বে। এখন থেকে বন্দর চ্যানেলের ড্রেজিং কার্যক্রমকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিতে হবে বন্দর কর্তৃপক্ষকে।
বন্দরের সিনিয়র উপ-পরিচালক মোঃ মাকরুজ্জামান বলেন, বন্দরটি ৭৫ বছর পার করে ৭৬ বছরে অগ্রসর হচ্ছে। ৭৬ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে বন্দর কর্তৃপক্ষ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে বন্দর জেটি থেকে স্বাধীনতা চত্বর পর্যন্ত র‌্যালি, শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন। সকাল ১১টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, গীতা ও বাইবেল পাঠ ও পরে বন্দরের উন্নয়ন এবং অগ্রগতি নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহীন রহমানের শুভেচ্ছা বক্তব্য। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির কেক কাটা, আলোচনা সভা, এরপর দুপুর ১২টায় সর্বোচ্চ বন্দর ব্যবহারকারীদের ক্রেস্ট প্রদান, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, কৃতিত্বপূর্ণ কাজের  জন্য নির্বাচিত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিদায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্রেস্ট প্রদান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তা, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন আমদানি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী ও তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, বন্দরের পদস্থ কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারী, খুলনা ও বাগেরহাটের চেম্বার অব কমার্স সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের প্রতিনিধি, শিপিং এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ, সিবিএ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ছাড়াও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে মোংলা বন্দরের অগ্রগতি কামনায় দোয়া অনুষ্ঠান এবং দুপুর দেড়টায় মধ্যাহ্ন ভোজের মধ্যদিয়ে শেষ হবে বন্দরের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সব আনুষ্ঠানিকতা।
১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর পশুর নদীর জয়মনির ঘোলে 'দি সিটি অব লিয়নস' নামে প্রথম ব্রিটিশ পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙ্গরের মাধ্যমে মোংলা বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় চালনা এ্যাংকারেজ পোর্ট নামে মোংলা সমুদ্র বন্দরের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেই বন্দরটি আজ বিশ্বের বানিজ্যিক বাজারে আধুনিকত ও পরিবেশ বান্ধব মোংলা সমুদ্র বন্দর নামে পরিচিত লাভ করেছে। দেশের অর্থনীতিওে ভূমিকা রাখবে এ বন্দরটি।