খুলনা | বুধবার | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

বর্তমানে দেশে রোগে পরিণত হয়েছে দুর্নীতি, রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক

হাসিনা-রেহানা-টিউলিপের পৃথক দন্ড

খবর প্রতিবেদন |
০১:৪৮ এ.এম | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫


বর্তমানে দেশে দুর্নীতি একটি রোগে পরিণত হয়েছে। গোটা সমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে এ রোগ। তাই সবাইকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার মামলায় রায়ের পর্যবেক্ষণে এসব কথা বলেন বিচারক। এ মামলায় ১৭ আসামিকে পৃথক দন্ডসহ জরিমানা করেছেন আদালত। সোমবার দুপুরে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মোঃ রবিউল আলমের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রায় পড়া শুরু হয়। 
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে বোন শেখ রেহানাকে প্লট দিয়েছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর মা-খালাকে প্ররোচনা দিয়েছেন টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক। এ সময় পবিত্র কুরআনের সুরা মায়িদার একটি আয়াতের ব্যাখ্যা দেন বিচারক।
আদালত বলেন, ‘মহান আল্লাহর বাণী হলো পাপ ও জুলুমের ক্ষেত্রে একে অপরকে সহায়তা করো না’। অথচ আবাসন সুবিধা থাকার পরও জালিয়াতির মাধ্যমে প্লট নিয়েছেন শেখ রেহানা। সমাজের মানুষকে এই দুর্নীতি রুখে দিতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ায় পৃথিবীর যেকোনো দেশে থাকলেও বিচারের এখতিয়ার আদালতের রয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিচারক।
রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেওয়ায় দুদকের এ মামলায় ১৭ আসামিই দোষী সাব্যস্ত হন। ফলে শেখ রেহানাকে সাত বছর, শেখ হাসিনাকে পাঁচ বছর ও টিউলিপকে দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়। বাকি ১৫ আসামিও পাঁচ বছরের সাজা পান। একই সঙ্গে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন আদালত। 
প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে গত জানুয়ারিতে পৃথক হাসিনা ও রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করে দুদক। এ মামলাগুলোর মধ্যে মোট চারটির রায় হয়েছে।
পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মোঃ আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, ইঞ্জিনিয়ার মেজর (অবঃ) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সাবেক পরিচালক মোঃ নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। এর মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন খুরশীদ আলম। বাকিরা পলাতক থাকায় সাজা পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা আকারের তিনটি প্লট বরাদ্দের দুর্নীতি মামলায় তার ২১ বছরের কারাদন্ড দিয়েছিল।
তারও আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই মামলায় রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, শেখ রেহানার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন। তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। গত ৩১ জুলাই একই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৩২ জন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় দোর্দন্ড প্রতাপে দেশ চালানো শেখ হাসিনা। সেদিন প্রাণভয়ে হেলিকপ্টারে চলে পালিয়ে যান তিনি।
পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ আমলের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে গত জানুয়ারিতে ছয়টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী ও ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিকে আসামি করা হয়। ছয় মামলাতেই হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে। তার পরিবারের তিনটি মামলার বিচার চলে একসঙ্গে। আলাদা আদালতে রেহানা পরিবারের তিন মামলারও বিচার চলে একসঙ্গে।
গত ৩১ জুলাই এসব মামলায় হাসিনা ও রেহেনা পরিবারের সাত সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে (একই ব্যক্তি একাধিক মামলায় অভিযুক্ত) অভিযোগ গঠন করে আদালত। গত ২৩ নভেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে হাসিনা পরিবারের মামলার রায়ের জন্য ২৭ নভেম্বর দিন ঠিক করা হয়েছিল। আর ২৫ নভেম্বর রেহানার পরিবারের এক মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ১ ডিসেম্বর রায়ের দিন ধার্য করেছিল আদালত।