খুলনা | বুধবার | ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ | ২৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

পাঠ্যবই মুদ্রণে সিন্ডিকেট মান নিশ্চিত করা জরুরি

|
১২:১৪ এ.এম | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫


নতুন বছরে নতুন ক্লাসে নতুন বই শিশুদের কাছে আনন্দের যেন কোনো সীমা থাকে না। সুন্দর নতুন বই পাওয়ার আনন্দ শিশুদের পাঠের উৎসাহ বাড়িয়ে দেয়। তারা সে বই শুঁকে দেখে, বুকে জড়িয়ে ধরে। এ জন্য পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই শিশুদের বইগুলো হয় ভালো কাগজে ছাপা সুন্দর, রঙিন ও আকর্ষণীয়। কিন্তু  প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য আমাদের হতাশ করেছে। জানা গেছে, আগের মতোই এ বছরও কিছু প্রেসে বই ছাপা হচ্ছে অনেক নিম্নমানের কাগজে। গড়ে উঠেছে তাদের বিশেষ সিন্ডিকেট। অভিযোগ রয়েছে, সেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) অ্যাকাউন্টস এবং পাঠ্যপুস্তক শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর।
কিন্তু নিম্নমানের এসব বই শিশুদের আগ্রহ ও উচ্ছ¡াসকে ধারণ করতে পারবে কি? আরো একটি বিষয় শিশুদের হতাশ করে, মনঃকষ্টের কারণ হয়। তা হলো পাঠ্যবই পেতে পেতে মার্চ-এপ্রিল মাস হয়ে যাওয়া। এবারও তেমন আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিম্নমানের কাগজের বই কয়েক মাসের মধ্যেই ছিঁড়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়।
তখন বাজার থেকে চোরাই বই বেশি দামে কিনতে হবে। না হয় ফটোকপি করে কোনো রকমে পাঠ চালাতে হয়। কিন্তু সেই পাঠে শিশুদের আগ্রহ খুবই কম থাকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েকটি প্রেসের বিরুদ্ধে রিসাইকলড কাগজে বই ছাপার অভিযোগ উঠেছে। মানদণ্ড অনুযায়ী, এতে কাগজের জিএসএম ও ব্রাইটনেস পাওয়া যাচ্ছে না।কিন্তু মানের ব্যাপারে কঠোর হতে গেলে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে এনসিটিবি এবং ইন্সপেকশন এজেন্টের কর্মকর্তাদের।
দেশে এখন ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৩০ কোটি বই ছাপার কাজ চলছে। এর মধ্যে প্রাথমিকের বই ৯ কোটি এবং মাধ্যমিক ও ইবতেদায়ির জন্য ২১ কোটি বই। প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট বইয়ের এক-দশমাংশের বেশি কাজ পেয়েছে চারটি প্রেস। সেগুলো হলো অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস, কর্ণফুলী প্রিন্টিং প্রেস, কচুয়া ও আনোয়ারা প্রিন্টিং প্রেস। এনসিটিবির অনুরোধ ছিল কার্যাদেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করে প্রেসগুলো যেন বই ছাপার কাজ শুরু করে। কিন্তু এই চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দু’টি সময়ক্ষেপণ করে একেবারে শেষ সময় গত ৪ ডিসেম্বর সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার চুক্তি করে। ফলে এসব বই ছাপা শেষ করতে আগামী ফেব্র“য়ারি-মার্চ পর্যন্ত লেগে যাবে।
এনসিটিবির মানদণ্ড অনুযায়ী, এবার প্রাথমিক ও ইবতেদায়ির বইয়ে ৮০ জিএসএম ও ৮৫ ব্রাইটনেস থাকতে হবে। এই বইগুলোর সব চার রঙের। অন্যদিকে মাধ্যমিকের বইয়ে ৭০ জিএসএম ও ৮৫ ব্রাইটনেস থাকার কথা রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চাপে প্রাথমিকের বইগুলো মোটামুটি মানসম্পন্ন হলেও ইবতেদায়ি ও মাধ্যমিকের বইয়ে দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের কাগজ। এখানেও অভিযোগের তীর সেই অগ্রণী, কর্ণফুলীসহ চারটি প্রিন্টিং প্রেসের বিরুদ্ধে। অবশ্য প্রেসগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। এনসিটিবির সচিব অধ্যাপক মোঃ সাহতাব উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা যেখানেই সমস্যা পাচ্ছি, সেখানেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের একাধিক টিম, মন্ত্রণালয়ের টিম ও ইন্সপেকশন এজেন্ট সবাই কাজ করছে। এর পরও আমরা যে শতভাগ সফল হব, সেটা বলতে পারছি না।’
আমরা আশা করি, শিশুদের পাঠ্যবই মুদ্রণে মান নিয়ে কোনো আপোষ করা হবে না। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেকোনো মূল্যে পাঠ্যবইয়ের মান নিশ্চিত করতে হবে।