খুলনা | বুধবার | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৩ পৌষ ১৪৩২

হাদিকে গুলি: শুটার ফয়সালকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলো র‌্যাব

খবর প্রতিবেদন |
১২:১৯ পি.এম | ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫


ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদের বোনের বাসার পাশ থেকে দুটি ম্যাগজিন ও ১১টি গুলি উদ্ধার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতার করা হয়েছে ফয়সালের বাবা ও মাসহ তিনজনকে।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখা থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে কিছু নতুন তথ্য।

এতে বলা হয়, গোপন তথ্য ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে আগারগাঁওয়ের কর্নেল গলিতে ফয়সাল করিমের বোনের বাসা ও পাশের ভবনের ফাঁকা স্থান থেকে দুটি ভরা ম্যাগজিন, ১১টি গুলি এবং একটি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।

একইসঙ্গে ফয়সালের বোনের বাসা থেকে একটি ট্যাব, একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল, একটি পুরনো বাটন মোবাইল, দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৫টি চেক বই, ছয়টি পাসপোর্ট এবং বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবের ৩৮টি চেক উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাব আরও জানায়, ওই বাসার আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফয়সাল করিম ও তার সহযোগী আলমগীর ঘটনার দিন বেলা ১১টার দিকে মোটরসাইকেলে করে বাসা থেকে বের হয়ে যান।

পরে বিকেল ৪টার দিকে ফয়সাল, আলমগীর এবং ফয়সালের মা ও ভাগিনাকে দুই ভবনের মাঝের ফাঁকা স্থান থেকে কিছু বের করতে দেখা যায়।

বিকেল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে ফয়সাল ও আলমগীর একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

এদিকে নরসিংদীতে অভিযান চালিয়ে মো. ফয়সাল (২৫) নামে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। এসময় তিনটি অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে।

তবে এই তিনটি অস্ত্রের কোনো একটি দিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হাদিকে গুলি করা হয়েছে কি না, তা ফরেনসিক পরীক্ষার পর জানা যাবে। র‍্যাব-১১ নরসিংদীতে মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে এসব অস্ত্র উদ্ধার করে।

র‌্যাব জানায়, অস্ত্র ও গোলাবারুদ নরসিংদী জেলার সদর থানাধীন তরুয়া এলাকাস্থ মোল্লার বাড়ির সামনে তরুয়ার বিলে পানির মধ্য থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে ফয়সালের বাবা মো. হুমায়ুন কবির (৭০) এবং মা মোছা. হাসি বেগমকে (৬০) গ্রেফতার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টায় র‍্যাব-১০-এর একটি দল গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ হাউজিং এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাচেষ্টা মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ওরফে শুটার ফয়সালের বাবা ও মাকে গ্রেফতার করা হয়।

র‍্যাব জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে—গ্রেফতার দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে ফয়সাল করিম তৃতীয়। ফয়সাল ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় তার বোন জেসমিন আক্তারের সপ্তম তলার বাসায় প্রায়ই যাতায়াত করতেন। ঘটনার দিন (১২ ডিসেম্বর) রাতে একটি কালো ব্যাগ নিয়ে তিনি ওই বাসায় ওঠেন। পরে ভবনের সরু জায়গায় ব্যাগটি ফেলে দেন।

র‍্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, ফয়সাল তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোনের একটি ওই ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেন এবং অন্যটি তার মা হাসি বেগমকে দেন। পরে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। অবস্থান নিরাপদ মনে না হওয়ায় তিনি আগারগাঁও থেকে মিরপুর হয়ে শাহজাদপুরে তার চাচাতো ভাই আরিফের বাসায় যান।

এ সময় ফয়সালের ব্যাগ বহনের জন্য তার বাবা হুমায়ুন কবির একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে দেন এবং কিছু অর্থও সরবরাহ করেন বলে র‍্যাবের দাবি। পরে ফয়সালের বাবা-মা তাদের ছোট ছেলে হাসান মাহমুদ বাবুলের কেরানীগঞ্জের বাসায় চলে যান।

গত শুক্রবার গণসংযোগের জন্য বিজয়নগর এলাকায় গেলে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে হাদিকে গুলি করা হয়। গুলিটি তার মাথায় লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সোমবার দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়।

হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পরিবারের সম্মতিতে রোববার রাতে পল্টন থানায় একটি মামলা করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। মামলাটি বর্তমানে ডিবিতে রয়েছে। মামলায় এর আগে ফয়সালের স্ত্রী, বান্ধবী, শ্যালক, হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক সন্দেহে একজন, সহযোগী কবীর এবং তাকে পালাতে সহায়তার অভিযোগে সীমান্ত এলাকা থেকে আরও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।