খুলনা | শুক্রবার | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ | ২১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

সতর্ক করে মন্ত্রণালয়ের চিঠি

১৬ ডিসেম্বরকে ‘স্বাধীনতা দিবস লিখে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা খুলনা জেলা পরিষদের সিইও তাসলিমা সমালোচিত

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৫৮ এ.এম | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫


খুলনা জেলা পরিষদ থেকে পাঠানো একটি প্রশাসনিক প্রস্তাবনা ঘিরে স্থানীয় সরকার বিভাগে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। গল্লামারী গণহত্যা স্মৃতিসৌধের মেরামত কাজের প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য জেলা পরিষদ স¤প্রতি যে প্রস্তাব পাঠিয়েছে, সেখানে ১৬ ডিসেম্বরকে ‘স্বাধীনতা দিবস  হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় দিবস সম্পর্কে এই মৌলিক ভুল করায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
২ ডিসেম্বর ২০২৫ (১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২) তারিখে স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা পরিষদ শাখা থেকে উপসচিব খোন্দকার ফরহাদ আহমদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এই ভুলসহ একাধিক ত্র“টি তুলে ধরা হয়। পত্রে বলা হয়েছে, খুলনা জেলা পরিষদ থেকে পাঠানো প্রস্তাবে প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয়, কোন অর্থবছরের অর্থে প্রকল্পটি চলবে, কিংবা এডিপি নাকি রাজস্ব খাতের অর্থ ব্যবহার করা হবে-এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়া জেলা পরিষদ সভার কার্যবিবরণীতে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনুমোদিত ব্যয়ের তথ্য নেই, এবং কারিগরি প্রতিবেদনে সম্ভাব্য কাজের ধরন, প্রকল্প ব্যয়ের বিস্তারিত, দর ও পরিমাণ কোনো কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। ফলে প্রস্তাবটি প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য সম্পূর্ণ অযোগ্য বিবেচিত হয়েছে।
কিš  সবচেয়ে আলোচিত অংশটি হলো ‘১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা দিবস  হিসেবে উল্লেখ করা। দেশজুড়ে যেখানে ২৬ মার্চ জাতীয় স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছ থেকে এ ধরনের ভুলকে অজ্ঞতাজনিত গুরুতর ত্র“টি হিসেবে বিবেচনা করেছেন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
খুলনা জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩১তম ব্যাচের কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার। বর্তমানে তিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন। তার স্বাক্ষরিত এই ভুলে ভরা প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে টক অব দ্য মিনিস্ট্রি হয়ে উঠেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে।
প্রসঙ্গত, তাসলিমা আক্তারকে নানান অদক্ষতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গত ১৯ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিš  বিশেষ তদবিরে মাত্র চার দিন পর ২৩ নভেম্বর তার বদলি স্থগিত হয়। মন্ত্রণালয়ের ভেতর অনেকেই মনে করছেন, পরিবর্তন স্থগিত হওয়ার বিষয়টি তাকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার সুযোগ দিলেও নতুন ভুল তার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নকে আরও গভীর করেছে।
গল্লামারী গণহত্যা স্মৃতিসৌধের মেরামত প্রকল্পটি স্থানীয়ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্ত প্রয়োজনীয় তথ্য অসম্পূর্ণ থাকায় এর প্রশাসনিক অনুমোদন আটকে গেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ জেলা পরিষদকে ত্র“টিগুলো সংশোধন করে জরুরিভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
উপসচিব আরও লিখেছেন-ভবিষ্যতে নির্ভুল প্রস্তাব প্রেরণে অধিকতর যতœশীল হওয়ার জন্য বলা হলো।  
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাছলিমা আক্তারের প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন দপ্তরে।