খুলনা | শনিবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ পৌষ ১৪৩২

৫৪৬৮ দিন পর অস্ট্রেলিয়ায় ‘জয়ের’ স্বাদ পেল ইংল্যান্ড

ক্রীড়া প্রতিবেদক |
০২:১০ পি.এম | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫


অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচ জিতেছিল ইংল্যান্ড। এরপর টানা ১৮ ম্যাচে তারা ছিল জয়হীন। অবশেষে সেই তিক্ত যাত্রা শেষ হয়েছে। মেলবোর্নে পেসারদের স্বর্গে চলমান অ্যাশেজের চতুর্থ টেস্ট জিতেছে বেন স্টোকসের দল। তবে পুরো দুই দিনও খেলা হয়নি। দিন শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক এসেছে ফল, যেখানে অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ১৭৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ইংল্যান্ড ৪ উইকেটে জিতেছে।

মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে দুই দল চার ইনিংসে সবমিলিয়ে মাত্র ৮৫২ বল খেলেছে। এর আগে পার্থে অনুষ্ঠিত চলমান অ্যাশেজের প্রথম টেস্ট দুই দিনেই শেষ হয়েছিল। সেখানে দুই দল খেলে ৮৪৭ বল, অর্থাৎ চতুর্থ টেস্টের চেয়ে ৫ বল বেশি। টানা ম্যাচ হারের বৃত্ত ভাঙার পাশাপাশি লম্বা সময় পর অজিদের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ–ও এড়িয়েছে ইংল্যান্ড। এর আগে ২০১৩-১৪ মৌসুমে ৫-০, ২০১৭-১৮ সালে ৪-০ এবং ২০২১-২২ অ্যাশেজে ৪-০ ব্যবধানে ইংলিশদের হারায় স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া।

প্রথম দিন অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড দুই দলেরই প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছিল। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ৪৫.২ ওভার ব্যাট করে ১৫২ রান তোলে। পরবর্তীতে ইংল্যান্ড ১১০ রান তুলতেই ২৯.৫ ওভারে প্রথম ইনিংস শেষ হয়। ফলে গতকাল শেষ বিকেলে দ্বিতীয় ইনিংসের এক ওভার ব্যাট করেছে স্বাগতিকরা। দিন শেষে তাদের লিড ছিল ৪৬। আজ ৮৬ রান করতেই ১০ উইকেট হারায় স্টিভ স্মিথের দল। স্বাগতিকদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেছেন ট্রাভিস হেড। তিনি ৬৭ বলের ইনিংসটি সাজিয়েছেন ৪টি চারের সাহায্যে।

এ ছাড়া অ্যাশেজে স্বদেশি কিংবদন্তিকে অ্যালান বোর্ডারকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে স্মিথ শেষ পর্যন্ত ২৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। তার বর্তমান রান ৩৫৫৩, ৫ রান কম ছিল চার নম্বরে নেমে যাওয়া বোর্ডারের। ক্যামেরন গ্রিনের ব্যাটে এসেছে ১৯ রান। সবমিলিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার তিন ব্যাটারই কেবল দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পেরেছেন। ১৩২ রানে তাদের ইনিংস থেমেছে ৩৪.৩ ওভারে। ইংল্যান্ডের পেসার গাস অ্যাটকিনসন চোটের কারণে এই ইনিংসে ৫ ওভারের বেশি করতে পারেননি। তবে এরই মাঝে নিয়েছেন ১ উইকেট। এ ছাড়া বাকি তিন পেসারই কঠিন পরীক্ষায় ফেলেন অজিদের। ব্রাইডন কার্স সর্বোচ্চ ৪, বেন স্টোকস ৩ এবং জশ টাং ২ উইকেট শিকার করেছেন।

১৭৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে যথারীতি আগ্রাসী শুরু করে ইংলিশরা। বেন ডাকেটের (২৬ বলে ৩৪) বিদায়ে জ্যাক ক্রাউলির সঙ্গে উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ৫১ রানে। নাটকীয়ভাবে সফরকারীরা ওয়ানডাউনে টেলএন্ডার ব্রাইডন কার্সকে নামায়। যদিও তিনি (৬) বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। এরপর জ্যাকব বেথেলকে সঙ্গে নিয়ে ৪৭ রানের জুটি গড়েন ক্রাউলি। ডানহাতি এই ওপেনার ৪৮ বলে ৩৭ রানে ফিরলে সেই জুটি ভাঙে। এরপর বেথেল ও হ্যারি ব্রুকের সঙ্গে জো রুটের ছোট দুটি জুটি গন্তব্যের কাছে পৌঁছে দেয় ইংলিশদের।

লক্ষ্য নাগাল দূরত্বে মনে হলেও রুট (১৫), বেথেল (৪০) ও বেন স্টোকসরা (২) দ্রুততম সময়ে আউট হয়ে তাদের আতঙ্ক বাড়িয়েছেন। ব্রুক অপরাজিত ছিলেন ১৮ রানে। টেস্টে দ্রুততম ৩০০০ রানের মাইলফলক পূর্ণ করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। এই রেকর্ড গড়তে ব্রুক ৩৪৬৮ বল খেলেছেন। এর আগে সর্বনিম্ন ৩৪৭৪ বলে তিন হাজারি ক্লাবে প্রবেশ করেন বেন ডাকেট। মেলবোর্ন টেস্টের মধ্য দিয়ে আগের তিন ম্যাচ হেরে সিরিজ হাতছাড়া হওয়ার পর জয়ের স্বাদ পেল ইংল্যান্ড। অজিদের পক্ষে ২টি করে উইকেট শিকার করেছেন মিচেল স্টার্ক, জাই রিচার্ডসন ও স্কট বোল্যান্ড।

এখন পর্যন্ত বক্সিং ডে টেস্টে মাত্র তৃতীয়বার হেরেছে অস্ট্রেলিয়া। এমন টেস্টে ২০১৮ ও ২০২০ সালে তাদের দু’বার তাদের হারিয়েছিল ভারত। এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য তাড়ায় জয়ের পথে ৫.৫ গড়ে রান তুলেছে ইংল্যান্ড। যা অ্যাশেজে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। পার্থে ইংলিশদের লক্ষ্য তাড়ায় ৭.২৩ রানরেটে ব্যাট করে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। এ ছাড়া দুই দল মিলে ৫৭২ রান করেছে এই টেস্টে, যা কোনো ব্যাটারের হাফসেঞ্চুরি ছাড়া টেস্টে তৃতীয় সর্বোচ্চ অ্যাগ্রিগেট রান। এর আগে ১৯৮১ সালে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড মোট ৭৮৭ এবং ২০১৫ সালে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা মোট ৬৫২ রান করেছিল কারও হাফসেঞ্চুরি ছাড়াই।