খুলনা | রবিবার | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ পৌষ ১৪৩২

গুলশানে ফিরোজার ঠিকানায় ভোটার হলেন তারেক রহমান ও জাইমা রহমান

খবর প্রতিবেদন |
০১:৪৩ এ.এম | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫


দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাস জীবন ও রাজনৈতিক নির্বাসন শেষে দেশে ফিরেই ভোটার তালিকায় নিজের নাম তোলা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সারলেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শনিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন তিনি। তিনি ঢাকা-১৭ আসনের গুলশান এলাকার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হলেন। একই ঠিকানায় ভোটার হয়েছেন তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান।
ইসি সূত্র জানায়, ভোটার নিবন্ধনে তারেক রহমান ও জাইমা রহমানের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে উলে­খ করা হয়েছে বাসা নম্বর এন ই-ডি৩/বি, ওয়ার্ড নম্বর ১৯, গুলশান অ্যাভিনিউ, পোস্ট কোড ১২১২। আর বর্তমান ঠিকানা হিসেবে দেখানো হয়েছে ধানমণ্ডি ১৫ নম্বরে ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার একটি বাসা।
শুক্রবার অনলাইন আবেদনের পর শনিবার দুপুরে তিনি সশরীরে নির্বাচন ভবনে উপস্থিত হন। সেখানে এনআইডি সেবাকক্ষে তার ছবি তোলা, দশ আঙুলের ছাপ, চোখের আইরিশের ছাপ এবং স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়। এ সময় ইসি সচিব আখতার আহমেদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ডাঃ জোবায়দা রহমান ও জাইমা রহমান ইটিআই ভবনে পৌঁছান। এরপর ১২টা ২৬ মিনিটে তারা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। সেখানে ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাইসহ ভোটার নিবন্ধনের সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। নিবন্ধন শেষে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে জাইমা রহমান নির্বাচন কমিশন প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, তারেক রহমান ও জাইমা রহমান ভোটার হয়েছেন ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসনের আওতাধীন গুলশান এলাকার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। ভোটার তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে গুলশান এলাকার ভোটার হিসেবে তাদের অবস্থান আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত হলো।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান রাজধানীর গুলশানে তার মা ও বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’র ঠিকানা ব্যবহার করে ভোটার হওয়ার আবেদন করেছেন। এর আগে তার জন্মস্থান বগুড়ায় ভোটার হওয়ার বিষয়ে আলোচনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ঢাকা থেকেই তিনি নিবন্ধিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
ইসি সূত্র আরও জানায়, তারেক রহমানের স্ত্রী ডাঃ জুবাইদা রহমান এর আগে চলতি বছরের জুন মাসের দিকে গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসার ঠিকানায় ভোটার হন। ওই বাসভবনের ঠিকানা হচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, গুলশান-২, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড, ঢাকা-১৭ আসন।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাই-বাছাই ও বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরই তাদের ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভোটার তালিকা আইনের আওতায় এতে কোনো ধরনের আইনগত জটিলতা ছিল না।
এনআইডি মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর সাংবাদিকদের বলেন, তারেক রহমান অনলাইনে ফরম পূরণ করেছেন। এখন আমাদের কাছে এসে শুধু আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ স্ক্যান দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করেন।
এনআইডি ডিজি বলেন, এরপর সফটওয়্যার স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার তথ্য সার্ভারে অনুসন্ধান করে দেখবে সেটি কারও সঙ্গে মিলছে কিনা। মিল না হলে ৫ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এনআইডি নম্বর জেনারেট হবে। এটি আমাদের কারও হাতে নেই। এক্ষেত্রে তিনি আমাদের কাছ থেকেও এনআইডি বা স্মার্ট কার্ড নিতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, আবার তারেক রহমানের মোবাইলে এসএমএস যাবে, সেখান থেকেও ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। শনিবার দুপুরেই তার নিবন্ধন সম্পন্ন করার কথা রয়েছে।
ভোটার নিবন্ধনের (রেজিস্ট্রেশন) আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন শেষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ত্যাগ করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শনিবার দুপুর ১টার পর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের ইটিআই (ইলেকশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট) ভবনে প্রবেশ করেন তিনি। সেখানে প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া শেষে ১টা ২০ মিনিটের দিকে তিনি ইসি ত্যাগ করেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ইটিআই ভবনে গিয়ে তারেক রহমান ভোটার নিবন্ধনের প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ গ্রহণ ও তথ্য যাচাইসহ প্রচলিত নিয়মে তার নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
দেখা গেছে, নিবন্ধন শেষে দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে তারেক রহমানের গাড়িবহর নির্বাচন কমিশন এলাকা ত্যাগ করে। এ সময় আগারগাঁও এলাকায় বিএনপি’র বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। পুরো এলাকা কার্যত নেতা-কর্মীদের ভিড়ে মুখর হয়ে ওঠে।
এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়। তারা তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে দলীয় স্লোগান দেন। গাড়িবহর বের হওয়ার সময় তারেক রহমান হাত নেড়ে নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। এতে উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ¡াস আরও বেড়ে যায়।
তফসিল ঘোষণার পর ভোটার হওয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহল থাকলেও নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানিয়েছেন, এতে আইনি কোনো বাধা নেই। তিনি বলেন, ‘ইসি চাইলে যে কোনো সময় যে কোনো যোগ্য ব্যক্তিকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।’
এর আগেও জরুরি প্রয়োজনে তফসিলের পর ভোটার হওয়ার নজির রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে শেখ রেহানা, ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের নাম উলে­খ করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
দেখা গেছে, এ সময় নির্বাচন কমিশন ভবন ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ইসি প্রাঙ্গণে পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন থাকতে দেখা যায়। গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে বসানো হয় ব্যারিকেড এবং আশপাশের এলাকায় বাড়তি নজরদারি রাখা হয়।
২০০৮ সালে দেশে যখন ছবিসহ প্রথম ভোটার তালিকা  তৈরি হয়, তখন চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করছিলেন তারেক রহমান। বিগত ১৬ বছরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে তিনি দেশে ফিরতে না পারায় ভোটার তালিকায় তার নাম ওঠেনি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশে ফিরেই তিনি এই নাগরিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেন।
যদিও তিনি ঢাকার ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন, তবে আগামী ১২ ফেব্র“য়ারি অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি তার পৈতৃক এলাকা বগুড়া-৬ (সদর) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তার পক্ষে স্থানীয় নেতাকর্মীরা এরই মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বলে দলীয় সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে।
উলে­খ্য, দীর্ঘ ১৭ বছর তিন মাস নির্বাসন শেষে গত ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফেরেন তারেক রহমান। দেশে ফেরার পর থেকেই তিনি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছেন।