খুলনা | রবিবার | ১৩ জুলাই ২০২৫ | ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

মানুষের খাদ্য তালিকায় ডিম অপরিহার্য : নীতিমালা জরুরি

|
১২:২৩ এ.এম | ১১ অক্টোবর ২০২১


মানুষের খাদ্য তালিকায় ডিম অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। আমিষের চাহিদা পূরণে ডিমের কোন তুলনা হয় না। এ কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বে ডিমের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে উৎপাদন। ডিম উৎপাদনে এখন স্বাবলম্বী বাংলাদেশ। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী একজন সুস্থ মানুষের বছরে গড়ে ১০৪টি করে ডিম খাওয়া উচিত। আমাদের দেশে এখন মাথাপিছু ডিমের গড় প্রাপ্যতা ১২১টি। আমাদের ডিম প্রাপ্তির উৎস মূলত খামারের মুরগি। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী খামারের মুরগি থেকে প্রতিদিন ডিম আসে সাড়ে তিন থেকে চার কোটি পিস। হাঁস এবং কোয়েল পাখি থেকে ডিম আসে এক কোটির বেশি। সব মিলিয়ে আমাদের ডিমের উৎপাদন এখন সাড়ে পাঁচ কোটি পিস। ডিম উৎপাদনে উৎসাহজনক পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার নানা আয়োজনে দেশে পালিত হয়েছে ‘বিশ্ব ডিম দিবস’। দিবসটির এবারের শ্লোগান ছিল ‘প্রতিদিন ডিম খাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই।’
একটা সময় ছিল যখন ডিমের উৎস ছিল মূলত গ্রামের গৃহপালিত মুরগি। এসব মুরগি বছরে ডিম দিত ৫০ থেকে ৬০টি। এর অধিকাংশই আবার বাচ্চা ফোটানোর কাজে ব্যবহৃত হতো। এখন খামারের উন্নত জাতের প্রতিটি মুরগি থেকে ডিম পাওয়া যায় বছরে ২৫০ থেকে ৩০০টি। দেশে ডিম এবং মুরগির উৎপাদন বাড়ানোয় অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেছে প্রান্তিক চাষি। সরকারের উৎসাহ প্রদান, সহজলভ্য ব্যাংক ঋণ এবং কর মওকুফের মতো উদ্যোগে প্রান্তিক কৃষক মুরগি পালনে উৎসাহিত হয়েছে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে দেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ৪৬৯ কোটি পিস। গত অর্থ বছর উৎপাদন হয়েছে ২০৫৭ কোটি ৬৪ লাখ পিস। এক যুগে উৎপাদন বেড়েছে ৫ গুণ। প্রান্তিক চাষিদের হাত ধরে ডিম এবং মুরগির উৎপাদন বৃদ্ধি শুরু হলেও নানা সঙ্কটে এখন তারা এই ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। বর্তমানে ডিম এবং মুরগির উৎপাদন হচ্ছে বড় বড় ব্যবসায়ীর খামারে। বাচ্চা এবং মুরগির খাবারের উৎপাদন খামারিরা নিজেরাই করছেন। আধুনিক প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয় খামারে লেবার খরচ কম, মুরগি রোগে আক্রান্তও হচ্ছে কম। উৎপাদনও হচ্ছে ভাল। স্বাভাবিকভাবেই বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছেন না প্রান্তিক খামারি।
বাংলাদেশ ডিম উৎপাদনকারী সমিতির হিসেব মতে, নানা সঙ্কটে বসে যাচ্ছেন প্রান্তিক খামারি। এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুতের বাড়তি দাম, মুরগির খাবার ও বাচ্চার উচ্চমূল্য এবং ডিমের বাজারে অস্থিরতা। কোন কোন সময় বার্ড ফ্লু বা এ ধরনের আরও কিছু রোগে মরে যায় খামারের সব মুরগি। বর্তমান পরিস্থিতিতে হাতে গোনা কিছু খামারি টিকে রয়েছেন অনেকটা সংগ্রাম করে। বিদ্যমান সমস্যার সমাধান না করলে তাদের টিকে থাকা কষ্টসাধ্য হবে। উন্নত বিশ্বে সকাল-বিকেল মুরগির খাবার, মুরগি কিংবা ডিমের দাম ওঠানামা করে না। গত এক বছরে মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে চার দফায় বস্তা প্রতি ৩৪০ টাকা। স্বাভাবিকভাবেই দাম বেড়েছে ডিম এবং মুরগির।
ডিমের উৎপাদন আরও বাড়াতে মুরগির বাচ্চা, খাবার, মুরগি এবং ডিমের মূল্য স্থিতিশীল রাখার বিকল্প নেই। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি সমন্বিত নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে খামারের জন্য চালু করতে হবে বীমা। বিনিয়োগ করে মুরগি মারা গেলে পথে বসে যায় খামারি। প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত বীমা চালু থাকলে অনেক কৃষক এই পরিস্থিতি থেকে বেঁচে যেতে পারেন।