খুলনা | বৃহস্পতিবার | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

দু’গ্র“পের মারামারিতে কয়েকজন আহত

সাতক্ষীরার ৪টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতি অব্যাহত, উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা |
১২:৩২ এ.এম | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫


সাতক্ষীরায় চারটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা বন্ধ রেখে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এ নিয়ে মঙ্গলবার সকালে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দুই গ্র“পের মধ্যে হাতাহাতি-মারামারি এবং বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে বাগবিতন্ডা হয়েছে। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়।
জানা যায়, শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নের দাবিতের সাতক্ষীরা সরকারি বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা টানা দ্বিতীয় দিন নো ওয়ার্ক কর্মসূচি পালন করেছেন। মঙ্গলবারও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শ্রেণিকাজ, পরীক্ষাসহ সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকেন। ফলে সকালে দু’টি বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা নির্ধারিত সুচির পরীক্ষা দিতে এসে বাড়ি ফিরে যায়। 
এদিকে পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের দাবি-শিক্ষকরা ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের অধিকার রাখেন, তবে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত নয়। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ও মানসিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে। অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছে তাদের ভবিষ্যৎ। 
সকালে সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীসহ  কয়েকজন অভিভাবক পরীক্ষা গ্রহণের দাবিতে শিক্ষকদের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হন। তারা নির্ধারিত পরীক্ষা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানান। অভিভাবক জেসমিন নাহার বলেন, শিক্ষকেরা দাবি আদায় করতেই পারেন, কিন্তু বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করে হাজারো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দেওয়া উচিত হয়নি। সময় ও পদ্ধতি-দু’টিই বিবেচনায় রাখা দরকার ছিল।
অপর দিকে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষার পক্ষে বিপক্ষে শিক্ষার্থীদের দু’টি গ্র“প অবস্থান নেয়। এ সময় বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে তারা হাতাহাতি ও মারামারিতে লিপ্ত হয়। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। মারামারির ফুটেজ ফটো সাংবাদিকরা ধারণ করলে শিক্ষার্থীদের কয়েকজন তেড়ে আসে এবং ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ মুছে দিতে সাংবাদিকদের বাধ্য করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 
অভিভাবক বলাই দে বলেন, আমরাও শিক্ষকদের ন্যায়সংগত দাবির পক্ষে একমত। তবে হঠাৎ করে পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় উদ্বেগে দিন কাটছে। গত দুই দিন পরীক্ষা হয়নি। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন ও মূল্যায়ন নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছে। কোচিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন আন্দোলনের অধিকার আছে, কিন্তু কোমলমতি শিশুদের জিম্মি করে কোনো আন্দোলন ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না।
এর আগে সোমবার সকাল থেকে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি (বাসমাশিস) সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ইউনিটের উদ্যোগে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে কর্মসূচি শুরু হয়। এতে বিদ্যালয়ের চলমান বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। পরীক্ষা কেন্দ্রে এসে শিক্ষার্থীরা ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
এক আন্দোলনকারী শিক্ষক বলেন সহকারী শিক্ষকরা বছরের পর বছর বৈষম্যের শিকার। সুপ্রিম কোর্টের রায় থাকা সত্তে¡ও টাইমস্কেল-সিলেকশন গ্রেডের ফাইল ঝুলে আছে। দাবি পূরণের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আমিনুল ইসলাম টুকু বলেন, শিক্ষকেরা মানুষ গড়ার কারিগর। তাঁদের দাবি যৌক্তিক। কিন্তু শিক্ষা ব্যাহত করে আন্দোলন করায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা মন্ত্রণালয়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তিনি আরও জানান  সোমবার-মঙ্গলবারের পরীক্ষাগুলো স্থগিত হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুননির্ধারিত তারিখে পরীক্ষা নেওয়া হবে। আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষকদের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার আবুল খায়ের বলেন পরীক্ষা বন্ধ করে যারা কর্মসূচি পালন করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মঙ্গলবার থেকে সব বিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষাকালে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্তও হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও শিক্ষকরা পরীক্ষা গ্রহণ করেননি। তিনি বলেন জেলার চারটি বিদ্যালয়ে সোমবার ও মঙ্গলবার পরীক্ষা হয়নি। এগুলো হলো  সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং তালা উপজেলার দু’টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
কর্মবিরতির কারণে প্রশাসনিক কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। অভিভাবকেরা দ্রুত আলোচনা করে সমাধানে পৌঁছাতে সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মিজ্ আফরোজা আখতার বলেন, আমি পরীক্ষা চালিয়ে নিতে শিক্ষকদের বলেছি। কিন্তু শিক্ষকরা পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়নি। এসব ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।