খুলনা | সোমবার | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৪ পৌষ ১৪৩২

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের আমীর শফিকুর রহমান

‘নির্বাচন সুষ্ঠু করতে জামায়াত-এলডিপি, এনসিপিসহ ১০ দলীয় জোট অঙ্গীকারবদ্ধ’

খবর প্রতিবেদন |
০১:০৬ এ.এম | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫


জামায়াত-এলডিপি, এনসিপিসহ ১০ দলীয় জোট ইস্পাত কঠিন ঐক্যের মাধ্যমে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে অঙ্গীকারবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডাঃ শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি, সেই পরিবেশ নির্বাচন কমিশনকেই তৈরি করতে হবে। রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে সংবাদ সম্মেলনে জোট ঘোষণার সময় এসব কথা বলেন জামায়াত আমির।
ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, জাতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে, জাতীয় জীবনের একটি কঠিন বাঁকে বাংলাদেশ যখন এসে দাঁড়িয়েছে, সেই সময় প্রিয় বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য; একটি শোষণ, বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য এবং ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তির ওপর সমাজকে দাঁড় করানোর অঙ্গীকার নিয়ে এতদিন ধরে আটটি দল একসঙ্গে আমরা কাজ করে আসছিলাম।
তিনি বলেন, এই দলগুলোর সকলেই এখানে উপস্থিত আছেন, আজ (রোববার) আরও দু’টি দল আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে। অলি আহমদ বীর বিক্রমের নেতৃত্বে এলডিপি ও এনসিপি। একটু আগে আমাদের সঙ্গে তাদের বৈঠকটা সমাপ্ত হয়েছে, তারা এই বৈঠকে আসার সময় ও সুযোগ পাননি। তাছাড়াও দলীয় পরিসরে তারা একটা মিটিং করে আজ রাতেই এখানে সম্পৃক্ততার ব্যাপারটা আপনাদের পরিষ্কার জানিয়ে দেবেন। তাদের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সরাসরি কথা বলেছেন আমাদের সবার সঙ্গে, আমরা উপস্থিত ছিলাম এবং তিনি তাদের সিদ্ধান্ত আমাদের অবহিত করেছেন।
জোট গঠন হলেও আসনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, আমরা কীসের ভিত্তিতে একত্রিত হয়েছি? আমাদের লক্ষ্যের কথা আমরা বলেছি। এটা আমাদের একটি মজবুত নির্বাচনী জোট। সারা বাংলাদেশের ৩০০ আসনে আমরা বসে নিজেদের মাঝে আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন আসন আমাদের মধ্যে নির্ধারণ করেছি। যেহেতু দু’টি দল একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে আমাদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে, আরও অনেকগুলো দল আগ্রহী ছিল। ‘কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় এই মুহূর্তে এখানে সম্পৃক্ত করা আমাদের জন্য খুবই দুরূহ হয়ে গেছে। অনেকের আগ্রহ থাকা সত্তে¡ও আমরা সেভাবে তাদেরকে সম্পৃক্ত করতে পারছি না। আমরা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। কিন্তু জাতীয় জীবনে আমরা তাদের সঙ্গে একসাথে কাজ করব এই জাতিকে গড়ার জন্য। আমাদের আসন সমঝোতা অলমোস্ট কমপ্লিট। সামান্য একটু বিষয় যেগুলো রয়েছে, আমরা আশা করছি সেটা মনোনয়ন ফাইল করার পরপরই আমরা আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সুন্দরভাবে সমাধান করতে পারবো।’
সুষ্ঠু ভোটের জন্য জোট কঠিন ভূমিকা রাখবে জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, এখন জাতি একটা দীর্ঘ স্থায়ী মুক্তির দিকে এগোতে চায়, শান্তির দিকে এগোতে চায়, একটা সুশৃঙ্খল জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়। আমাদের যুবসমাজের যে প্রত্যাশা, যেটার জন্য বুক চিতিয়ে তারা লড়াই করেছিল, জীবন দিয়েছিল; তাদের প্রত্যাশা পূরণ এখন আমাদের দায়িত্ব।
তিনি আরও বলেন, আর যারা লড়াই করতে গিয়ে আহত বা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা এবং আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সুস্থতার নিয়ামত দান করুন। এত মানুষের লড়াই, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আজ জাতি যে জায়গায় এসে উপনীত হয়েছে, ঠিক দেড় মাসের চাইতেও কম সময় আমাদের হাতে রয়েছে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের। আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে, গ্রহণযোগ্য করতে, আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।
জামায়াত আমির বলেন, আমরা চাই নির্বাচনের যে তারিখ ঘোষণা হয়েছে তার কোনো হেরফের না হোক, এই তারিখেই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হোক। এ ব্যাপারে আপনাদেরও সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। আমরা আশা করছি, সরকার একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাদের যে করণীয়, নির্বাচন কমিশন এবং সরকার সেই দায়িত্ব পালন করবে। এখনো তাদের অনেক কাজ বাকি রয়ে গিয়েছে।
ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, এখনো সমতল মাঠ তৈরি হয়নি সকলের জন্য। সেই মাঠ তৈরির কাজ হচ্ছে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের। তারা যেকোনো ধরনের লোভ-লালসা, ভয়ভীতি এবং কারো প্রতি কোনো ধরনের আনুকূল্যের ঊর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালন করবেন। এটা সাংবিধানিক ও নৈতিক দায়িত্ব। আমরা এবং জাতি তাদের কাছে এটিই প্রত্যাশা করি, এর যেকোনো ধরনের ব্যতিক্রম এই জাতি মানবে না।
তিনি বলেন, এই ব্যতিক্রমটাই তো আমাদের জীবন থেকে অনেকগুলো বছর কেড়ে নিয়েছে। তিন তিনটা নির্বাচনে এখানে যারা উপস্থিত, আমি বিশ্বাস করি অধিকাংশ আপনারা কোনো ভোটই দিতে পারেন নাই। আমরা তো জীবনে দুই-চারবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি, আপনারা পানই নাই। এভাবে আমাদের ভোটের অধিকার হরণ করে নেওয়া হয়েছিল। আগামীতে আমরা ওই ধরনের কোনো প্রক্রিয়া কেউ করতে গেলে কোনো অবস্থায় বরদাস্ত করব না। আপনাদের ভোটের জন্য, সকলের ভোটের জন্য আমাদের লড়াই হবে। একেবারে ইস্পাত কঠিন এই ঐক্য জাতীয় ঐক্য হবে। আপনাদের সাথে মিলেমিশে, এই জেনারেশনের সাথে মিলেমিশেই আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করতে চাই।
নির্বাচনী জোট নাকি আন্দোলন-সংগ্রামও এই জোটে চলবে এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির বলেন, জোট বলুন আর না বলুন, আমরা কিন্তু জোটের চাইতেও আরও মজবুত, আরও ঐক্যবদ্ধ। এটা নিয়ে আমরা এগোবো। আপনাদের সহযোগিতা আমাদের সাথে থাকবে জাতীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে, মানবতার স্বার্থে, দ্বীনের স্বার্থে।
ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, এটা দেশ গঠনের জোট, এটা নির্বাচনের জোট, এটা রাজনৈতিক জোট, এটা সকল ধরনের ওই জোট বলেন আর সমঝোতা বলেন যাই বলেন, এটা সবগুলা পারপাস কাভার করার জন্য। দলীয় কর্মসূচি যার যার অনেকগুলা থাকবে, তারপরে ন্যাশনাল ইস্যুতে যেখানেই প্রয়োজন আমরা একসাথে করব।
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-এর চেয়ারম্যান মুফতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অবঃ) ডাঃ অলি আহমদ বীর বিক্রম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক, খেলাফত মজলিস মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল মাজেদ, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চাঁদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, জাগপা মুখপাত্র ও সহ সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।