খুলনা | বুধবার | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৯ পৌষ ১৪৩২

কালীগঞ্জের মাটিতে সোনালী সম্ভাবনা কমলা চাষে তাসরিফের সাফল্য

হাবিব ওসমান, কালীগঞ্জ |
১২:৩২ এ.এম | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫


ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ফরাশপুর মাঠে সবুজের মাঝে চোখ জুড়ানো কমলার বাগান। ডালে ডালে ঝুলছে থোকায় থোকায় সুমিষ্ট কমলা। এই বাগানই বদলে দিয়েছে এক তরুণের স্বপ্ন, আর প্রমাণ করেছে, ইচ্ছা থাকলে অসম্ভব কিছু নেই।
চার বছর আগে এই জমিতেই চীনা জাতের ২৭০টি কমলার চারা রোপণ করেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মোঃ তাসরিফ হোসেন। পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গা থেকে সংগ্রহ করা চারা তিনি লাগান প্রায় ৭৩ শতাংশ জমিতে। শুরুতে অনেকেই বলেছিলেন, এই মাটিতে কমলা হবে না, অকারণে সময় আর টাকা নষ্ট করবেন না। কিন্তু সব বাধা আর আপত্তিকে উপেক্ষা করে নিজের বিশ্বাসে অটল ছিলেন তাসরিফ।
সরেজমিন দেখা যায় চার বছর আগে লাগানো চারাগুলো আজ ফল আসছে। এ বছরই প্রথম ফল ধরেছে বাগান জুড়ে। ২৭০টি গাছের প্রতিটিতেই এসেছে সুমিষ্ট কমলা। ধারণা করা হচ্ছে প্রতিটি গাছে ৭০ থেকে ৮০ কেজি পর্যন্ত কমলা উৎপাদন হবে। ইতোমধ্যে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কমলার দাম উঠেছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। গাছে থাকা কমলার পরিমাণ বিবেচনায় চলতি মৌসুমেই কয়েক লাখ টাকার কমলা বিক্রির আশা করছেন তাসরিফ। এমন সাফল্যে বাগানটি দেখতে ভিড় করছেন আশপাশের মানুষ, আগ্রহ দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও।
স্থানীয় এক ফল বাগান ক্রেতা বলেন, আমি বাগান কেনা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন জেলা থেকে বাগান কিনে থাকি। এই কমলার বাগানটি আমি কিনেছি। এই চাষটা খুবই লাভজনক। আশা করছি এখান থেকেও ভালো লাভ হবে। এই বাগান কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করেছে স্থানীয়দের জন্য।
কৃষি শ্রমিক মমিন হোসেন জানান আমি এই বাগানে কাজ করি। প্রতিদিন ৫০০ টাকা মজুরি পাই। কাজটা করতে ভালো লাগে, গাছের যতœ নিতে ভালো লাগে, আমাদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। বাগানের দৃশ্য দেখলে মনটা ভরে যায়। এত সুন্দর ফল দেখে খুব ভালো লাগে।
বাগান মালিক তরুন কৃষি উদ্যোক্তা তাসরিফ হোসেন বলেন, শুরুর দিকে অনেকেই বলেছিল এই এলাকায় কমলা চাষ সম্ভব না। পরিবার থেকেও আপত্তি ছিল। কিন্তু আমি বিশ্বাস করেছিলাম  ঠিকভাবে পরিচর্যা করলে ফল আসবেই। আজ গাছে গাছে কমলা দেখে সব কষ্ট সার্থক মনে হচ্ছে। আশা করি সামনে আরও বড় পরিসরে কমলা চাষ করতে পারবো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনি বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলা বিভিন্ন ফল চাষের জন্য বেশ সম্ভাবনাময় এলাকা। এখানে ড্রাগন ফলের পাশাপাশি মাল্টা, কমলাসহ নানা ধরনের ফল চাষ হচ্ছে। আমরা নিয়মিত কৃৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এই উপজেলায় বর্তমানে প্রায় ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে মাল্টা এবং ১১ হাজার হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হচ্ছে। এ বছর প্রায় ৬৮০ টন মাল্টা এবং ২০০ টন কমলা উৎপাদনের আশা করছি।
কমলা চাষে তাসরিফের এই সাফল্য শুধু একজন তরুণের গল্প নয়, এটি সম্ভাবনার গল্প। এটি প্রমাণ করে সঠিক পরিকল্পনা আর পরিশ্রম থাকলে দেশের মাটিতেই সম্ভব লাভজনক ফল চাষ। তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য তাসরিফের কমলার বাগান এখন এক অনুপ্রেরণার নাম।