খুলনা | সোমবার | ০৭ জুলাই ২০২৫ | ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

পর্যটন শিল্পের বিকাশে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

|
১২:১৭ এ.এম | ১০ অক্টোবর ২০২১


যে কোনো দেশের জন্য পর্যটন একটি সম্ভাবনাময় বড় খাত। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশে এই খাতে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ তেমনভাবে হয়নি। বিদেশি বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। বিদেশি বড় বিনিয়োগ ছাড়া পর্যটন খাতকে কোনোক্রমেই বিদেশিদের মাঝে আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব হবে না। সিঙ্গাপুর, হংকং, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে শুধু বিদেশি আকর্ষণীয় বিশাল বিনিয়োগের মাধ্যমে জমজমাট ব্যবসা চলেছে। আমাদেরও অনুরূপ চিন্তাভাবনা করতে হবে।
বাংলাদেশের পর্যটনের রাজধানী হিসেবে ইতোমধ্যেই কক্সবাজার ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। সেখানে বিশেষ করে ছুটির দিনে এত বেশি পর্যটকের আগমন ঘটে যে, হোটেল-মোটেলগুলোতে ঠাঁই হয় না। এ কারণে এখানে অবকাঠামোগত ব্যবস্থার আরও উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের জন্য কক্সবাজার ও এর আশপাশের এলাকাকে আরও আকর্ষণীয় হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। বদলে যাচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। এ লক্ষ্যে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে কক্সবাজারে পর্যটন অবকাঠামো নির্মানে ২৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দেশে পর্যটন শিল্পকে বড় শিল্প খাত হিসেবে দাঁড় করাতে হলে দীর্ঘমেয়াদি ও বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। উন্নত মানের আকর্ষণীয় ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারলে বিদেশি পর্যটক আমাদের দেশে প্রচুর আসবে। পর্যটকরা কেন সিঙ্গাপুর, হংকং, মালয়েশিয়া যাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সবচেয়ে বড়। দ্বিতীয়ত, আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। বিনোদনের সুন্দর ও নতুন নতুন আইটেম। অনুরূপ আকর্ষণীয় বিনোদনমূলক পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলতে পারলে পর্যটক আসবে।
১৯৯১ সালে বাংলাদেশের পর্যটন নীতিমালার আলোকে পর্যটনকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় এই খাতের সম্ভাবনা অনেক উজ্জ্বল হয়েছে। কিন্তু নানাবিধ সমস্যার কারণে বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশে প্রত্যাশিত ও কাঙ্খিত অগ্রগতি সাধিত হয়নি। বাংলাদেশে পর্যটন আকর্ষণগুলোর মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, মিঠামইন হাওর, সিলেটের চা-বাগান, রাতারগুল, বিছানাকান্দি ও পৃৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দু’টোই দেখা যায়। কোরাল আইল্যান্ড সেন্টমার্টিন, রামুর বৌদ্ধমন্দির, হিমছড়ির ঝরনা, ইনানী সমুদ্রসৈকত, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ, টাঙ্গুয়ার হাওর ও কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সহজেই পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সবুজ পাহাড়ি অঞ্চল দেখে পর্যটকরা আত্মভোলা হয়ে যায়।
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে উলে­খিত পর্যটন প্রসার প্রয়োজন। অল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করলে সমবায় পর্যটন, কমিউনিটি বেইজড পর্যটন আরও স¤প্রসারিত হবে। গ্রামই হতে পারে পর্যটন শিল্পের প্রাণকেন্দ্র। এতে করে গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। এর জন্য গ্রামের যুবসমাজকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ গাইডিং, কুকিং, ইন্টারপ্রিটেশনসহ নানা প্রশিক্ষণ।
পর্যটন শিল্প বাংলাদেশে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দেশের মানুষও দেশকে দেখতে চায়, বেড়াতে চায়, অবসর সময় বিভিন্ন জেলায় জেলায় বেড়ানো বেশ অভ্যাস গড়ে উঠেছে। এজন্য বিভিন্ন জেলায় বিনোদন ও থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা থাকলে পর্যটন শিল্প প্রসার লাভ করবে। আর বিদেশিদের জন্য দরকার নিরাপদ সড়ক, সুন্দর থাকা-খাওয়ার হোটেল-মোটেল এবং পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আমাদের দেশ সবুজ। সবুজকে সবাই ভালোবাসে। এই সবুজের সঙ্গে কিন্তু বিনোদন যোগ করতে পারলে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়বে। আর এতে করে আমাদের দেশের অর্থনীতি আরও গতিশীল ও শক্তিশালী হবে।