খুলনা | রবিবার | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | ২২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

খালেদা জিয়ার অবস্থা বিবেচনায় বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত

খবর প্রতিবেদন |
০১:১২ এ.এম | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫


বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টি এখনো স্থির হয়নি। তার শারীরিক অবস্থার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে মেডিকেল বোর্ড এবং বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত তখনই নেওয়া হবে যখন চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করবেন যে তাকে নিরাপদে স্থানান্তর করা যাবে। শনিবার বিকেলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, দেশনেত্রীর চিকিৎসায় কোনো কমতি রাখা হবে না। তিনি বলেন, ‘এয়ার এ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত আছে। তবে শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’
ডাঃ জাহিদ বলেন, গত ২৩ নভেম্বর থেকে খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিদেশে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা শুরু হলেও কিছুটা বিলম্ব ঘটেছে।
বিলম্বের মূল কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, কাতারের আমিরের উদ্যোগে পাঠানো এয়ার এ্যাম্বুলেন্সের কারিগরি ত্র“টি, যা সময়মতো আসেনি। এ ছাড়া মেডিকেল বোর্ড জরুরি সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে উনাকে ফ্লাই করানো ওই মুহূর্তে নিরাপদ নয়।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এ সদস্য জানান, বিদেশে নেওয়ার সময় নির্ধারণ ভবিষ্যতে তার শারীরিক অবস্থাই জানাবে। চিকিৎসায় সর্বোচ্চ প্রাধান্য ও সমন্বয় নিশ্চিত করতে দেশি ও আন্তর্জাতিকভাবে বহু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োজিত আছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুক্ত রয়েছেন লন্ডনের জন পেট্রিক কেনেডি, জেনিফার ক্রস, প্রফেসর গোলস্টন, প্রফেসর ডক্টর রিচার্ড, শাকিল ফরিদ ও প্রফেসর গার্বি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রফেসর হাবিবুর রহমান লুলু, প্রফেসর ডক্টর জন হ্যাবিল্টন, প্রফেসর ডক্টর হামিদরাও, প্রফেসর ডক্টর রফিকউদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর ডক্টর জর্জিস।
ডাঃ জাহিদ অনুরোধ করেন, ‘দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন। শুধু সঠিক তথ্যই প্রচার করা উচিত।’
তিনি জানান, কাতার সরকার ও অন্তর্র্বতীকালীন সরকার সর্বোচ্চ সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। তবে দেশের বাইরে নেওয়ার আগে চিকিৎসকরা শারীরিকভাবে নিরাপদ স্থানান্তর নিশ্চিত করবে, কারণ ১২-১৪ ঘণ্টার এয়ারফ্লাইটের সময় অসুস্থ ব্যক্তির জন্য উচ্চ উচ্চতার প্রভাব সবসময় সহ্য করা সম্ভব নয়।
আশা প্রকাশ করে ডাঃ জাহিদ বলেন, ‘আল্লাহর রহমত ও সকলের দোয়ায় বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হবেন।’
ডাঃ জাহিদ হোসেন বলেন, বেগম জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং তারা আশাবাদী যে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। 
তিনি জানান, বেগম জিয়ার চিকিৎসা সমন্বয়ের জন্য তার পুত্রবধূ ডাঃ জুবাইদা রহমান সার্বক্ষণিক মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা ও তদারকি করছেন। এ ছাড়া তারেক রহমানও সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন এবং চিকিৎসকদের নির্দেশনাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
বিদেশ নেওয়ার বিষয়টি বিলম্বিত হচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘বিদেশে নেওয়াটা ওনার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল।’
তিনি জানান, আগে বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা বলা হলেও কাতার এয়ার এ্যাম্বুলেন্স আসতে পারেনি। এছাড়া মেডিকেল বোর্ডের মতে, বেগম জিয়াকে এখনই বিদেশে নেওয়া সম্ভব নয়।
ডাঃ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘১২-১৪ ঘণ্টা জার্নি করে বিদেশের নেওয়ার সক্ষমতা এখন হয়নি। স্বাস্থ্যের উন্নতি হলে বেগম জিয়াকে বিদেশে নেওয়া হবে।’
একইসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো বিভিন্ন গুজব নিয়ে সতর্ক করেন এবং গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহŸান জানান তিনি।
এয়ার এ্যাম্বুলেন্স ফ্লাইটকে ‘ভিভিআইপি মুভমেন্ট’ ঘোষণা : রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য এয়ার এ্যাম্বুল্যান্সের ফ্লাইটটিকে ‘ভিভিআইপি’ উল্লেখ করে শিডিউল অনুমোদন করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ফ্লাইট অবতরণের ক্লিয়ারেন্সও দিয়েছে।
শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নিতে ৯ তারিখে এয়ার এ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় আসবেন এবং ১০ তারিখে ঢাকায় ত্যাগ করবেন। ভিভিআইপি মুভমেন্ট হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে এয়ার এ্যাম্বুলেন্সের ল্যান্ডিং থেকে টেকঅফ পর্যন্ত সব ধরনের নিরাপত্তা ও অপারেশনাল প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় রুট ও অবতরণের সময় চূড়ান্ত নিশ্চিতকরণ পাওয়া মাত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলো সক্রিয় হয়ে উঠবে।
এর আগে কাতারের আমিরের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ এয়ার এ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু কারিগরি ত্র“টির কারণে সেটি পাঠানো সম্ভব হয়নি। ফলে বিকল্প হিসেবে জার্মানির এফএআই রেন্ট-এ-জেট প্রতিষ্ঠানের একটি এয়ার এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে কাতার সরকার।
ঢাকায় কাতার দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ঢাকায় কাতার দূতাবাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা আসাদুর রহমান আসাদ গণমাধ্যমকে বলেন, কাতার সরকার জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠানের এয়ার এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢাকায় পাঠাচ্ছে। চিকিৎসক এবং বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সময় সমন্বয় করে ওই এয়ার এ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছাবে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডনে যাত্রাকারী দলের সংখ্যা কমানো হবে। বিএনপি শুরুতে ১৮ জনের তালিকা করলেও অগ্রাধিকারভিত্তিতে সীমিত সংখ্যক মানুষ এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে ভ্রমণ করবেন। বাকি ব্যক্তিরা প্রয়োজন হলে বাণিজ্যিক ফ্লাইটে যাবেন।
এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান: খালেদা জিয়াকে দেখতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডাঃ জুবাইদা রহমান।  শনিবার বেলা তিনটা ২০ মিনিটের দিকে হাসপাতালে তাঁর গাড়ি প্রবেশ করে।  বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আতিকুর রহমান রুমন জানান, জুবাইদা রহমান এখন বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন। তিনি বলেন, ধানমন্ডির বাসায় থাকার সময়েও টেলিফোনে সময় সময় উনি তার শাশুড়ির স্বাস্থ্যের খোঁজখবর রেখেছেন।
জুবাইদা রহমান শুক্রবার লন্ডন থেকে ঢাকায় পৌঁছান। তিনি শাশুড়িকে দেখতে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। সেখানে তিনি আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় অবস্থান করেন। পরে তিনি ধানমন্ডির পৈতৃক বাসায় যান এবং রাতে আবারও হাসপাতালে আসেন। উল্লেখ্য, তিনি আগে থেকেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের সঙ্গে ভাচ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন। এর আগে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হলেও শুক্রবার থেকে তিনি তার চিকিৎসায় সরাসরি অংশ নেন।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে আনা হয়। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড তাঁর চিকিৎসা করছে। চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া ইতোমধ্যে ১৪ দিন কাটিয়েছেন এই হাসপাতালে। চিকিৎসকদের মতে, তার শারীরিক অবস্থা মোটাদাগে ‘অপরিবর্তিত’ রয়েছে।
মেডিকেল বোর্ডের একাধিক চিকিৎসক জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন এখনো বিমানযাত্রার সক্ষমতা অর্জন করেননি। সেজন্যই লন্ডনে নেওয়ার বিষয়টি পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে এক চিকিৎসক বলেন, অনেকগুলো প্যারামিটার ইতিবাচক সংকেত দিচ্ছে, তবে অবস্থার উন্নতি হয়েছে এমনটা এখনই বলা যাচ্ছে না। আমরা আশা করছি, ইতিবাচক সংকেত অব্যাহত থাকলে উনি ৯-১০ ডিসেম্বরের দিকে ফ্লাই করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেন।
দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী জানান, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের জন্য কাতার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ম্যাডামের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তক্রমে এয়ার এ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশে আসবে। সেইভাবে তারা (কাতার) এখন প্রস্তুত রয়েছে। মেডিকেল বোর্ড যখনই সিদ্ধান্ত জানাবে, তখনই এয়ার এ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় আসবে এবং ম্যাডাম বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নেওয়া হবে। 
উল্লেখ্য, ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গত ২৩ নভেম্বর রাতে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। মেডিকেল বোর্ডের দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত¡াবধানে ১৩ দিন ধরে সেখানেই সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা চলছে।