খুলনা | রবিবার | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ পৌষ ১৪৩২

স্থানীয় দু’গ্র“প একাট্টা, ফিরোজ স্বতন্ত্র প্রার্থী, হামিদের সিদ্ধান্ত পরে

ঝিনাইদহ-৪ আসনে মনোনয়ন নিয়ে অস্বস্তি রাশেদ খানকে প্রার্থী ঘোষণায় ক্ষুব্ধ বিএনপি

হাবিব ওসমান কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ |
১১:৫৮ পি.এম | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫


ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে তীব্র অস্বস্তি ও বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদের সদ্য পদত্যাগ করা সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানকে বিএনপি’র প্রার্থী ঘোষণা করায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন স্থানীয় বিএনপি’র একাধিক গ্র“পের নেতাকর্মীরা।
শনিবার সকালে রাশেদ খান নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব বরাবর ভোটার স্থানান্তরের আবেদন করেন। এর মাধ্যমে তিনি ঝিনাইদহ সদর পৌরসভা থেকে নিজেকে কালীগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের স্থায়ী ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেন। এ সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র কালীগঞ্জ পৌরসভা থেকে সংগ্রহ করেছেন বলেও জানা গেছে।
রাশেদ খান ঝিনাইদহ পৌরসভার মুরারিদহ গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলার আংশিক) আসন থেকে বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন। ইতোমধ্যে তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।এ বিষয়ে রাশেদ খান বলেন, আমি যেহেতু কালীগঞ্জ থেকেই নির্বাচন করতে যাচ্ছি, তাই এখানকার ভোটার হওয়াকে দায়িত্ববোধের অংশ মনে করছি। কালীগঞ্জবাসীকে সঙ্গে নিয়ে একটি উন্নত ও আধুনিক কালীগঞ্জ গড়ে তুলতে চাই।
গত বুধবার গুলশানে বিএনপি’র চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আনুষ্ঠানিকভাবে রাশেদ খানের মনোনয়ন ঘোষণা দেন। এরপর থেকেই স্থানীয় বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। গত শুক্রবার কালীগঞ্জ থানা রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে উপজেলা বিএনপি’র তিনটি গ্র“পের মধ্যে দু’টি গ্র“প একত্রিত হয়ে সভা-সমাবেশ করে। তারা রাশেদ খানের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবি জানান। এসময় তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন রাশেদ খানকে এই আসনে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেক নেতাকর্মীকে কাফনের কাপড় পরে অংশ নিতে দেখা যায়।
বিক্ষোভকারীদের দাবি এই আসনে বিএনপি’র দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতা সাইফুল ইসলাম ফিরোজ অথবা মুর্শিদা জামানকে মনোনয়ন দিতে হবে। জেলা বিএনপি’র উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুর্শিদা জামান বেল্টু বলেন, আমরা কোনো বহিরাগতকে এই আসনে চাই না। দীর্ঘদিন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আমরা রাজপথে লড়াই করেছি। ত্যাগী নেতাদের হাতেই ধানের শীষ থাকা উচিত।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ বলেন রাশেদ খানকে ঝিনাইদহ-২ আসনে নির্বাচন করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু অর্থের বিনিময়ে ষড়যন্ত্র করে একজন বহিরাগতকে এখানে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কালীগঞ্জবাসী যদি বলে, নির্বাচন করবো আমি করবো। না বললে করবো না। 
হামিদের পাল্টা অবস্থান : শনিবার বিকেলে মোবারক আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদের অনুসারীদের আয়োজনে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় হামিদ বলেন আমি ঝিনাইদহ-৪ আসনের মানুষের রাজনীতি করি। তারাই আমাকে সিদ্ধান্ত দেবে। অন্য গ্র“পগুলো আলোচনা না করেই আমাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছে, এমনকি বেঈমান বলেছে। হ্যাঁ আমি বেইমানি করেছিলাম, ওয়ান ইলেভেন এর সময়। ওই সময় আমি তাদের কথামতো সংস্কার পন্থিতে যাইনি। জিয়া পরিবারের পাশে ছিলাম। আর জিয়া পরিবারের পাশে থাকা যদি বেঈমানি হয় তাহলে সেই বেঈমানি আমি হাজারবার করবো। রাশেদ খানের মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন এখনও সময় আছে। আমরা দলীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো।
ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, হামিদুল ইসলাম হামিদ এবং মুর্শিদা জামান পপি। তারা দীর্ঘদিন ধরে আলাদা আলাদা গ্র“পে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। এদিকে শনিবার একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সাইফুল ইসলাম ফিরোজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন।