খুলনা | রবিবার | ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৬ পৌষ ১৪৩২

কয়েক লাখ মানুষের অংশগ্রহণে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জানাজা শহীদ হাদির

খবর প্রতিবেদন |
০৪:৫৫ পি.এম | ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

 

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদীর নামাজের জানাজা ছিল অভূতপূর্ব—এমনটাই বলছেন উপস্থিত মুসল্লীরা। জনসমুদ্রের মতো ভিড়, শোকস্তব্ধ পরিবেশ আর এক হৃদয়স্পর্শী নীরবতা মিলিয়ে এই জানাজা যেন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিরল অধ্যায় হয়ে উঠেছে। অনেকেই বলছেন, “জীবনে এত বড় জানাজা আর কখনো দেখিনি।” জানাজায় অংশগ্রহণকারী অনেকেই বলছেন, শহীদ ওসমান হাদির জানাজায় ৭ থেকে ৮ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর দুইটা ২৫ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন শহীদ হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। এতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ধর্ম উপদেষ্টা, জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান, বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, সহযোদ্ধা ও সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।

জানাজা শুরু হওয়ার অনেক আগেই আশপাশের সড়ক, মাঠ ও খোলা জায়গা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন শেষ বিদায় জানাতে। বয়স্ক, তরুণ, শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী—সব শ্রেণির মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকে দাঁড়িয়ে, অনেকে বসে, আবার অনেকে রাস্তার ওপর সারিবদ্ধ হয়ে জানাজায় শরিক হন।

৬৫ বছর বয়সী ধানমন্ডির বাসিন্দা ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমার জীবনে অনেক জানাজায় অংশ নিয়েছি। কিন্তু এত বড় জানাজা দেখিনি। শহীদ হাদি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। এ কারণে এত মানুষ জানাজায় অংশ নিয়েছেন।

মিরপুর-১ নম্বরের বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, আমার ৪২ বছরের জীবনে এত বড় জানাজা দেখিনি। আমার ধারণা ৭ থেকে ৮ লাখ মানুষ জানাজায় অংশ নিয়েছেন।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আকিব হাসান বলেন, হাদি ভাইয়ের জানাজায় কত লাখ মানুষ হয়েছে বলতে পারব না। তবে এত মানুষ জীবনেও দেখিনি।

সেগুনবাগিচার বাসিন্দা সালাউদ্দিন বলেন, আমার ধারণা জানাজায় ৬ থেকে ৭ লাখ মানুষ হয়েছে।

মুসল্লীদের মতে, এই বিশাল উপস্থিতি শুধু একটি জানাজা নয়—এটি ছিল ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের এক সম্মিলিত প্রকাশ। কারও চোখে অশ্রু, কারও কণ্ঠে দোয়া—সমবেত মানুষের হৃদয়ে একই অনুভূতি, একই প্রার্থনা।

স্থানীয়রা জানান, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবকরা নিরলসভাবে কাজ করেছেন। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যেও জানাজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। শেষ দোয়ায় গোটা প্রাঙ্গণ যেন একসাথে নিঃশ্বাস ধরে রাখে।

এই জানাজা নিয়ে মানুষের মুখে মুখে একটাই কথা—এটি শুধু সংখ্যার দিক থেকে বড় ছিল না, ছিল আবেগ, সম্মান আর স্মৃতির দিক থেকেও ঐতিহাসিক। অনেকের বিশ্বাস, এমন দৃশ্য বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘদিন মনে গেঁথে থাকবে।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় শহীদ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তার বড় ভাই জানাজায় ইমামতি করেন। দুপুর ১টার মধ্যে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার দুটি বড় মাঠ মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এরপর মানুষের উপস্থিতিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর বিশাল রাজপথ ছাপিয়ে ফার্মগেটের খামারবাড়ি, আসাদগেট পর্যন্ত পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ওইদিন চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র পর্যন্তও ছিল মানুষ আর মানুষ।

জানাজার আগে শহীদ ওসমান হাদির ভাই যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন লাখ লাখ মানুষ ছিলেন অশ্রুসিক্ত।

জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য সকাল থেকেই মানুষ মিছিল সহকারে, কেউবা নিজ উদ্যোগে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে আসতে শুরু করেন। রাজধানীর সব পথ যেন এসে মিলে এক মোহনায়।