খুলনা | শুক্রবার | ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ | ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

সর্বজনীন সালাম: সকল স্থান সময় ও ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী |
০১:৫০ এ.এম | ১২ ডিসেম্বর ২০২৫


অস্ট্রেলিয়ায় একদিন আমি একজনকে সম্ভাষণ করে বললাম, গুড মর্নিং (সু প্রভাত)। কোন উত্তর না দিয়ে সে আমার দিকে জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ইজ ইট স্টিল মর্নিং? (এখনও কি সকাল আছে?)। আমি আমার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম তখন স্থানীয় সময় আনুমানিক সকাল ১১:৫০। আমি অবশ্য আগেই ঘড়ির সময় দেখে নিয়েছিলাম। বাংলাদেশে আমরা ইংরেজী গ্রামারে শিখেছিলাম যে দুপুর ১২টার আগে হলে গুড মর্নিং বলতে হবে। আমি হিসাব-নিকাশ কষে ওটাই বলেছিলাম। কিন্তু যেখানে সকাল হয়েছে ৫:৪০-এ সেখানে ১১:৫০ নিশ্চয়ই সকাল নয়? ইতোমধ্যে দুপুর হয়ে যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে গেছে। সে এটাই বুঝাতে চেয়েছিল। সন্ধার আধা ঘন্টা আগে গুড আফটারনুন (শুভ বিকাল) বলে একবার বিব্রত অবস্থায় পড়েছিলাম। আমাদের দেশে এটাকে বিকেলেই ধরা হয়। এই রকম ঝামেলায় আরও কয়েকবার পড়েছি। 
ধরুন, এক ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে সকালে অন্য এক ব্যক্তিকে আমেরিকায় ফোন করলো এবং বললো, গুড মর্নিং (সু প্রভাত)। এই ক্ষেত্রে সে মারাত্মক একটি ভুল করলো। কারণ আমেরিকায় তখন গভীর রাত। আমেরিকায় অবস্থানকারী সে ব্যক্তি তাড়াতাড়ি ফোন  ধরে ভড়কে যাবে, বুঝতে পারবে না সে কি বলবে; (সু প্রভাত); গুড আফটারনুন (শুভ বিকেল) না  গুড নাইট (শুভ রাত্রি)। তখন তার হিসাব করে দেখতে হবে বাংলাদেশে তখন সময় কতো। এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আর যদি সে সাথে সাথে আমেরিকার সময় অনুসারে বলে, গুড নাইট (শুভ রাত্রি); তাহলে সেও মারাত্মক একটি ভুল করলো। কারণ বাংলাদেশে তখন কেবল  সকাল হলো। সুতরাং ঝামেলাটা থেকেই গেলো। ইংরেজিতে সম্ভাষণ ও শুভ কামনার জন্য কমপক্ষে গুড মর্নিং, গুড আফটারনুন, গুড ইভনিং, গুড নাইট, গুড উইক-এ্যন্ড (সাপ্তাহিক ছুটির শুভ কামনা), গুড হলিডেজ (স্বল্প  ছুটির শুভ কামনা), গুড ভেকেশন (লম্বা ছুটির শুভ কামনা), হাই, হ্যালো, টাটা, বাই এতগুলো শব্দ ব্যবহার করতে হবে স্থান-কাল-পাত্র ভেদে। কিন্তু সালামের একটি বাক্যই যথেষ্ট এতগুলো অবস্থার ক্ষেত্রে। দেখা হলে সালাম, বিদায় বেলায় সালাম, ফোন ধরে সালাম, ফোন শেষে সালাম, ডেকে পাঠাতে সালাম; আরও অন্যান্য ক্ষেত্রে সালাম। কি দারুণ তাই না? আমাদের দেশে কারও সাথে দেখা হলে সাধারণত আমরা বলি, কেমন আছেন? তাহলে সে যদি ভালো না থাকে তারপরও লৌকিকতার কারণে উত্তর দিবে, ভালো আছি। অন্তরে বলবে ভালো নেই, আর মুখে বলবে, ভালো আছি। অর্থাৎ অনিচ্ছাকৃত ভাবেই তাকে  মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে। আর ইসলামের সদ্ভাষণ কতো সুন্দর! আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। অর্থাৎ তোমার ওপর মহান আল্লাহ’র শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক। এটা কোন ব্যক্তি, স্থান বা সময়ের সঙ্গে সম্পর্কিত না। কেউ যদি ভালো থাকে, তাহলে এর অর্থ হলো মহান আল্লা’র তোমার শান্তি আরও বাড়িয়ে দিক। আর যদি খারাপ অবস্থার মধ্যে থাকে তাহলে এর অর্থ হলো মহান আল্লা’র রহমতে তোমার  অশান্তি দুর হোক এবং তোমার কাছে শান্তি আসুক।
পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম আলাইহিস সালামকে মহান আল্লাহপাক সৃষ্টি করার সাথে সাথে বললেন, উপস্থিত সকলকে সালাম করো। তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, আসসালামু আলাইকুম..। আবার যখন মানুষ জান্নাতে যাবে সেখানেও ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে বলা হবে সালাম। অর্থাৎ সালাম সকল মানুষের আদি-অন্তের সাথে জড়িত একটি উত্তম আমল। সালাম একই সাথে সম্ভাষণ, বিদায় ও দোয়া। পৃথিবীতে মানুষকে সদ্ভাষণের জন্য যতো ধরনের বাক্য বা পদ্ধতি আছে তার মধ্যে সালাম হলো সর্বোত্তম পদ্ধতি। এটা সর্বজনীন। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে সকলের জন্য প্রযোজ্য। 
(লেখক: মৎস্য বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)